গাইবান্ধায় ল্যাব সহকারী সবুজ অঢেল সম্পদের মালিক হওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন

আনিসুর রহমান আগুন।।
সুন্দরগঞ্জ গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ
গাইবান্ধায় কলেজের ল্যাব সহকারী মিজানুর রহমান সবুজ ইদানীং এলাকায় আলোচনা সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে তার অঢেল সম্পদের মালিক হওয়া নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। সম্পদশালী সবুজ বর্তমানে গাইবান্ধা টেকনিক্যাল স্কুল এণ্ড কলেজের ল্যাব সহকারী হিসেবে চাকুরি করছেন। এর আগে রংপুর পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটে সবুজ কর্মরত ছিলেন।

তার সম্পত্তির পরিমাণ সাধারণ মানুষের কাছে অবাক হওয়ার বিষয় হলেও তা বাস্তব ও সত্য। গাইবান্ধা শহরের থানা পাড়া মহল্লায় সবুজের দৃষ্টিনন্দন একটি পাঁচতলা ভবন রয়েছে, যার বাজার মূল্য কমপক্ষে আনুমানিক ৫ কোটি টাকা হবে। ভবনটির ডিজাইন এবং স্থাপত্যশৈলী সবার নজর কেড়েছে। কেবল শহরের মধ্যেই নয়, গ্রামের বাড়িতেও তার একটি পাকা বাড়ি রয়েছে, এ থেকে আরও সম্পত্তি থাকার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

আশেপাশের লোকজন জানান, কয়েক বছর আগেও সবুজ একজন সাধারণ ডেন্টাল কেয়ারের সত্ত্বাধিকারী ছিলেন। তারপর ইলেকট্রনিক্স ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হন। কিন্তু বিগত চার বছরে হঠাৎ করে তিনি এত বিশাল সম্পদের মালিক বনে যান। অনেকের জন্য তা আশ্চর্যের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ চাকরিজীবী হিসেবে সবুজ ১৬তম গ্রেডের একজন কর্মচারী, সে অনুযায়ী তার মাসিক বেতন স্কেল- ৯৩০০ টাকা হয়। যে কারণে তার পক্ষে এত বিপুল সম্পদ অর্জন করা সম্ভব হয় কীভাবে! সে প্রশ্নই আজকাল ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে।

ডিভাইস সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ:
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় একটি ডিভাইস সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত ছিলেন সবুজ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, সরকারি চাকুরিতে পরীক্ষার্থীদের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষায় পাস করতে সহায়তা করা এবং এর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া। এই সিন্ডিকেটের সাথে তার স্ত্রী আঞ্জুয়ারা খাতুনও জড়িত আছেন বলে জানা গেছে। তিনি একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। এই ডিভাইস সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই মূলত তারা ২ জনেই শহরে সংযুক্তি ঘটিয়েছেন বলে সন্দেহের ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।

তবে মিজানুর রহমান সবুজ তার বিশাল সম্পদের বৈধতা নিয়ে যে কোনো প্রকার অবৈধ উপার্জনের কথা অস্বীকার করেছেন। তার দাবী তিনি এবং তার স্ত্রীর নামে ব্যাংক থেকে লোন করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। পাশাপাশি জমি বিক্রি করেও কিছু অর্থ সংগ্রহের কথা জানান। আরও দাবি করে বলেন, যে তার ব্যবসাও রয়েছে এবং তার সবকিছুই বৈধ আয়। কিন্তু সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে ডিভাইস সিন্ডিকেটের বিষয়টিও মানতে নারাজ সবুজ।

গাইবান্ধা টেকনিক্যাল স্কুল এণ্ড কলেজের অধ্যক্ষ ল্যাব সহকারী পদে নিযুক্ত সবুজের বিপুল সম্পদের কথা জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেন। অধ্যক্ষ বলেন, সবুজ আমাদের এখানে চাকরি করেন, সে ল্যাব সহকারি। সবুজের বেতন স্কেল মাত্র ৯৩০০ টাকা এবং তার এসব সম্পদের বিষয়ে আগে থেকে কোনো ধারণা ছিল না। তবে ভবিষ্যতে তার ওপর নজর রাখা হবে এবং প্রয়োজন হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হবে।

গাইবান্ধা জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক শরিফুল ইসলাম জানান, গাইবান্ধা শহরের থানাপাড়ায় মিজানুর রহমান সবুজের বাড়ি ৩ তলা নির্মাণের জন্য পৌরসভা থেকে অনুমোদন নেওয়া হলেও তিনি পৌরসভা আইনের তোয়াক্কা না করে প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করেছেন। যা বেআইনি এবং গুরুতর অপরাধ। ওই বেআইনি ভবন নির্মাণের বিষয়ে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সবুজের এই হঠাৎ করেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাওয়া নিয়ে সাধারণ মানুষজনের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সবুজের আয়ের সঠিক উৎস নিয়ে তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন এলাকাবাসী। দেখা যাক, সবুজের সম্পদের বৈধতা এবং তার কর্মকাণ্ডের সত্যতা খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ নেয়! তা দেখার অপেক্ষায় রইল কৌতূহলী জনতা।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *