বাগেরহাটে মোরেলগঞ্জে ডাক্তারদের চিকিৎসা পত্র চেক করে ঔষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা

শেখ সাইফুল ইসলাম কবির,বিশেষ প্রতিনিধি:বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলারবিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সামনে ঔষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা কোন রোগী চিকিৎসক দেখিয়ে ফিরছেন তখনই তাকে ঘিরে ধরছেন তারা। রোগীর হাত থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে মোবাইল ফোনে ছবি তুলে নিচ্ছেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দিনভর মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের দখলে থাকে মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাসপাতালসহ বেসরকারি ক্লিনিক ও চিকিৎসকদের চেম্বার। ওই হাসপাতালে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত একই দৃশ্য দেখা যায়। ভিড় করে থাকা ওই লোকগুলো বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি।এ ধরণের তৎপরতা দীর্ঘ দিন ধরে চলছে মোরেলগঞ্জ শহরের হাসপাতালসহ বেসরকারি ক্লিনিক ও চিকিৎসকদের চেম্বারের সামনে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন। রোগীরা চেম্বার থেকে বের হলেই তাঁরা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রটি টেনে নিয়ে ছবি তুলতে থাকেন। একেকজন রোগীর ব্যবস্থাপত্র নেয়ার জন্য ১০-১২ জন প্রতিনিধি টানাটানি শুরু করেন। অনেক মুমূর্ষু রোগী এতে আরও অসুস্থ হয়ে যান। এনিয়ে রোগীর স্বজন ও ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধির মধ্যে ঝগড়াও হয়।

এমন দৃশ্য হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডেও। কিছুক্ষণ পরপর দলবেঁধে এসে ভর্তি রোগীর চিকিৎসাপত্র যাচাইবাছাই করে দেখেন তাদের কোম্পানীর ঔষধের নাম আছে কিনা। নাম থাকলে ঔষধ সম্পর্কে কিছু বিজ্ঞাপনও দিয়ে যান তারা। অনেক রোগীই তাদের বেশভূষা দেখে চিকিৎসক মনে করে স্যার সম্বোধন করে রোগীর বিভিন্ন সমস্যার কথাও বলছেন তাদেরকে।

বিভিণ্ন সূত্রে জানা যায়, ঔষুধ কোম্পানী ডাক্তারদের তাদের কোম্পানীর ঔষুধ লেখার জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ – সুবিধা দিয়ে থাকেন । সুবিধা সুমুহের মধ্যে রয়েছে – বিদেশ সফর , প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা, এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় যাতায়াতের গাড়ি বহন খরচ , বাড়ির জন্য ফ্রীজ , কম্পিউটার , নিত্যদিনের বাজার করে দেয়া ইত্যাদি ।

ঔষুধ কোম্পানীর লোকেরা ( রিপ্রেজেন্টিভরা ) ক্লিনিকের সামনে দাড়িয়ে থেকে রোগীদের ব্যবস্থাপত্র যাচাই – বাছাই করে সত্যতা নিশ্চিতের চেষ্টা করে ঔষুধগুলো ঠিক মতো লিখলো কিনা । বেশকিছু ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রত্যেকটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা কয়েকটি ভাগে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও ডাক্তারের চেম্বারে দায়িত্ব পালন করেন। সকাল সাড়ে আটটা থেকে আড়াইটা ও বিকেল পাঁচটা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত দুই শিফটে দায়িত্ব পালন করেন তারা। তাদের তোলা প্রেসক্রিপশনের ছবি দেখে কোম্পানিগুলো ওষুধের চাহিদা নির্ধারণ করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঔষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধি জানান , আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ডাক্তাররা আমাদের কোম্পানীর চুক্তি অনুযায়ী রোগীদের ব্যবস্থাপনা পত্রে ঠিক মতো ঔষধগুলো লিখছে কি না যাচাই করা ? তাই বাধ্য হয়ে ডাক্তারের চেম্বার থেকে রোগিরা বের হলেই প্রেসক্রিপশন / ব্যবস্থাপনা পত্র দেখার চেষ্টা করি ।

একাধিক ক্লিনিক মালিক জানান , একজন ডাক্তারের যা যা সুযোগ সুবিধা দেবার প্রয়োজন আমরা তাই দিয়ে থাকি । এর বিনিময়ে আমরা রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা – নিরীক্ষা করার দায়িত্ব পাই । তারা আরো জানান , ঔষুধ কোম্পানীর মালিকরা বিভিন্ন লোভনীয় অফার দিয়ে ডাক্তারদের মানসিকতা নষ্ট করে ফেলছে ।

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার সুধী সমাজ ডাক্তারদের এ ধরণের কাজ কর্মের প্রতিরোধ করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *