December 22, 2024, 5:37 am
এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট:বাগেরহাটের ফকিরহাটে ঘেরের ভেড়ীবাঁধে পতিত জমিতে চার স্তরের নিরাপদ সবজি চাষ করে বাগেরহাট সহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক হাজার চাষি এখন অর্থনৈতিক ভাবে আগের চেয়ে বেশ স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাদের উৎপাদিত ১শ ট্রাক সবজি এখন রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের গুরুত্বপূর্ণ বাজারে বিক্রয় হচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে বইছে শান্তির সুবাতাশ। উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বক্ষনিক মনিটরিং ব্যবস্থা এবং স্মল হোল্ডার কম্পিটিটিনেভস প্রজেক্ট (এসএসিপি) এর মাধ্যমে চাষিদের প্রশিক্ষন ও নানা ধরনের সহযোগীতা প্রদান করায় এটি সম্ভব হয়েছে। চাষিরাও তাদের এ অর্থনৈতিক ধারা অব্যহত রাখতে চাই। বাগেরহাট কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৯টি উপজেলার ফকিরহাট চিতলমারী মোল্লাহাট মংলা রামপাল মোরেলগঞ্জ,শরনখোলা বাগহাট ও কচুয়ায় ১০ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ আবাদ হয়েছে। ৯ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের নিজ জমিতে আখ চাষ করে চাষিরা আশানুরুপ ফলন পেয়েছে। এতে অনেকেই আধুনিক পদ্ধতিতে ভাল জাতের সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছে সবজি কাটতে। সারি সারি ভ্যান দাড়িয়ে আছে এ সবজি নিয়ে যাওয়ার জন্য। এখান থেকে সবজি স্থানীয় বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে নিয়ে যায়। বাগেরহাট কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৯টি উপজেলার ফকিরহাট মোল্লাহাট চিতলমারী মংলা রামপাল মোরেলগন্জ শরনখোলা বাগহাট ও কচুয়ায় ১০হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ আবাদ হয়েছে। ৯ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের নিজ জমিতে সবজি চাষ করে চাষিরা আশানুরুপ ফলন পেয়েছে। এতে অনেকেই আধুনিক পদ্ধতিতে ভাল জাতের সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
জানা গেছে, ফকিরহাট উপজেলা কৃষি অফিস এ অঞ্চলকে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসাবে গড়ে তোলার জন্য শতশত চাষিদেরকে তাদের পতিত জমি ফেলে না রাখার জন্য নানা ধরনের পরামর্শ প্রদান করে আসছেন। শুধু তাই নয়,তাহারা যাহাতে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন,সেজন্য তাদেরকে হাতে-কলমে সবজি চাষের উপর নানা ধরনের প্রশিক্ষন পরামর্শ ও সহযোগীতা প্রদান করেই আসছেন। যারই অংশ হিসাবে তারা এঅঞ্চলের শতশত চাষিকে স্মল হোল্ডার কম্পিটিটিনেভস প্রজেক্ট (এসএসিপি) এর মাধ্যমে ঘেরের ভেড়ীবাঁধে পতিত জমিতে চাষাবাদ শুরু করার পরামর্শ প্রদান করেন। সেই পরামর্শ নিয়ে তারা সবজি চাষের উপর মনোযোগী হন। ফকিরহাট উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে শুধুমাত্র ঘেরের ভেড়ীবাঁধে মোট ৫শত হেক্টর জমিতে সবজির চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে বেতাগা ইউনিয়নে ১শত হেক্টর, লখপুর ইউনিয়নে ৭০হেক্টর, পিলজংগ ইউনিয়নে ১শত হেক্টর, ফকিরহাট সদর ইউনিয়নে ৪০হেক্টর, বাহিরদিয়া-মানসা ইউনিয়নে ৫০হেক্টর, নলধা-মৌভোগ ইউনিয়নে ৭০হেক্টর, মুলঘর ইউনিয়নে ৪০হেক্টর ও শুভদিয়া ইউনিয়নে ৩০হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে।
বেতাগা ইউনিয়নের ধনপোতা গ্রামের আনন্দ পাল, শ্যামল পাল, জীবন পাল, রব্বান শেখ ও সিহাব উদ্দিন সহ একাধিক চাষিরা জানান, তারা তাদের ঘেরের ভেড়ীবাঁধে চার স্থরের সবজি চাষ করেছেন। একই ঘেরের ভেড়ীবাঁধের উপর যে চার প্রকার সবজি চাষ করা যায় তা তাঁরা কোন দিন কল্পনাও করতে পারেননী। স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শক্রমে তারা এ পদ্ধতিতে চাষ করা শিখেছেন। তারা বলেন, ঘেরের ভিতরে মাছ আর ডাঙ্গায় অর্থাৎ ঘেরের ভেড়ীতে বরবটি সিম, করলা, তরমুজ, বাঙ্গি, শসা, চাল কুমড়া ও লাউ এবং দুই গাছের মাঝখানে বেগুন মরিচ টমেটোসহ বিভিন্ন প্রকার সবজির চাষ করেছেন। শুধু তারা নয়,এঅঞ্চলের শতশত ঘের মালিক ও বিভিন্ন ব্যক্তি জমি হারি বা বরগা নিয়ে সবজির চাষ করেছেন। বাম্ফার ফলনও হয়েছে। ধনপোতা গ্রামের বিলে হাজার হাজার একর জমিতে মনোমুগ্ধকর সবজির চাষ করা হয়েছে। যা দেখলে মন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এ যেন ভিন্ন এক অঞ্চল। সকল সবজি একটি স্থানে এনে জড়ো করার জন্য বেতাগা ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অর্থায়নে প্রায় ১৫লক্ষ টাকার ব্যায়ে বৃহৎ আকারের একটি (কালেকশন সেন্টার) পাকা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। যে ভবনটি নির্মাণ করা হলে সবজি বিক্রয় করতে চাষিদের কোন বেগ পেতে হবে না বলেও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুস আলী শেখ জানিয়েছেন।