পদ্মায় পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত মানুষ গোদাগাড়ীর রেলবাজার ঘাট দিয়ে আসচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত জিনিসপত্র

রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলীঃ ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানিতে গত কয়েকদিনে ফের বাড়তে শুরু করেছে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর পদ্মার পানি। সে সাথে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। কোঁদলকটি, দিয়ার মানিকচক, চরআষাদিয়াদহের ভাঙ্গন কবলিত মানুষ গোদাগাড়ী পৌরসভার রেলবাজার ঘাট দিনে নিয়ে আসছে ধান, গম, ভুট্টা, চাউল, আদা, বাড়ী ঘর নির্মানের পুরাতন সামগ্রী, ক্ষতিগ্রস্থ ঢেউটিন, ঘরের চালা,দরজা জানালা প্রভূতি। বুধবার সন্ধ্যার পর এদৃশ দেখা গেল রেলওয়ে বাজার ঘাটে।

সম্প্রতি ফের পানি বাড়তে শুরু করায়, নদী ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন পদ্মার তীরবর্তী মানুষ। যদিও রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে; আরও দু’একদিন পর্যন্ত পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাবে। পরে তা স্থিতিশীল হয়ে আবারও কমতে শুরু করবে। এতে এই অঞ্চলে বন্যা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না তারা।

এদিকে, গত পদ্মা, মহানন্দা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলাসহ ১০ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের ১ হাজার ৫ শ ৫৯ হেক্টর জমির ফসল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। সেই সাথে কোদলকাটি গ্রামে ব্যাপক হারে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে।

শহরের বড়কুঠি পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা পরিমাপ করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার এনামুল হক। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, বড়কুঠি পয়েন্টে পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। মঙ্গলবার এই পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ৮৫ মিটার। অর্থাৎ বড়কুঠি পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ১ দশমিক ৬৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এনামুল আরও জানান, আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে পদ্মায় পানি বাড়লেও শেষের দিকে তা কমতে শুরু করে। তবে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবারও পানি বাড়তে শুরু করে পদ্মায়। কয়েকদিন বৃদ্ধি পেয়ে পানি আবারও স্থিতিশীল হয়। পরে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে পানি বাড়তে শুরু করে এ পর্যন্ত চলমান আছে।

গোদাগাড়ী সরকারী স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ এনামুল হক ফেসবুকে বন্যা ও ভাঙ্গনকবলিত মানুষ রেলবাজার ঘাট দিয়ে টিন, ঘরের চালা, ধান, গম, কলাই প্রভূতি নৌকায় নিয়ে আসছে সেই ছবি পোষ্ট করেছেন। মানুষ দুঃখ, কষ্টের সীমা নেই।

চর আষাদিয়াদহ এলাকাবাসী মনিরুল ইসলাম জানান পদ্মার পানি বাড়ার সাথে কোদলকাটি গ্রামে ব্যাপক নদী ভাঙ্গন মানুষ বিপদে আছেন, তাদের বাড়ী ঘর নিরাপদ দূরুত্বে সরিয়ে নিচ্ছেন, কোন কোন সময় সরানোর সময় পাচ্ছেন না। অনেক ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

পানি বৃদ্ধির কারণ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর জানান বলেন, মূলত ফারাক্কার উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে পদ্মায় আবারও পানি বাড়তে শুরু করেছে। আকস্মিক বন্যার সম্ভবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগামী দু’একদিন পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থেকে আবারও তা স্থিতিশীল হবে। পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার কোন সম্ভবনা নেই। ফলে এই অঞ্চলে আকস্মিক কোনো বন্যা হবে না।

এদিকে পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা কোদলকাটি, আলাতুলি, ক্লাবঘাট এলাকা, শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা, উজিরপুর, দুর্লভপুর ও সদর উপজেলার নারায়ণপুর, আলাতুলী, শাহাজাহানপুর, চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের ১ হাজার ৫শ’ ৫৯ হেক্টর মাসকালাই, রোপা আউশসহ সবজি পানি নিচে ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া মাসকালাইয়ের মধ্যে রয়েছে শিবগঞ্জ উপজেলার ১ হাজার ২৫০ হেক্টর ও সদর উপজেলায় ২১২ হেক্টর। তিনি আরও জানান, দুইটি উপজেলার প্রায় ৫ হাজার ৩১৫ জন কৃষকের মাসকালাই, আউশ ধান, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, চিনা ও আখ ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

নীতি-বিধানের তোয়াক্কা না করেই ভারত ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে পানি সরিয়ে নিচ্ছে। গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এ যাবৎ দুটি চুক্তি হলেও বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী পানি পায়নি। চলমান ৩০ সাল চুক্তি বাংলাদেশের ন্যায্য পানিপ্রাপ্তির কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি। আগের চুক্তিতে যতটুকু নিশ্চয়তা ছিল, এ চুক্তিতে তাও নেই। ফলে পানিবঞ্চনা আরো বেড়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বক্তব্য খোলাখোলি। শুকনো মওসুমে তিস্তার পানি প্রবাহ এত কমে আসে যে, তা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রয়োজনই মেটে না, বাংলাদেশকে আমরা পানি দেবো কিভাবে? আর বর্ষা মৌসুমে মরণ বাঁধ ফারাক্কার সব গেট খুলে দিয়ে পানিতে ডুবিয়ে মারছে ভারত। প্রতিবছর বন্যার সময় ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নদী ভাঙন শুরু হয়। এবার শুরু হয়েছে। ভারত প্রতি বছর পানি ছেড়ে আমাদের ডুবিয়ে মারে, খরা মৌসুমে পানি প্রবাহ আটকিয়ে রেখে দেশকে মুরুভূমি বানায় কোন প্রতিকার পায় না দেশের মানুষ।

মোঃ হায়দার আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক,
রাজশাহী।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *