তানোরে অসময়ে বৃষ্টি নিম্নআয়ের মানুষের দূ*র্ভোগ চরমে

আলিফ হোসেন,তানোরঃ
রাজশাহীর তানোরে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমর প্রভাবে গত দুই দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। পেঁয়াজ, ভুট্টা, আলু, লাউসহ বিভিন্ন সবজি খেতে হালকা জমেছে পানি। ইটভাটার কাঁচা ইট পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে উপজেলার ২টি ইটভাটায় লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছ। এমনটাই দাবি করেছেন ইটভাটার মালিকেরা। গত ৭ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার উপজেলার দুটি ইটভাটার প্রস্তুতকৃত কাঁচা ইট বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হওয়ার চিত্র দেখা গেছে। এছাড়াও তানোরের সীমান্তবর্তী মান্দার বাঁকাপুর অনেক ইটভাটায় পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিষ্কাশনের চেষ্টা করছেন শ্রমিকেরা দেখা গেছে।উপজেলায় মৌসুমের শুরুতে ইটভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হয়েছে। তবে হঠাৎ করে দুই দিনের বৃষ্টিতে সাজানো কাঁচা ইটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই এত বড় ক্ষতির কারণে ব্যাপক লোকসান গুনতে হবে ভাটার মালিকদের এমনটিই জানালেন মালিকেরা।
সরেজমিনে তানোরের মুন্ডুমালা ও মান্দার বাঁকাপুর ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, বুধবার ও বৃহস্পতিবার দিনের বৃষ্টিতে প্রায় সব ইটভাটার কাঁচা ইট ভিজে যাচ্ছে। বেশির ভাগ ইটভাটা নিচু এলাকায়। ইট ভাটার শ্রমিক আব্দুল রশিদ ও আলমগীর হোসেন জানান, তাঁরা এসেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে। আবহাওয়া ভালো থাকায় ভাটায় প্রতিদিনই কাজ হচ্ছিল। কিন্তু বুধবার ও বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। তাই কাজ বন্ধ তাঁদের। কাজ বন্ধ থাকলে টাকাও পান না। মুন্ডুমালা পৌর এলাকার ইটভাটার মালিক শামসুল ইসলাম বলেন, মৌসুমের শুরুতে ভাটায় আগুন দেওয়া হয়েছে মাত্র। এছাড়াও প্রায় এক লাখ কাঁচা ইট প্রস্তুত করা হয়েছিল। গত দুই দিনের বৃষ্টিতে খোলা আকাশের নিচে প্রায় সব কাঁচা ইট ভিজে গেছে। এতে ৮০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাঁকাপুর গ্রামের হিরোভাটা মালিক টোকেন বলেন, ‘ভাটাতে এখনো আগুন দিইনি। কিন্তু ৭০ থেকে ৮০ হাজার কাঁচা ইট প্রস্তুত করা হয়েছিল। হঠাৎ বৃষ্টি মোকাবিলায় তেমন কোনো প্রস্তুতি ছিল না। দুই দিনের বৃষ্টিতে কাঁচা ইট ভিজে গেছে। ভিজা ইট আগুনে পোড়ালেও ভালো দাম পাওয়া যায় না। সব ইটভাটা মালিকরাই ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তানোর পৌর এলাকার গোল্লাপাড়া মহল্লার তুহিন আলী শাহ্ বলেন ‘সবে মাত্র ৩ বিঘা জমিতে আলু রোপণ করেছি। গাছ এখনো বের হয়নি। দুই দিনের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে জমিতে হালকা পানি জমেছে। আর এক দিন এ ধরনের বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আলু পচে যাবে। এতে তার ব্যাপক লোকসান হবে।’ তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, দুই দিনের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে উঠতি ফসলে কিছু সাময়িক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে আজ কালের মধ্যে বৈরী আবহাওয়া কেটে গেলে আশা করছি ফসলের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।
এদিকে অগ্রহায়ণের বৃষ্টিতে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। তানোরের সীমান্তবর্তী শ্যামপুর গ্রামের ভ্যানগাড়ি চালক মজিবুর বলেন, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে মানুষজন তেমন বের হচ্ছে না। ভ্যানগাড়ির যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। এ সপ্তাহে কিস্তি দিতে হবে এক হাজার টাকা। সে টাকা বৃষ্টির কারণে উঠবে বলে মনে হচ্ছে না।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, গেল ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীতে ১০ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বুধবার বিকেল ৫টা ১০ মিনিট থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র এ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। তিনি আরও বলেন, বুধবার দিনভর মেঘলা আকাশের কারণে সূর্যের দেখা তেমন মেলেনি। একই অবস্থা ৭ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সারদিন সূর্যের দেখা মেলেনি। এদিন দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।#

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *