রাজশাহী-১ অপ্রতিদন্দী ফারুকের প্রতিপক্ষ দুর্বল ১০ প্রার্থী

আলিফ হোসেন,তানোরঃ

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) ভিআইপি এই সংসদীয় আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে এবার লড়বেন তিন নারীসহ ১০ প্রার্থী। এদের সবাই নতুন মুখ। এদের মধ্যে চারজন স্বতন্ত্র ও বাকিরা দলীয় প্রার্থী। চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থীই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে ভোটের মাঠে নামছেন।

রাজশাহী-১ ভিআইপি সংসদীয় আসন নামে পরিচিত এবার এখানে ভোটে লড়তে চান তিনবারের এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান আখতার, গোলাম রাব্বানী, আয়েশা আখতার জাহান ডালিয়া, চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপা মাহিয়া, বিএনএফ দলের প্রার্থী আল-সাআদ, তৃণমূল বিএনপি থেকে জামাল খান দুদু, এনপিপির প্রার্থী নুরুন্নেসা, বাংলাদেশ সাংস্কৃতি মুক্তিজোট প্রার্থী বশির আহমেদ, জাতীয় পার্টি থেকে শামসুদ্দীন মন্ডল ও বিএনএম’র প্রার্থী শামসুজ্জোহা বাবু। এদের মধ্যে আখতারুজ্জামান আখতার, গোলাম রাব্বানী, আয়েশা আখতার জাহান ডালিয়া ও চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপা মাহিয়া মাহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তারা চারজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ও গুরুত্বপুর্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

রাজশাহী-১ ভিআইপি আসন থেকে বিএনপি-জামায়াত থেকে হেভিওয়েট প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর আগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী হেভিওয়েট নেতা প্রায়াত ব্যারিষ্টার আমিনুল হক, আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্ত্ত প্রয়াত ব্যারিষ্টার আমিনুল হক সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পলাতক থাকায় তার বড় ভাই পুলিশের সাবেক আইজিপি ড. এনামুল হক নির্বাচনে অংশ নিয়ে ওমর ফারুক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হয়। ব্যারিষ্টার আমিনুল হক মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল (অব:) শরিফ উদ্দীন এবার নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে মাঠে অনেকটা সরব ছিলেন। এছাড়াও জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এই আসন থেকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে থাকেন।

তবে এবার আওয়ামী লীগ থেকে ওমর ফারুক চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন পেলেও নিজ দলের চারজন বিদ্রোহী প্রার্থীসহ বিভিন্ন দলের ৬ জন প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। যারা সবাই নতুন মুখ হিসেবে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন।

এদিকে

আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আখতারুজ্জ্মান আখতার। তিনি গেলো রাজশাহী জেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ভোট করে পরাজিত হন। এছাড়াও তিনি গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপড়া ইউনিয়ন (ইউপি) নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। অন্যদিকে গোলাম রাব্বানী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে দুবার নির্বাচন করে দুবারই বিএনপির দুর্বল প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। এসব বিবেচনায় এখন দেখার বিষয় এই দুজন হেভিওয়েট প্রার্থী ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে কতটা প্রতিদন্দিতা করতে পারেন।

ওদিকে আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য আয়েশা আখতার জাহান ডালিয়াও এবার নতুন মুখ। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে এবার লড়বেন ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে। কিছুদিন আগে থেকে এলাকায় নানা ধরণের সামাজিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে নিজের অবস্থান তৈরীর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। নির্বাচনী এলাকায় এখানো তার তেমন কোনো জনপ্রিয়তা সৃষ্টি হয়নি। এমনকি দুই উপজেলার আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল কোনো নেতাকর্মীকেও তার সঙ্গে দেখা যায়নি। ফলে তাকে ফারুক চৌধুরীর প্রতিদন্দী ভাবতেই নারাজ তৃণমূলের নেতাকর্মীগণ।

অপরদিকে, দেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপা ওরফে মাহিয়া মাহীর বাড়ী চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা। তবে তার নানার বাড়ী তানোরের মুন্ডমালা পৌরসভার পাঁচন্দর। নানার বাড়িতেই তিনি বেড়ে উঠেছেন। ছোট বেলা থেকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশ নেয়ার কারণে এলাকায় তিনি আগে থেকেই কিছুটা পরিচিত। তাই তিনি এ এলাকাকেই বেছে নিয়েছেন ভোটে লড়তে। কিন্ত্ত এমপি নির্বাচন করতে যে রাজনৈতিক দুরদর্শিতা, পারিবারিক ঐতিহ্য, কর্মী বাহিনী ও সাংগঠনিক দক্ষতা ইত্যাদি প্রয়োজন তা তার নাই।এছাড়াও এক প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে তার অশ্লীল অডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে তাকে নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে চরম নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়। উঠে সমালোচনার ঝড় ও মুখরুচোক নানা গুঞ্জন। এসব বিবেচনায় হেভিওয়েট প্রার্থী ফারুক চৌধুরীর প্রতিদন্দি হিসেবে মাহীকে আলোচনাতেই রাখতে নারাজ তৃণমুল। কারণ আয়তনের দিক দিয়ে এটি দেশের অষ্টম বড় নির্বাচনী এলাকা। বরেন্দ্র অঞ্চলের বিশাল আয়তনের দুর্গম পল্লী বেষ্টিত এই নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে নতুন কারো পরিচিত হতেই ১০ বছর সময় পেরিয়ে যাবে। ফলে নতুন কারো পক্ষে এখানে বিজয়ী তো দুরের কথা প্রতিদন্দিতা করার সক্ষমতা নাই।

স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত, প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, সামাজিক মর্যাদা, পারিবারিক ঐতিহ্য, রাজনৈতিক দুরদর্শিতা ও অভিজ্ঞতা, আর্থিক স্বচ্ছলতা, কর্মী বাহিনী, নেতাকর্মীদের মতামত ও ভোটারদের মানসিকতা বিবেচনায় নির্বাচনে বিজয়ী হবার দৌড়ে ফারুক চৌধুরী অন্যদের থেকে যোজন যোজন দুরুত্বে এগিয়ে রয়েছেন। এবিষয়ে তানোর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না বলেন, গণমানুষের নেতা আদর্শিক ও পরীক্ষিত নেতৃত্ব আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়ার মধ্যদিয়ে এই অঞ্চলের গণমানুষের আকাঙ্খা বা স্বপ্ন পুরুণ হয়েছে। তিনি বলেন, এবার তাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করে সরকারের মন্ত্রীসভায় দেখার আকাঙ্খায় আমজনতা একট্টা হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে এমপি মহোদয়ের কোনো বিকল্প নাই।#

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *