December 22, 2024, 6:09 am
স্টাফ রিপোর্টার:- নিরেন দাস
কর্মস্থলে যোগদানের ২৫ দিনের মাথায় জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার নবাগত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলামকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। তাকে দিনাজপুরের একটি কলেজের শিক্ষিকার স্বামী দাবি এবং ‘স্ত্রীর মর্যাদা’ চেয়ে বুধবার আক্কেলপুরের প্রধান সড়কে অবস্থান নেওয়ার পরই আরিফুলকে ওএসডি করা হয়। বৃহস্পতিবার আরিফুলকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি করা হয়। নতুন ইউএনও করা হয়েছে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মনজুরুল আলমকে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে এই রদবদল করা হয়।
আরিফুল নওগাঁর ধামুইরহাটের ইউএনও ছিলেন। গত আগস্টের শেষ দিকে তাকে আক্কেলপুরে ইউএনও হিসাবে বদলি করা হয়। ৪ সেপ্টেম্বর তিনি আক্কেলপুরের ইউএনওর দায়িত্বগ্রহণ করেন। জয়পুরহাটের ডিসি সালেহীন তানভীর গাজী ইউএনও আরিফুল ইসলামকে জনপ্রশাসনে বদলির কথা স্বীকার করে বলেন, এখানে মনজুরুল আলমকে ইউএনও হিসাবে বদলি করে আনা হয়েছে।
দিনাজপুর শহরের বাসিন্দা ওই শিক্ষিকার দাবি, আক্কেলপুরের ইউএনও আরিফুল ইসলাম দিনাজপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তখন একটি জমি খারিজ করতে গিয়ে তার (আরিফুল) সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয়। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে প্রথম স্ত্রী থাকার বিষয়টি গোপন করে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রায় ২০ লাখ টাকা দেনমোহরে রেজিস্ট্রিমূলে রংপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি রেস্ট হাউজে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিবাহের বিষয়টি প্রথম থেকেই কৌশলে গোপন করেন আরিফুল। এমনকি তিনি গর্ভবতী হলেও গর্ভপাতে বাধ্য করেন তার স্বামী। অবশ্য পরে তাদের সংসারে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। তবে পরে ওই শিক্ষিকাকে স্ত্রী হিসাবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান আরিফুল।
ওই শিক্ষিকা বুধবার তার পুত্র সন্তান ও স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে উপজেলা পরিষদে আসেন। তিনি আরিফুল ইসলামের কক্ষে যেতে চাইলে ইউএনওর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা তার মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে তাকে ঢুকতে বাধা দেন। তখন ওই নারী চিৎকার করতে করতে উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে এসে সন্তান কোলে নিয়ে বসে পড়েন। এ সময় উৎসুক জনতা তাকে ঘিরে রাখেন। সড়কে যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
সড়কে বসে ওই নারী জনতার উদ্দেশে বলেন, আরিফুল ইসলাম তার দ্বিতীয় স্বামী। কোলে থাকা শিশুটি আরিফুলের সন্তান। পাঁচ থেকে ছয় দিন আগে আরিফুল তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এ কারণে তিনি এখানে এসেছেন। ইউএনওর নির্দেশে আনসার সদস্যরা মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেওয়ায় ‘স্ত্রীর মর্যাদা’ ফিরে পেতে তিনি সড়কে বসেছেন।
শিক্ষিকার ভাই মুক্তার হোসেন বলেন, ‘প্রথম স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও আরিফুল ইসলাম আমার বোনকে গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। পরে তিনি বিষয়টি গোপন করেন। তিনি তার শিশু সন্তান এবং স্ত্রীকে মর্যাদা দিতে অস্বীকৃতি জানান। আমার বোন স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে এখানে এলে তিনি আমাদের হেনস্তা করেছেন।’
জানতে চাইলে আরিফুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ‘এটি প্রথম আমি আপনাদের কাছে শুনলাম। আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে ট্র্যাপে ফেলার একটি বিষয় ছিল। তাকে তালাক দেওয়া হয়েছে। আইনের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হবে। এটি একটি পারিবারিক বিষয়।’
এ বিষয়ে জয়পুুরহাট জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, আক্কেলপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলামকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নতুন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলমকে আক্কেলপুরে পদায়ন করা হয়েছে।
এদিকে জয়পুুরহাট জেলা জুড়ে নারী কেলেঙ্কারির বিষয়ে জেলার আক্কেলপুরের উপজেলার নবাগত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল ইসলামকে নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনার ঝড়।