জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে অনশনে গোপালগঞ্জ বশেমুরবিপ্রবি’র শিক্ষার্থী, মানববন্ধন কর্মসূচী পালন

স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে প্রবেশ করে মারধরের প্রতিবাদে ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আমরণ অনশনে বসেছিল ফিসারিজ এন্ড মেরিন বায়োসায়েন্স (এফএমবি) বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো: সাজ্জাদ হোসেন। শনিবার রাত সাড়ে ৭টা থেকে এ অনশন শুর করে সে। পরে গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ন্যায় বিচারের আশ্বাসে অনশন ভঙ্গ করলেন শিক্ষার্থী।

ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীর রনি মৃধা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তদন্ত শেষে দোষী প্রমানিত হলে দোষীদের রিবুদ্ধে ববস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।

এদিকে, ফিশারিজ এন্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো: সাজ্জাদ হোসেনের উপর ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে ও সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানাগেছে, গত ৫ নভেম্বর ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসাইন্স বিভাগ ও ফার্মেসি বিভাগের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দুই বিভাগের খেলোয়াড়দের মধ্যে তর্ক বিতর্ক এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই রাতে ফার্মেসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রনি মৃধা তার ১০-১২ জন সহযোগীদের নিয়ে শেখ রাসেল হলের ৬০৪ নং কক্ষে গিয়ে ফিশারিজ এন্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জাহিদ হোসেনকে কক্ষ থেকে বের করে ৫০৮ নং কক্ষে নিয়ে আটকে রেখে মারপিট করে।

পর দিন ৬ নভেম্বর রনি মৃধা আবারো হলে যায়। পরে ৩০৩ নং কক্ষে প্রবেশ করে প্রথমে ফিশারিজ এন্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেনের কাছে তার বিভাগের অন্য দুই-তিন শিক্ষার্থীর নাম ধরে জানতে চায় তারা কোথায় আছে। এক পর্যায়ে সাজ্জাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাকে লোহার পাইপ দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে। ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করলে সাজ্জাদ হাত দিয়ে ঠেকাতে গেলে ছুরির আঘাত তার বাম চোখের কোনে আঘাত লাগে। পরে সাজ্জাদকে গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে এবং সেখানে তার চিকিৎসা দেয়।

এ ঘটনার বিচার ও নিজের নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করে সাজ্জাদ। এতে আবারো ক্ষিপ্ত হয়ে শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে সাজ্জাদকে হুমকি দেয়া হয়।

তবে এ ঘটনায় কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় শনিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনের ফটকে অনশনে বসে। পরে রাত সারে ১১ টার দিকে প্রকটোরিয়াল বডি ও শেখ রাসেল হলের প্রভোস্ট সেখানে যায়। তারা সাজ্জাদকে ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিলে রাত সাড়ে বারোটার দিকে সে অনশন ভঙ্গ করে এবং হলে ফেরে।

এসময় সাজ্জাদ ”আমি কি পরবর্তী আবরার ফাহাদ? আর কত বিচারহীনতা? আমি মরলে কি টনক নড়তো প্রশাসন? সন্ত্রাসীদের কারখানা কি বশেমুরবিপ্রবি? আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আমাকে হত্যার চেষ্টার বিচার চাই। হামলার বিচার চাই। আমি বাঁচতে চাই বাঁচতে দিন লেখা বিভিন্ন প্লাকার্ড প্রদর্শণ করে।

এ ঘটনায় ৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ডীন মো: হাসিবুর রহমানকে প্রধান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি তদন্তের জন্য উভয় পক্ষকে নোটিশ প্রদান করে। তদন্ত কমিটিকে আজ রোববার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

এদিকে, ফিশারিজ এন্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো: সাজ্জাদ হোসেনের উপর ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে ও সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।

আজ রোববার (১২ নভেম্বর) দুপুরে রংপুর বিভাগীয় ছাত্র সংগঠনের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে হাতে হাত ধরে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। এতে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

এ বিষয়ে হামলার শিকার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, রনি মৃধা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তবে সে হলে থাকে না। আগের দিন রাত সাড়ে বারোটার দিকে হলে এসে জাহিদ হোসেনকে মারপিট করলো। পরের দিন দুপুরে আমাকে মারপিট করলো। আমরা অভিযোগ করলাম কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক কিছুই করলো না। তদন্ত কমিটি করেছে তদন্ত করতে কিন্তু তদন্ত করতে করতে এর মধ্যে যদি আমাকে প্রাণে মেরে ফেলে। এ দায়ভার কে নিবে? আমার নিরাপত্তা কে দিবে? বাহির থেকে লোকজন নিয়ে এসে মারপিট করে যায় আজ এসে আমাকে হুমকি দিয়ে গেল আমাকে হত্যা করা হবে। আমরা বারবার বলতেছি যে ওই দিনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা হোক কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছেন গত ৬ তারিখ থেকে সিসিটিভি ফুটেজ উধাও এটা একটা রহস্যজনক ব্যাপার। আজ আমাকে হুমকি দিয়ে গেল সেটা তো সিসি ক্যামেরায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আমি দ্বিতীয় আবরার হতে চলেছি। আমি মারা যাওয়ার পরে কি প্রশাসনের টনক নড়বে। মারা গেলেই কি এই অরাজকতা শেষ হবে। আমি আমার জীবনের একবিন্দুও নিরাপত্তা পাচ্ছি না। আমি বাঁচতে চাই আমাকে আপনারা বাঁচতে দিন প্লিজ আমাকে বাঁচতে দিন।

এ বিষয়ে শেখ রাসেল হল প্রভোস্ট এমদাদুল হক বলেন, আমরা ঘটনা জানার পরপরই সাজ্জাদকে নিয়ে হসপিটালে যাই এবং তাকে সার্বিক নিরাপত্তার কথা বলি। একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে। আমরা ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের সতর্ক করে বলেছিলাম, রনি মৃধা যেনো আর শেখ রাসেল হলে প্রবেশ করতে না পারে। গতকাল কিভাবে সে হলে প্রবেশ করল এটা আমার জানা নেই। এটা নিরাপত্তা কর্মীদের কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মো. কামরুজ্জামান বলেন, পূর্বের ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছি, জানতে পেরেছি রনি মৃধা গতকাল শেখ রাসেল হলে প্রবেশ করে ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থীকে হুমকি প্রদান করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আজ দিনের মধ্যেই তদন্ত কমিটি নিয়ে বসছি এবং তদন্ত কমিটির সুপারিশ শৃঙ্খলা কমিটিকে জানানো হবে। অতি দ্রুতই এর একটা সমাধান হবে। অপরাধী যেই হোক তাকে শাস্তি পেতেই হবে। #

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *