November 14, 2024, 6:38 am
আলিফ হোসেন,তানোরঃ
রাজশাহীর তানোরের সরনজাই ডিগ্রী কলেজ অধ্যক্ষ ইমারত আলীর বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।তিনি নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে এসব টাকা আত্মসাৎ করেছেন।এঘটনায় গত ১০ নভেম্বর রোববার অভিভাবকগণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে,
আমরা সরনজাই ইউনিয়নের (ইউপি) সাধারণ জনগণ ও অভিভাবকগণ জনস্বার্থে আপনার কাছে অভিযোগ করিতেছি যে, বিগত ১৯৯৫ সালে
এলাকার সাধারণ জনগণের শিক্ষা উন্নয়নের জন্য সরনজাই ডিগ্রী কলেজ স্থাপন করা হয়। স্থাপনের পর থেকে অযোগ্য এই দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ ইমারত আলীকে নিয়োগ দেয়। কলেজটি স্থাপনের পর থেকে দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ কলেজটিতে নিজস্ব পকেট কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ বানিজ্য করে প্রায় এগার কোটি পঞ্চাশ লাখ টাকা আত্মসাৎ করিয়াছে। এরপর আবারও একটি পকেট কমিটি গত ২০১৯ সালের ২৬ জুন গঠন করে নানান ধরনের দূর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লোপাট করিয়া আসিতেছে। গত ৫ আগষ্ট পূর্বের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত তিন বারের অবৈধ সভাপতির দায়িত্বকালে দূর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ ইমারত আলী তার সঙ্গে যোগসাজস করে তিনটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তী প্রকাশ করে যথাক্রমে উপাধ্যক্ষ, লাইব্রেরিয়ান ও ল্যাব সহকারী। এবং দ্রুত নিয়োগ বোর্ড গঠন করে গভর্নিং বডির অন্যান্য সদস্যদের অগোচরে ৩টি পদে নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ড গঠন করে গত ২০২০ সালের ১৫ মার্চ রফিকুল ইসলামকে উপাধ্যাক্ষ পদে নিয়োগ দিয়ে ২৩ লাখ টাকা, মোসাঃ ফেরদৌসী খাতুনকে লাইব্রেরিয়ান পদে নিয়োগ দিয়ে ১৫ লাখ টাকা ও আরিফ হোসেনকে ল্যাব সহকারী পদে নিয়োগ দিয়ে ১২ লাখ টাকা ডোনেশনের নামে ঘুষ নিয়েছেন অধ্যক্ষ ইমারত আলী।
উল্লেখ্য বিগত ২০২০ সালের ১৫ মার্চ
ওই নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের নির্বাচিত তিন জন প্রার্থীর চুড়ান্ত অনুমোদন কমিটির সভায় সদস্যগণ নিয়োগে ডোনেশনের ৫০ লাখ টাকার হিসেবে চেয়ে না পেয়ে আপত্তি দিয়েছিল। এছাড়াও সম্প্রতি ৩ জন ল্যাব সহকারী প্রতিজন২০ লাখ টাকা করে সর্বমোট = ৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রার্থীরা হলেন ল্যাব সহকারী (পদার্থ), ২ (রসায়ন) ও (আইসিটি)। এটি একটি বিতর্কিত নিয়োগ যা মাননীয় আদালতে বিচারাধীন পূর্বক প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ। এছাড়াও বিগত ১৯৯৫ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কলেজের ফান্ডে কোন টাকা জমা দেন নাই। কলেজের ডিগ্রী পর্যায়ে ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রভাষক, অফিস সহকারীসহ ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারিসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ হয়েছে প্রায় ৫৭ জন। উক্ত পদে শিক্ষক ও কর্মচারি নিয়োগ দিয়ে অধ্যক্ষ ইমারত আলী কলেজের প্রায় ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।তিনি
আত্মসাৎ করা টাকা নিজের নামে ৭-৮টি ব্যাংক হিসাবে জমা করে ১৫ বিঘা ধানি জমি ক্রয় এবং রাজশাহীর নওদাপাড়া এলাকায় ৪টি প্লট ক্রয় করেছেন যার বাজার মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। সদ্য অধ্যক্ষ ইমারত আলী নিয়োগের টাকা দিয়ে গত ২০২২ সালের ২০ মে ৫০ লাখ টাকা দিয়ে একটি প্লট নওদাপাড়া এলাকায় নিজ নামে ও স্ত্রীর নামে ক্রয় করেছেন বলে প্রমান আছে। এছাড়াও কলেজের বিভিন্ন ফান্ডের আয় হতো। যার মধ্যে আম বাগান টেন্ডার, পরীক্ষার ফরম পুরুণে অতিরিক্ত অর্থ, টিউশন ফি ইত্যেদি। প্রতি বছরে ৫ লাখ টাকা করে আত্মসাৎ করেছেন। দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ ইমারত আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে করে জরুরীভাবে বরখাস্ত করা হোক।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে,অধ্যক্ষ
ইমারত আলী ১৯৯৫ সাল হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কলেজের প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যার মধ্যে ৫৭ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কলেজের আম বাগান, পুকুর, ধানী জমি (প্রতি বছর ইজারা) ২৮ বছরে প্রায় এক কোটি টাকা। কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখার মার্কসিট, প্রসংশাপত্র বিতরণ এবং প্রতি বছরের ফরম পূরন বাবদ আয়কৃত ও মূলসনদ পত্র বিতরণের টাকা ২৮ বছরে প্রায় ৫০ প্রতারনা মূলক ভাবে আত্মসাৎ করেছেন। ৪) কলেজের ছাত্র/ছাত্রী নামে সরকারী টিউশান ফি বাবদ এবং (শিক্ষকদের) ২৮ বছরে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। টিউশন ফি বাবদ এক কোটি ১০ টাকা। কলেজের নামে ২৮ বছরে সরকারী দান,অনুদানসহ সরকারী প্রকল্পের ১০টি কম্পিউটার সরঞ্জাম চুরি করে বিক্রির প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ টাকা।কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে বিভিন্ন অজুহাতে জোরপূর্বক ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ১৯৯৫ সাল হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত
প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ টাকা আদায়।
কলেজের বিভিন্ন ফার্নিচার, আসবাব পত্র যেমন-বেঞ্জ টুল চেয়ার টেবিল, আলমারি ইত্যাদি ক্রয়ের ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা।কলেজের বিভিন্ন প্রজাতির মোট ১৫০টি তাজা গাছ চুরি করে বিক্রির প্রায় দেড় কোটি টাকা। কলেজের নামে ২ বিঘা ধানী জমির উপর পৃথক বাগান ও ধান চাষের টেন্ডার বাবদ বাৎসরিক লীজ প্রদান করে যাহার মূল্য ৬০ হাজার টাকা। কলেজের নামে সোনালী ব্যাংক লিঃ তানোর শাখা হতে সংরক্ষিত তহবিল ৩ লাখ এবং এফডিআর ৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিনহাজুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেছে,তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।এবিষয় একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মুঠোফোনে কল গ্রহণ করেননি, এমনকি খুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া দেননি অধ্যক্ষ ইমারত আলী।#