আরিফ রববানী ময়মনসিংহ।।
ময়মনসিংহে মাত্র ১২০ টাকা খরচ করে মেধা ও যোগ্যতায় ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন ১২৮ জন তরুণ-তরুণী। স্বপ্নের বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্য হতে পেরে এসব পরিবারে বইছে খুশির বন্যা। পরিবারগুলোর বেশিরভাগই দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের।
বর্তমানে সরকারি চাকরি মানে স্বর্ণের হরিণ। আর সেই চাকরির প্রত্যাশা থাকে যোগ্য-অযোগ্য সবারই। ব্যবধান হয়ে দাঁড়ায় মধ্যস্বত্বভোগী এক শ্রেণির দালালের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকার বিনিময়।
এমনপর্যায়ে যখন চাকরি প্রত্যাশীরা দিশেহারা, তখন অবৈধ অর্থ বা ঘুষ লেনদেন ছাড়াই ১২৮ জনকে চাকরি দিয়ে নজির সৃষ্টি করেছেন চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার মাসুম আহমেদ ভূঞা পিপিএম সেবা। এমন পরিস্থিতিতে কোনো প্রকার হয়রানি, সুপারিশ এবং ঘুষ ছাড়া সামান্য ১২০টাকায় এই চাকরি পেয়ে খুশিতে আত্মহারা এসব তরুণ-তরুণী। এ সময় চাকরি পাওয়ার আনন্দে অনেক তরুণ-তরুণী আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
শনিবার (২৩ মার্চ) দিবাগত রাত ২টায় ময়মনসিংহ পুলিশ লাইনে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদের নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঁঞা। এতে ১০৯ জন ছেলে এবং ১৯ জন মেয়ে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হন। এ সময় তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় জেলা পুলিশ।
জানা গেছে, ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে এবার ময়মনসিংহ জেলা থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ৫ হাজার ৭৫৯ প্রার্থী। পরে ৭টি শারীরিক পরীক্ষা ও যোগ্যতা যাচাইয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ১ হাজার ৪০৭ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়। লিখিত পরীক্ষায় পাস করে ৩৬১ জন। এরপর মৌখিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা শেষে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত হয় ১৯ নারীসহ মোট ১২৮ জন।
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার নন্দীবাড়ি গ্রামের নাদিয়া নাসরিন নুপুর। তার বয়স যখন সাড়ে ৩ বছর তখন বাবা নাজমুল হাসান ও মা মমতাজ বেগম সেলিনার বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর থেকে বাবা থেকেও নেই নুপুরের। মেয়েকে বড় করতে সেলাই মেশিনের কাজ শুরু করেন মা সেলিনা। এমন সংগ্রামের মধ্যেই মেয়েকে করিয়েছেন পড়াশোনা। এবার সার্থক হয়েছে তাদের সংগ্রাম। নিয়োগ পরীক্ষায় নারীদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন নুপুর। কোনো প্রকার হয়রানি, সুপারিশ এবং ঘুষ ছাড়া পুলিশের চাকরি পেয়ে নুপুরের মতই উচ্ছ্বসিত দারিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ১২৮ তরুণ-তরুণী ও তাদের অভিভাবকরা।
ফল প্রকাশের পর আনন্দে উদ্বেলিত নাদিয়া নাসরিন নুপুর বলেন, খুব ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশ পুলিশে চাকরি করব। প্রথমবার মাঠে নেমেই সেই স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেল। শুধু তাই নয়, এক হাজারের বেশি মেয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আমি জেলায় শ্রেষ্ঠ হয়েছি। আমি ও আমার মা আজ কি পরিমাণ খুশি তা বলে বোঝাতে পারব না।
মেধার ভিত্তিতেই শুধু যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঁঞা বলেন, প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াদের মধ্যে প্রায় ২০ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী রয়েছেন। অনেকের বাবা দিনমজুর, সিএনজিচালকসহ নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। একটি স্বচ্ছ নিয়োগের ফলে তারা নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছেন। নানা কঠিন ধাপ পেরিয়ে যারা বাংলাদেশ পুলিশের নতুন সদস্য হলেন তারা সবাই দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করবে বলে আশা ব্যক্ত করেন করেন এই কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, নিজের যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে যারা আজ নিয়োগ পেয়েছেন তারা সবাই নিজেদের যোগ্যতায় ও মেধায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এতে তাদের কোনো যোগাযোগ, লবিং ও ঘুস বিনিময় করতে হয়নি। তাদের মাত্র আবেদন করতে খরচ হয়েছে ১২০ টাকা, সেটিই তাদের খরচ। আশা করছি আজকে যারা পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ পুলিশের নতুন সদস্য হলেন; তারা সবাই দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করবে। তাদের জন্য রইল অনেক শুভকামনা।

Leave a Reply