হেলাল শেখঃ ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দেওয়ার কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান- বৈধ গ্রাহকদের নানারকম সমস্যা দেখার কেউ নাই। কোনো ভাবেই বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ সংযোগ-দালালদের পকেটে যাচ্ছে মোটা অংকের টাকা। অভিযান অব্যাহত আছে বলে দাবী করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এদিকে বৈধ গ্রাহকদের গ্যাসের চুলাও জ্বলছে না। মোমবাতির মতো টিপটিপ করে জ্বললে রান্না করা যায়না বলে অনেকেই জানান।
রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ইং) সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ঢাকার আশুলিয়ার ইউসুফ মার্কেট, ইয়ারপুর ইউনিয়নের জামগড়া ও মীরবাড়ি এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সরকারি সম্পদ তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগের ছড়াছড়ি। তথ্যমতে, এসব অবৈধ সংযোগ দাতারা হলো, আশুলিয়ার জামগড়া এরাকার নাজিম উদ্দিন, সোহেল মীর, সায়েদ মীর, শামীম, শরীফ, মোস্তফা, হাবিব, সেলিমসহ ১৫-২০জন। অনেকেই তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এক একটি অবৈধ সংযোগ থেকে ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা কালেকশন করা হয়, পুরো উপজেলায় ৬০ হাজারের বেশি অবৈধ সংযোগ রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে দালালদের পকেটে কোটি কোটি টাকা যাচ্ছে। গ্যাসের অবৈধ সংযোগ থেকে অগ্নিকান্ডে নারী ও শিশুসহ গত দুই বছরে সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, শতাধিক মানুষ দগ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন।
সরকারের সিদ্ধান্তে দুই শ্রেণীর গ্রাহক সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন, এদের মধ্যে এক শ্রেণির হলো সাভার আশুলিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বাসা বাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিকেরা। আরেকটি হলো বিভিন্ন আবাসন কোম্পানিগুলো। তাদের মধ্যে অনেকেই গ্রাহকদের গ্যাসের পাইপলাইনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আবাসন কোম্পানির অনেকেই বলেন, এখন গ্যাসের সংযোগ না পেলে তাদের প্লট, জমি ও ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে না। অনেকেই দাবি করেন যে,এখন প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে ইনকাম কম, খরচ বেড়েছে এর কারণে মানুষের অভাব বাড়ছে। গ্যাস সংযোগ নতুন করে আর কেউ পাচ্ছেন না, এতে গ্রাহকরা বেশি বিপাকে পড়েছেন।
সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ইং সালে এলএনজি আমদানি শুরুর পর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা গ্যাসের সংযোগ নতুন করে শুরু হওয়ার কথা নীতিনির্ধারণী মহলেও শুনা যাচ্ছিল। তখন ঢাকা ও সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর কাশিমপুরসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলায় অবৈধ সংযোগের সংখ্যা আরো বাড়িয়ে দেয় দালাল চক্র সিন্ডিকেটগুলো। গ্রাহকদের তারা আশ্বাস দেয়, কিছুদিন পরে গ্যাসের নতুন বৈধ সংযোগ দেওয়া শুরু করলে তারা এগুলোকে বৈধ করে দেবেন কিন্তু এখন সব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পালায় এই গ্রাহকদের সংযোগও কাটা পড়ছে। জানা গেছে, সরকারি ভাবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বেশ জোরেসোরেই মাঠে নেমেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ।
জানা গেছে, একটি অভিযানে সরকারের লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়, অভিযানের ১-২দিন পর আবারও সেখানেই অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়, আবার অভিযান চালানো হয়, এতে সরকারের বেশি ক্ষতি হচ্ছে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোকে কিছুদিন আগে জ্বালানি বিভাগ উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়ে তা বাস্তবায়নের আদেশ দিয়েছেন। সূত্র জানায়, ডিমান্ড নোট ইস্যু হওয়া এবং টাকা জমা দেওয়া গ্রাহকদের আবেদনও বাতিল করা হবে। তাদের অর্থ ফেরত দেবে সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানিগুলো। বিতরণ সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, নতুন সংযোগের জন্য ডিমান্ড নোট ইস্যু হওয়া এবং প্রয়োজনীয় ফি জমা দেওয়া গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখের মতো সারাদেশে। গ্যাস ও খনিজ সম্পদ খাতের নেতৃত্ব প্রদানকারী সংস্থা পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, বৈধ অবৈধ নানা উপায়ে এই শ্রেণির গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ হবে।
দেশে সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী বলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েছি। গৃহস্থালিতে আর গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে না। যেসব গ্রাহক সংযোগের জন্য আবেদন করেছেন এবং টাকা জমা দিয়েছেন, তাদের নাম আমাদের তথ্যভান্ডারে রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা একটি সভা করে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের রোডম্যাপ তৈরি করবো। বিঃ বা সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। দেশে গ্যাস বিতরণে নিয়োজিত অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, পশ্চিমা ল গ্যাস কোম্পানি ও সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি। এই সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, আগামীতে সভা করে তারা সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের রূপরেখা ঠিক করবেন। উক্ত ব্যাপারে জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্যাসের অবৈধ সংযোগ কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। নানা প্রলোভন দেখিয়ে জনগণকে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ নিতে বাধ্য করে কিছু দালাল চক্র। আবার অনেক গ্রাহকও নানাভাবে তদবির-প্রচেষ্টায় অবৈধ সংযোগ নেন। এখন স্থায়ীভাবে আবাসিক সংযোগ বন্ধ হওয়ায় নতুন করে অবৈধ সংযোগ নেওয়া অনেকটাই বন্ধ হয়ে যাবে। জানা গেছে, ঢাকার প্রধান শিল্পা ল আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বাসা বাড়িতে প্রায় লক্ষাধিক অবৈধ সংযোগ রয়েছে।
আশুলিয়ায় দায়িত্বে থাকা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিঃ ব্যবস্থাপক (জোবিঅ) প্রকৌশলী আবু সাদাৎ মোহাম্মাদ সায়েম বলেন, গত তিন বছরের তেমন মামলা করা হয়নি, সাভার ও আশুলিয়ায় তিতাস গ্যাসের বৈধ গ্রাহক সংখ্যা ৫২ হাজারের বেশি হবে। শিল্প গ্রাহক সংখ্যা ১৫০০। গ্যাসের অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারী দালালদের বিরুদ্ধে সাভার থানায় ৬টি ও আশুলিয়ায় ৪৬টি মামলাসহ প্রায় ৫২টির মতো মামলা করা হয়েছে, গত দুই বছরের মধ্যে মামলা করা হয়নি। গ্যাসের অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারী দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে বলেও তিনি জানান। তবে এক স্থানে ৬-৮ বার অভিযান করা হয় বলে সরকারের মোটা অংকের অর্থ হরিলুট হচ্ছে। সাভার আশুলিয়ায় অবৈধ গ্যাসের চুলা জ্বললেও বৈধ গ্রাহকের চুলায় গ্যাস থাকে না, বিল ঠিকই নেওয়া হচ্ছে কিন্তু গ্যাস থাকেনা চুলার পাইপলাইনে, এ ব্যাপারে কারো কোনো মাথা ব্যথা নাই। কিছু দুষ্টুলোকের কারণে সরকার প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে এসব অবৈধ সংযোগ থেকে। অভিযানে আসার পূর্বে দালালদেরকে আগেই বলে দেয়ার কারণে চোর পুলিশের খেলা শুরু হয়, এ খেলা আর কতদিন চলবে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না।
তিতাস গ্যাসের অ*বৈধ সংযোগে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান-বৈধ গ্রাহকদের সমস্যা

Leave a Reply