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, প্রতিদিন ভোর হতে দুপুর পর্যন্ত শতশত কৃষক তাদের ঘেরের পাড়ে গিয়ে বিভিন্ন সবজি তুলতে ব্যস্ত রয়েছেন। সেই সবজি বস্তায় ভরে ভ্যান যোগে কুরোলতলার মোড় বা বাজারে নিয়ে আসছেন। সেখানে কয়েকজন ক্রেতা তা ক্রয় করে বড়-বড় তুম্বু করে তা বস্থায় ভরে ট্রাক বা পিকাপে করে ঢাকা চট্টগ্রাম রাহশাহী ও খুলনার বিভিন্ন বড়বড় বাজরে নিয়ে যাচ্ছেন। চোখ জুড়ানো এ সমস্ত কার্যক্রম দেখে মন আরো মুগ্ধ হয়ে উঠে। এ যেন এক সবজির স্বর্গরাজ্য। সবজি ব্যবসায়ী সিহাব উদ্দিন শেখ, আল আমীন শেখ, নাদিম হোসেন, সুভাস দেবনাথ ও রবিউল ইসলাম সহ একাধিক ব্যবসায়রা জানান, তাদের এই মোড় হতে প্রতিদিন ২৮/৩০টি ট্রাকে করে বিভিন্ন প্রকার সবজি ঢাকা চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর বিভিন্ন বাজারে বিক্রয় করার জন্য পাঠানো হচ্ছে। সবজির মোটা-মুটি মূল্য এখানে একটু কম হলেও চাষিরা খুশি। কারণ তাঁরা ঘেরের পাড়ে বসেই তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় করতে পারছেন।
আনন্দ পাল, শ্যামল পাল, জীবন পাল, রব্বান শেখ ও সিহাব উদ্দিন সহ একাধিক চাষিরা বলেন, মাত্র দেড় দু’মাসে তারা ৫০হাজার টাকা থেকে শুরু করে দেড় লক্ষ টাকার সবজি বিক্রয় করেছেন। শুধু সবজিই নয়, নিচেই রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এবং অন্য মৌসুমে ঘেরের ভিতর ধানের চাষও করেন তাঁরা। শুধু বেতাগা ইউনিয়ন-ই নয়, মানসা-বাহিরদিয়া, শুভদিয়া, নলধা-মৌভোগ, পিলজংগ ও লখপুর ইউনিয়নের প্রতিটি ওর্য়াডের ঘেরের পাড়ে সবজির চাষ হয়েছে বিপুল পারিমানে। এ উপজেলায় প্রায় ৫শত হেক্টর জমিতে শুধুমাত্র ঘেরের ভেড়ীতে সবজি চাষ হয়েছে। প্রতিদিন এই উপজেলা হতে প্রায় ২৫ ট্রাক সবজি দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানী হচ্ছে। সবজি চাষে বাম্ফার ফলন হওয়ায় শতশত কৃষকের ভাগ্য বদলের পাশা-পাশি তারা অর্থনৈতিক ভাবে আগের চেয়ে অনেক স্বাবলম্বী হয়েছেন। শুধু তাই নয়, এই অঞ্চল অর্থনৈতিক ভাবে সম্মৃদ্ধ হতে সক্ষম হয়েছে।
ফকিরহাট উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার মন্ডল, মোঃ সোলায়মান মন্ডল ও বিপুল কুমার পাল জানান, উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয়েছে বেতাগা ও পিলজংগ ইউনিয়নে। এই দুইটি ইউনিয়নে ২শত হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন,এ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রায় ৫শত হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। আমরা চাষিদের অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য সার্বক্ষনিক মনিটরিং ব্যবস্থা এবং স্মল হোল্ডার কম্পিটিটিনেভস প্রজেক্ট (এসএসিপি) এর মাধ্যমে চাষিদের প্রশিক্ষন সহ নানা ধরনের সহযোগীতা করে আসচ্ছি। যে কারনে তারা অর্থনৈতিক ভাবে আরো স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এধারা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি সকল পতিত জমিতে চাষাবাদ করার জন্য স্থানীয় চাষিদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।
এ ব্যাপারে ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বপন দাশ বলেন, আমরা কৃষিকে সর্বো”চ্চ গুরুত্ব দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তাই তাঁরা যাহাতে কৃষি পণ্য সহজেই বাজারজাত করতে পারে সে জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহন করেছি।বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শঙকর কুমার মজুমদার বলেন, ‘বাগেরহাট জেলায় সবজি আবাদের উপর অতিরিক্ত জোর দেওয়া হয়েছে। সরকার সময়মত বীজ, সার ও ঋণ প্রবাহ সচল রেখেছেন। যার ফলে এবছর বিভিন্ন সবজি বিশেষ করে শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। এছর বাগেরহাটের কয়েকটি উপজেলায় ৯৫ হাজার টন সবজি চাষ ফলন হবে। আমরাও কৃষকদের সব ধরণের কারিগরি সহযোগিতা ও বাজারজাত করণের পরামর্শ দিয়েছি।যাতে কৃষকরা লাভবান হতে পারে সেজন্য আমাদের সব ধরণের চেষ্টা রয়েছে ।
(এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির)
বাগেরহাট সংবাদদাতা