মোঃ কাউছার উদ্দীন শরীফ, ঈদগাঁওঃ
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের মেহেরঘোনা রেঞ্জের উদ্যোগে আয়োজিত মানুষ- হাতি সংঘাত করণীয় শীর্ষক জনসচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার ২ নভেম্বর সকালে ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও ইউনিয়নের মেহেরঘোনা এলাকায় রেঞ্জের সদর বিটের মাঠে বন্যহাতি রক্ষাকল্পে জনসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বন্য হাতি, বন্যপ্রাণী, বনজদ্রব্য, বনভূমি রক্ষার্থে বন বিভাগ সজাগ রয়েছেন। হাতীর নিরাপদ আবাস্থল, তাদের খাদ্য নিরাপত্তা, পশু শিকারীর হাত থেকে হাতী রক্ষা, হাতীর আক্রমণ থেকে জীবন রক্ষা, ফসলের ক্ষতি, বসতবাড়ীর সুরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়। জনসচেতনতামূলক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক, সদর (এসিএফ) প্রান্তোষ চন্দ্র রায় ।
মেহেরঘোনা বিট অফিসার কে এম ফিরুজ কবির’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত জনসচেতনতামূলক সভায় বক্তারা বলেন, মানুষ হাতি সংঘাত নিরসন এবং বন্য প্রাণী সংরক্ষণে এলাকাবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বানে করেন।
বক্তারা আরও বলেন, বনাঞ্চল উজাড় হওয়ায় বুনো হাতির খাবারের উৎস দিন দিন কমছে। এ ছাড়া বনে মানুষের বাস ও আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় হাতির নিজস্ব বিচরণক্ষেত্র কমে গেছে। এ জন্য হাতি খাবার খুঁজতে খুঁজতে পাহাড় ছেড়ে লোকালয়ে নেমে এসে মানুষের বাধার মুখে পড়ে। তারা বাধা পেয়েই তারা ফসলের মাঠ, মানুষের বসতঘরে তাণ্ডব চালায়। একপর্যায়ে হাতির দল বুনো আচরণ শুরু করে। এই প্রেক্ষাপটে টিকে থাকার লড়াইয়ে নিজেদের জান-মাল রক্ষায় বুনো হাতির ওপর হিংস্র হয়ে ওঠে মানুষ। ফলে মানুষের সাথে হাতির দ্বন্দ¦ লেগেই আছে। এজন্য হাতির হাত থেকে নিজেদের ও হাতিকেও রক্ষার জন্যে সচেতনতা জরুরী। যাতে লোকালয়ে এলেও তাদের ওপর কেউ কোনো অত্যাচার না করে। হাতি যাতে নিরাপদে গভীর জঙ্গলে ফিরে যেতে পারে। এতে হাতিও থাকবে, মানুষও থাকবে।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক সদর (এসিএফ) প্রান্তোষ চন্দ্র রায় বলেন, বন্যপ্রাণী ও বন্যহাতি সংরক্ষণ আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। নির্বিচারে বন্য প্রাণী হত্যা, ধরা এবং শিকার করা যাবে না। বন্য হাতিদের আঘাত করে নিধন করলে প্রকৃতির ভারসাম্যে বিরাট প্রভাব ফেলবে। সামাজিকভাবে সচেতন হয়ে আমাদের মানুষ ও হাতি সংঘাত নিরসন করে বন্য প্রাণী ও হাতিদের বাঁচাতে এগিয়ে এসে বন সম্পদ রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বন্যহাতি লোকালয়ে চলে আসলে তিনি বন বিভাগকে অবগত করার অনুরোধ জানান। তবুও যেন হাতিকে আক্রমণ করা না হয়। হাতি রক্ষায় আমরা বনের ভেতর সুফল প্রকল্পের মাধ্যমে দেশীয় জাতের বৃক্ষ রোপণ করছি। যাতে খাবারের অভাবে হাতি লোকালয়ে না আসে। যাতে হাতি বনের মধ্যে নিরাপদে সেখানে বিচরণ করতে পারে। ইদানীং বুনো হাতির চলাচলের গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। আগে বুনো হাতি একত্রে দল বেঁধে চলাফেরা করত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, একটি-দুটি হাতি দলছুট হয়ে চলাফেরা করছে। এতে ঝুঁকি বাড়ছে। ফলে বন্য প্রাণীর আবাসস্থল সেই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। মানুষ ও হাতির সংঘাত নিরসন এবং বনজসম্পদ, বন্যপ্রাণী রক্ষা এবং বনভূমি জবরদখলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তা ছাড়া সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান তিনি।

Leave a Reply