স্বরূপকাঠিতে আস্থা সমিতিতে টাকা হারিয়ে মৃত্যুপথ যাত্রী গ্রহকরা – গ্রেফতারের দাবীতে মানববন্ধন

আনোয়ার হোসেন,

স্বরূপকাঠি ( পিরোজপুর) প্রতিনিধি ,

স্বরূপকাঠির সমবায় সমিতিতে রাখা সঞ্চয়ের টাকা ফেরত না পেয়ে একাধিক ব্যক্তি ষ্ট্রোক করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত সপ্তাহে কুড়িযানার অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক হরসিত রায় হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন কারন। গত ২২ আগষ্ট ষ্টোক করে মারা যান শ্বশীদ গ্রামের বাসিন্দা দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার প্রকাশক অ্যাডভোকেট তাপস মজুমদার । তিনিও সমিতিতে লাখ লাখ টাকা জমা রেখে টাকা ফেরত পাচ্ছিলেন না। এজন্য তারা বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তাদের মৃত্যু সমিতিতে টাকার রাখার বিষয়টিও দায়ী।

এছাড়াও বেশ ক’জন ষ্টোক করে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। শতশত মুনুষ নাওয়া খাওয়া ছেড়ে কথিত এনজিও নামক সমিতির কর্মকর্তাদের খুজে বেড়াচ্ছেন। একই ভাবে শতাধিক সমিতিতে টাকা জমা রাখা মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা। তারা জমা করা টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য সমিতির কাছে গেলেও সমিতির মালিক কর্মচারীরা নানা প্রকার ছলচাতুরী করছেন বলে অভিযোগ করেছেন অগনিত সদস্য। তারা প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অভিযোগের পর অভিযোগ দিয়েও কোন সুরাহা পাচ্ছে না।

গতকাল বুধবার সকালে উপজেলা পরিষদের সামনে আস্থা সমবায় সমিতির করফা শাখায় সঞ্চয় জমারাখা একদল ভুক্তভোগী সদস্য মানব বন্ধন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে স্মারক লিপি দিয়েছে।

সম্প্রতি আস্থা সমবায় সমিতি ও আদমকাঠি সমবায় সমিতির মালিকরা গ্রাহকদের প্রায় শত কোটি টাকা নিয়ে গাঢাকা দেওয়ায় গোটা স্বরূপকাঠির প্রায় তিন শতাধিক সমিতিতে দেখা দিয়েছে এ অবস্থা। এ অবস্থার মধ্যেও অন্যান্য সমিতিগুলো ৫-৬ বছরে দ্বিগুণ মুনাফা দেয়ার লোভ দেখিয়ে বেআইনী শাখা অফিস খুলে আমানত সংগ্রহ করলেও সমবায় দপ্তর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ঢালাওভাবে সমিতির রেজিষ্ট্রেশন দিলেও নিয়মিত তদারকির না করায় হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা কামরুল হাসান নিজের দায় এড়িয়ে টাকা খোয়ানো মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

তাপস মজুমদার ও হরসিত রায়ের মত সমিতিতে লাখ লাখ টাকা জমা রেখে ফেরত না পাওয়ায় গ্রামীন ব্যাংকের সাবেক কর্মচারী ভরতকাঠি গ্রামের হীরামন হালদার অবসরের ১৪ লাখ টাকা আস্থা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতিতে জমা রেখেছিলেন। ওই সমিতির পরিচালক বিশ্বজিত হালদার সদস্যদের ৫০-৬০ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে এমন খবর শোনার পরেই ষ্ট্রোক করেন হীরামন হালদার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ছেলে মৃনাল।

একইভাবে আস্থা সমিতির করফা ব্রাঞ্চের ম্যানেজার উত্তম মন্ডল নিজের সঞ্চিত লক্ষাধিক টাকা হারিয়ে এবং সদস্যদের কাছ থেকে নেয়া সঞ্চয়ের টাকার চাপ সামলাতে না পেরে টেণশনে ষ্ট্রোক করে হাসপাতালে ভর্তি হন । মানষিক ভাবে অসুস্থ হওয়ায় স্বজনরা চিকিৎসা করাচ্ছেন ভরতকাঠি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিপুল মন্ডলকে । তিনি ৬ বছরে দ্বিগুন টাকা পাওয়ার আশায় আস্থা সমিতিতে ১৩ লাখ টাকা জমা রেখেছিলেন। আস্থা সমিতিতে ছেলে মেয়েদের জমানো দেড় লাখ টাকা জমা রেখেছিলেন দৈনিক সংবাদের স্বরূপকাঠি প্রতিবেদক ধীরেন হালদার। বীর মুক্তিযোদ্ধা চিত্ত রঞ্জন মিস্ত্রিী জানান তার কাঠ থেকে আদমকাঠি সমিতির পাশ বই দিয়ে ৬০ হাজার টাকা নিয়েছে ব্রাহ্মনকাঠি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আন্দাকুল গ্রামের সুজন মজুমদার। টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে ৪ মাস ধরে ঘুরাচ্ছেন।

বিশাল গ্রামের কমল নামে ওই সমিতির এক সদস্য অভিযোগ করেন, সমিতির মাঠ কর্মী অপর্না মন্ডলের মাধ্যমে আস্থা সমিতিতে তিন লাখ টাকা জমা রেখেছিলেন। ওই গ্রামের ইউপি সদস্য সুজিত কুমার জানান তিনিও চার লাখ টাকা সঞ্চয় রেখেছেন।
সমিতিগুলো বেআইনীভাবে বিভিন্ন স্থানে শাখা অফিস খুলে কোটি কোটি টাকার সঞ্চয় সংগ্রহ করলেও সমবায় দপ্তর বরাবরই নির্লিপ্ত রয়েছে। প্রতিদিন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ প্রশাসনের কাছে সাহায্য প্রর্থনা করছেন। সমিতিগুলো সঞ্চয় সংগ্রহের নামে অবাধে অনিয়ম করলেও কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, এরকম অভিযোগ আগে পাওয়া যায়নি। সমিতির শাখা অফিস খোলার নিয়ম না থাকলেও অনেকের একাধিক অফিস এখনও চলমান আছে কেন, এমন প্রশ্নে কামরুল হাসান বলেন কোথায় কার একাধিক অফিস রয়েছে তা তার জানা নেই।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহাবুব উল্লাহ মজুমদার বলেন, টাকা খোয়ানো সমিতির লোকজনের চাপে অফিস করাই দায় হয়ের দাড়িয়েছে। গোটা উপজেলার সবগুলো সমিতির বিষয়ে খোজ খবর নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট করতে সমবায় কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। তাকে বলা হয়েছে মাঠে যাদের যা টাকা আছে সেগুলো আদায় করে ভুক্তভোগীদের ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে বলা হযেছে। স্মারক লিপি পেয়েছেন। যেসব অভিযোগ পেয়েছি তা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *