দেবীগঞ্জে জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ

মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম,তেতুলিয়া প্রতিনিধিঃ পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে তরিকুল ইসলামে নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তার করা ওই মামলায় অপরপক্ষের একজন জেল হাজতে রয়েছেন দাবি ভুক্তভোগি পরিবারের।

তরিকুল ইসলামের বাড়ি উপজেলার দন্ডপাল ইউনিয়নের রাজারহাট গ্রামে। তিনি সেখানকার আজাহার আলীর ছেলে। সম্প্রতি তিনি একই এলাকার মৃত মীর বকসের ছেলে ফজলুল হক (৩৫) ও মৃত আলতাব হোসেনের ছেলে আব্দুস সালামের (৫০) বিরুদ্ধে দেবীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার দেবীগঞ্চ থানার মামলা নম্বর ১৭/১৭।
মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, গত ২৩ জানুয়ারি রাতে তার খড়ের পালা এবং শয়ন ঘরে অগ্নিসংযোগ করে ফজলুল হক ও আব্দুস সালাম। এতে তার শয়ন ঘরসহ ঘরে থাকা আসবাবপত্র, মূল্যবান কাগজপত্র, বাইরের ঘরের টিনের বেড়াসহ টিনের চালা, খড়ের পালা, গৃহপালিত হাঁস-মুরগির ঘর ও হাঁস-মুরগি পুঁড়ে ভস্মিভুত হয়।

এদিকে, অভিযোগটি মিথ্যা, বানোয়াট ও পরিকল্পিত দাবি করেছেন ভুক্তভোগি পরিবার। হয়রানি করতে নিজেরা খড়ের পালায় অগ্নিকান্ড ঘটিয়ে মিথ্যা মামলা সাজিয়েছেন- বলছেন তাঁরা। সরেজমিনে গিয়ে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে দাবির সত্যতাও মিলেছে। সরেজমিনে গিয়ে খড়ের পালার আগুনের বিষয়টি চোখে পড়লেও শয়ন ঘরে আগুনের কোন নমুনা চোখে পড়েনি।

এই মামলায় জেল হাজতে থাকা ফজলুল হকের মা জহুরা বেগম বলেন, এনায়েতপুর মৌজার এস.এ ৬১নং খতিয়ানের ১৬ আনায় রেকর্ডীয় মালিকের ওয়ারিশদের কাছ থেকে আমার স্বামী মীর বকস আহমেদ ও সহিদুর রহমান এস.এ ৭টি দাগে ক্রয় করে দুই দাগে হস্তান্তরিত জমি দখল করেন। এরপর ওই দুই দাগ ভোগদখলে থাকাকালীন ৩৭৮ নং খারিজ খতিয়ান খুলেন। পরে মীর বকস ৬৪নং অছিয়তনামা দলিল করে দেন তার ছেলে ফজলুল হকের নামে। এদিকে ওই জমি তরিকুলের বাড়ীর কাছে হওয়ায় জবর দখলে নিলে ফজলুল হক বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ আদালত দেবীগঞ্চ পঞ্চগড় আদালতে স্বত্ব সাব্যস্থ পূর্বক দখল উদ্ধারের মামলা করেন। আগামী ধার্য্য তারিখে মামলার বিবাদী তরিকুলকে দালিলিক প্রমাণাদি উপস্থাপনের কথা জানানো হলে কাগজের সময় চাওয়ার ফন্দিফিকির করার জন্য এবং জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে আমাদেরকে ফাঁসাতে তাঁরা নিজেরাই খড়ের পালায় আগুন দিয়ে এই মিথ্যা মামলা করেছেন। কোন কারণ ছাড়াই আমার ছেলে জেল হাজতে আছে। এই মিথ্যা মামলা থেকে আমার ছেলের অব্যহতি চাই।

স্থানীয় আয়নাল, চাঁনমিয়া, তোতা মিয়া ও আব্দুল আলি বলেন- খড়ের পালায় আগুন লেগেছিলো। তবে কিভাবে আগুনের সূত্রপাত জানিনা। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে। কোন ঘরে আগুন লাগেনি এবং আসবাবপত্র ও কাগজপত্র পুড়েনি। কোন হাঁস মুরগিও মরেনি। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরে কথা বলবো বলে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন মামলার বাদী তরিকুল ইসলাম। পরবর্তীতে একাধিকবার চেষ্টা করলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে তার স্ত্রী হাজেরা খাতুনের সঙ্গে কথা হলে তিনি খড় ও বসার ঘর ছিল এবং তা আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়েছেন।

দন্ডপাল ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মছলিম উদ্দিন বলেন, তরিকুলের বাড়ি থেকে আমার বাড়ী অনেক দূরে যখন তিনি চিল্লাহাল্লার শব্দ শুনতে পান এবং স্থানীয় এক ব্যক্তি তাকে ফায়ার সার্ভিসে ফোন দেওয়ার জন্য বলেন তখন তিনি ফায়ার সার্ভিসে ফোন দেন। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে খড়ের পালার আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। এতে কোন বসতঘরে আগুন তার চোখে পড়েনি এবং আসবাবপত্র ও হাঁস-মুরগি মরার ঘটনা ঘটেনি।

দেবীগঞ্জ ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার রাজিব ভূঁইয়া সাংবাদিককে বলেন, অগ্নিকান্ডের খবরে আমাদের লোকজন দ্রুত সেখানে যায় এবং খড়ের পালার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সেখানে শয়ন ঘরে অগ্নিকান্ডের কোন ঘটনা ঘটেনি এবং আসবাবপত্র ভস্মিভুত হয়নি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দেবীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক রবিউল ইসলাম বলেন, মামলাটি তদন্তনাধীন রয়েছে।

মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম।।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *