শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ
বগুড়ার শাজাহানপুরে ভূমিদস্যুদের হাত থেকে পিতার লিখে দেয়া জমি রক্ষা করতে পারছেন না ফাতেমা বিবি, আনোয়ারা খাতুন, রুজিনা আকতার ও মুনজিলা খাতুন নামে অসহায় ৪ সহোদর বোন। জাল দলিল সৃষ্টি করে কয়েক দফা ক্রয়-বিক্রয়ের পর সন্ত্রাসী বাহিনী ভাড়া করে নিয়ে এসে হুমকি ধামকি দিয়ে বার বার ওই জমি জবর দখলের চেষ্টা করছেন অবৈধ ক্রেতারা।
১৭ ডিসেম্বর বেলা ১২টার দিকে শাজাহানপুর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অসহায় ওই ৪ নারীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আলহাজ্ব মোঃ ফুলমাহমুদ মন্ডল নামে এক ব্যক্তি। লিখিত বক্তব্যে আলহাজ্ব মোঃ ফুলমাহমুদ মন্ডল বলেন, তার স্ত্রী ফাতেমা বিবি ও তার স্ত্রীর বোন আনোয়ারা খাতুন, রুজিনা আকতার ও মুনজিলা খাতুনকে ১৯৮৯ সালে তাদের পিতা মুনছুর রহমান মন্ডল রহিমাবাদ মৌজার মোট ১৪ দাগে মোট ১ একর সাড়ে ৭৭ শতাংশ জমি হেবাবেল এওয়াজ দলিল করে দেন। তখন থেকেই ওই জমি এই ৪ বোন ভোগদখল করে আসছেন। কিন্তু তাদের ভাই আবু তালেব ১৯৭২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বন্ধের দিন শুক্রবার তারিখে ওই ১ একর সাড়ে ৭৭ শতাংশ জমিসহ তার বাবা মুনছুর রহমান মন্ডলের বেশ কিছু জমির একটি জাল কোবলা দলিল (দলিল নং ১৪১৫৬) সৃষ্টি করেন। পরবর্তিতে ওই দলিল মূলে স্থানীয় ঠিকাদার আফজাল হোসেন খান ও তার স্ত্রী নারগিস হোসেন খানের কাছে ৪৬ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। জমি ক্রয়ের পর আফজাল হোসেন খান সন্ত্রাসী বাহিনী ভাড়া করে নিয়ে এসে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৪৬ শতাংশ জমির মধ্যে কিছু জমি জবর দখল করেন। এরপর আফজাল হোসেন খান ও তার স্ত্রী নারগিস হোসেন খান শাজাহানপুর উপজেলার রহিমাবাদ দক্ষিণপাড়ার মৃত ছামসুল মন্ডলের ছেলে বকুল হোসেন ও তার দুই সহোদর ভাই এবং একই গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে জাকির হোসেন ও আমরুল ইউনিয়নের বিঞ্চুপুর গ্রামের নুরুল হকের ছেলে আব্দুল খালেক নামের ৫ ব্যক্তির নিকট বিভিন্ন সময়ে ওই ৪৬ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। এরপর থেকে এই ক্রেতারা একেক বার একেক জন আলাদ আলাদা ভাবে সন্ত্রাসী বাহিনী ভাড়া করে নিয়ে এসে ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি দখলের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু প্রতিবারই ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে পুলিশ এলে ভূমিদস্যুরা ভয়ে পালিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, আবু তালেব যে জাল দলিল সৃষ্টি করেছেন তার প্রমান ২০০৩ সালের ৯ ফেব্রæয়ারী বগুড়া সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ৮৯ নং স্মারক মূলে সার্চ আবেদন দেয়া হলে ওই দলিলের কোন অস্তিত্ত¡ খুঁজে পাওয়া যায় নাই। যেহেতু জাল দলিল মূলে প্রথম ক্রেতা আফজাল হোসেন খান ও তার স্ত্রী নারগিস হোসেন খান জমি ক্রয় করেছেন সেহেতু তাদেরই জমি ক্রয়ের কোন বৈধতা নাই। তাই তাদের কাছ থেকে পরবর্তি ক্রেতাদেরও আইনগত কোন বৈধতা নাই। তাছাড়া আফজাল হোসেন খান ও তার স্ত্রী নারগিস হোসেন খানের ওই জমি ক্রয়ের খবর জানতে পেরে ওই ৪ বোন ২০০৪ সালে ১ম সিনিয়র জজ আদালত, বগুড়ায় মামলা দায়ের করেন। আদালত ২০১৫ সালের ২৯ মার্চ ওই জমির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। পরবর্তিতে ২০২২ সালের ২১ মার্চ আদালতে ৪০ হাজার টাকা কোর্ট ফি জমা দেয়ার পর মামলাটি উচ্ছেদ মামলায় (মামলা নং-১৬/২২) পরিনত হয়। বর্তমানে মামলাটি জেলা বগুড়ার ১ম জেলা জজ আদালতে বিচারাধিন রয়েছে। এমতাবস্থায় এই ভূমিদস্যু অবৈধ ক্রেতারা মাঝে মধ্যেই সন্ত্রাসী বাহিনী ভাড়া করে নিয়ে এসে জমি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে এই ভূমিদস্যু অবৈধ ৫জন ক্রেতা বকুল হোসেন ও তার সহোদর ২ ভাই এবং জাকির হোসেন ও আব্দুল খালেক সন্ত্রাসী বাহিনী ভাড়া করে নিয়ে এসে জমি দখলের চেষ্টা করেন এবং প্রাণে মেরে ফেলা সহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দেয়। এমতাবস্থায় আদালতে মামলা বিচারাধিন থাকা অবস্থায় পিতার লিখে দেয়া সম্পত্তি হাত ছাড়া হওয়ার আশংকায় এবং জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন অসহায় ওই ৪ নারী ও তাদের পরিবার। তাই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই সমস্ত ভূমিদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পেতে সংশ্লীষ্ট প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট সুদৃষ্টি কামনায় আকুল আবেদন জানায়।
Leave a Reply