কুড়িগ্রামে হ*ত্যাকে অপমৃ*ত্যু চালিয়ে দেয়ার অভিযোগ

এম এস সাগর,
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

নাগেশ্বরীতে পশ্চিম মন্নেয়ারপাড় এলাকায় ঘাতক স্বামী ছলিম উদ্দিনের হাতে গৃহবধূ হত্যাকাণ্ডকে অপমৃত্যু বলে চালিয়ে দেয়ার অভিযোগ করেন গৃহবধূর বাবা-মা ও এলাকাবাসী। তবে নাগেশ্বরী থানা পুলিশ বলছেন লাশ পোস্টমর্টেমর তথ্য অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কালীগঞ্জ ইউনিয়নের পুর্ব মন্নেয়ারপাড় এলাকার মনির উদ্দিনের কন্যা মহুয়া বেগমের সাথে ভিতরবন্দ ইউনিয়নের পশ্চিম মন্নেয়ারপাড় এলাকার মৃত খয়বর আলীর পুত্র ছলিম উদ্দিনের সাথে প্রায় ২৪বছর পুর্বে বিবাহ হয়। ছলিম উদ্দিন ও মহুয়া বেগমের ঘরে প্রথম কন্যা ছকিনা বেগম ও দুই পুত্র মামুন, মাছুম মিয়ার মধ্য কন্যা ছকিনা বেগম বিবাহীত আর দ্বিতীয় সন্তান মামুন ঢাকায় কাজ করেন। তাদের সংসার জীবন ভালোই চলছিল। খয়বর আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী সুফিয়া বেগম হচ্ছেন ছলিম উদ্দিনের সৎ মা। দীর্ঘদিন থেকে ছলিম উদ্দিন তার সৎ মা সুফিয়া বেগমের কু-পরামর্শে তার স্ত্রী মহুয়া বেগম কে বিনা-অপরাধে নির্যাতন করে মানসিক রোগী করেন।

মনির উদ্দিন, স্ত্রী আকলিমা বেগম ও তার পুত্র কামাল মিয়া, হাসান আলী অভিযোগ করে বলেন, জামাই ছলিম উদ্দিন (গত ১৪আগষ্ট ২০২৩খ্রিঃ) রাতে আমাদের জানান মহুয়া বেগম বাড়ীতে নেই আর তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মহুয়া কে মেরে ফেলার সন্দেহ করাসহ শোকে কাতর আমরা। মহুয়া কে খুঁজতে থাকি ও অবশেষে গত ২২আগষ্ট ২০২৩খ্রিঃ সন্ধ্যায় মহুয়ার মাতা আকলিমা বেগম তার জামাই ছলিম উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে তার ঘরের পেছনে পুকুরে দেখতে পায় দুটো পা ভেসে আছে এবং তিনি চিৎকার করলে সেখানে লোকজনের ভীর জমায়। ২২আগষ্ট ২০২৩খ্রিঃ দিবাগত রাত ৩টায় নাগেশ্বরী থানার এসআই অলক বাবুর নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে (৮দিনের পচাঁ লাশ) নেতরের মাধ্যমে উত্তোলনের সময় দেখা যায় পুকুরে লাশ মশারী দিয়ে পেচানো, তার উপরে চটের বস্তা, বাঁশের চট্টি, তার উপরে বাঁশের ঝিক ও কচরীপানা দিয়ে ঢাকা। মহুয়া বেগমের শরীরে লবণ দেয়ার কারণে লাশ পচেঁ গেছে। ততক্ষণিক মহুয়ার ঘাতক স্বামী ছলিম উদ্দিন নাগেশ্বরী থানায় বাদী হয়ে অপমৃত্যু মামলা করেন। অপমৃত্যু মামলা নম্বর- ২৯/২৩, তারিখ- ২৩আগষ্ট ২০২৩খ্রিঃ। পরদিন নাগেশ্বরী থানা পুলিশ মহুয়ার লাশ পোস্টমর্টেমর জন্য কুড়িগ্রাম পাঠায়। সেদিনই মহুয়ার লাশ বিকেল ৫টা তার বাবার এলাকায় দাফন হয়। সে সময় মহুয়া বেগমের পিতা, মাতা ও ভাইরা থানায় অভিযোগ করার জন্য গেলে পুলিশ তাদের অভিযোগ নেয়নি এবং এই ঘটনার পেছনের মূল হোতা মহুয়া বেগমের সম্পর্কে মামা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য এনামুল হক বলে তারা জানান।

পুর্ব মন্নেয়ারপাড় এলাকার মোস্তফা মিয়া, রাবেয়া বেগম, কমিলা বেগম, নুরবানু বেগম, দুলালী বেগম, সহিভান বেওয়া, রাবেয়া বেওয়া বলেন, লাশ উত্তোলনের সময় আমরা দেখছি পুকুরে লাশ মশারী দিয়ে পেচানো, তার উপরে চটের বস্তা, বাঁশের চট্টি, তার উপরে বাঁশের ঝিক ও কচরীপানা দিয়ে ঢাকা। মহুয়া বেগম কে তার স্বামী ও পরিবারের সদস্যরা হত্যা করেছে। আমরা এর ন্যায্য বিচার দাবি করছি।

সরেজমিনে মহুয়া বেগমের অপমৃত্যু না হত্যাকাণ্ডের সংবাদ সংগ্রহের জন্য ছলিম উদ্দিনের বাড়ীতে উপস্থিত হওয়া মাত্র ছলিম উদ্দিনের পরিবার ততক্ষণিক বাড়ীতে তালা লাগিয়ে উধাও হয়ে যায়। তবে ছলিম উদ্দিনের সৎ মা সুফিয়া বেগম ক্যামেরার সামনে বলেন, মহুয়া বেগম মারা গেছে। না না না হারিয়ে গেছে। পড়ে সড়িয়ে পরেন।

নাগেশ্বরী থানার এসআই অলক বাবু বলেন, মহুয়া বেগমের লাশ পোস্টমর্টেমর তথ্য অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মো: শহিদুল্লাহ লিংকন বলেন, মহুয়া বেগমের লাশ ময়না তদন্ত হয়েছে। দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট দেয়া হবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *