রাস্তা-ঘাটে ব্যাঙের ছাতার মতো ওষুধের দোকান ও ফার্মেসীর আড়ালে চলছে মাদক ব্যবসা

হেলাল শেখঃ ঢাকার সাভার আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা-ঘাটে ব্যাঙের ছাতার মতো ওষুধের দোকান ও ক্লিনিক হসপিটাল, ফার্মেসীর আড়ালে বিভিন্ন মাদক ব্যবসা করছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। সাভারে জরুরি সেবা “৯৯৯” নাম্বারে কল করে ফার্মেসির আড়ালে মাদক ব্যবসা করার সময় এক মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন এলাকাবাসী।
শনিবার সাভারের আশুলিয়ায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় রাস্তার পাশে ফুটপাত দখল করে ওষুধের দোকান বসিয়েছে ভুয়া ডাক্তাররা, এর আগে গত (৭ আগস্ট ২০২৩ইং) রাতে এরকম সাভার পৌরসভার ভাগলপুর সিরামিক্স এলাকায় হৃদয় শর্মা ফার্মেসীতে অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ী হৃদয় শর্মা (২৮) কে গ্রেফতার করেছেন পুলিশ। পুলিশ জানায়, ওষুধের দোকানের আড়ালে মাদক বেচা-কেনা করে আসছিলো হৃদয় শর্মা। জরুরি সেবা ৯৯৯-নাম্বারে কল পেয়ে ওষুধের দোকানে অভিযান চালানো হয়, এসময় ওই ওষুধের দোকান থেকে ভারতীয় নিষিদ্ধ ওষুধ ও ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া যায়। এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার (এএসআই) এনায়েত বলেন, হৃদয় শর্মা ওষুধ ব্যবসার আড়ালে মাদক ব্যবসা চালাচ্ছিলেন। ৯৯৯-এ এলাকাবাসীর কল পেয়ে মাদকদ্রব্যসহ তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। হৃদয় শর্মা’র বিরুদ্ধে প্রচলিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এছাড়াও রাজধানী ঢাকা ও সাভার আশুলিয়ায় ব্যাঙের ছাতার মতো ওষুধের দোকান, ভারতীয় নিষিদ্ধ ওষুধ ও ভুয়া ডাক্তার দিয়ে চলে ফার্মেসী ও কিছু ক্লিনিক হসপিটাল ব্যবসা। সূত্রমতে: দেশে প্রায় লক্ষাধিক ভুয়া ডাক্তার রয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হচ্ছে নকল ও ভেজাল ওষুধ, সেই ওষুধ সেবন করে বেশিরভাগ মানুষের রোগ ভালো হচ্ছে না, উল্টো বাড়ছে মানুষের বিভিন্ন রোগ। এর আগে আশুলিয়ার জামগড়া চৌরাস্তায় একটি ফার্মেসী দোকানে অভিযান চালিয়ে বিক্রয় নিষিদ্ধ ২২ ধরনের ভারতীয় ওষুধ জব্দ করেছেন ওষুধ প্রশাসনের একটি দল। কয়েকজন ভুয়া ডাক্তারকে র‌্যাব-৪ কর্তৃক গ্রেফতার করা হলেও অতি দ্রুত আদালত থেকে জামিনে এসে আবারও যা তাই রোগীদের সাথে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করছে। রাস্তা-ঘাটে সবখানেই ওষুধের টেবিল বসিয়ে জমজমাটভাবে নকল ও ভেজাল ওষুধের ব্যবসা করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, আশুলিয়ায় ব্যাঙের ছাতার মতো ওষুধের দোকান দিয়ে নকল-ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি করে অনেকেই লাখ লাখ টাকার মালিক বনে গেছেন। ভুয়া ডাক্তার ও ভেজাল ওষুধের ছড়াছড়ি সারাদেশেই। সূত্র জানায়, গত (১৩ অক্টোবর ২০২১ইং) দুপুর ২টার দিকে আশুলিয়া থানাধীন জামগড়া চৌরাস্তা বাসস্ট্যাণ্ডে সুফিয়া ফার্মেসিতে ওষুধ প্রশাসন কর্তৃক অভিযান পরিচালনা করা হয়। বিক্রয় নিষিদ্ধ ভারতীয় ওষুধ বিক্রিয়ের সময় অভিযান পরিচালনা করেন ঢাকার ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কর্মকর্তারা। এসময় ওষুধ প্রশাসন জামগড়া সুফিয়া ফার্মেসিতে প্রবেশ করে দোকানের ভেতরে থাকা ২২ ধরনের নিধিদ্ধ ওষুধ জব্দ করেন। অভিযান শেষে সুফিয়া ফার্মেসির বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রির কারণ জানতে চেয়ে নোটিশ দিয়েছেন ওষুধ প্রশাসন। এর আগে বিভিন্ন অনলাইন ও সংবাদপত্রসহ গণমাধ্যমে উক্ত ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ হয়। অনুমোদনহীন ভেজাল ওষুধ চেনা কঠিন, রাস্তার পাশে হাট-বাজারে নানারকম ওষুধ বিক্রি হওয়ায় সেই ওষুধ সেবন করে বেশিরভাগ রোগীদের রোগ মুক্তি না হয়ে উল্টো বাড়ছে বিভিন্ন রোগ। ভুয়া ডাক্তার কর্তৃক চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারণা করা হচ্ছে মানুষের সাথে। র‌্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও জেলা-উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তাগণ মাঝে মধ্যে ২-৪জন অবৈধ ওষুধ ব্যবসায়ীকে আটক করেন এবং ভুয়া ডাক্তারকে গ্রেফতার করে জেল জরিমানা করলেও কোনো ভাবেই বন্ধ হচ্ছে না তাদের প্রতারণা। পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে না চিকিৎসা সেবায় অনিয়ম দুর্নীতি।
বিশেষ করে বাংলাদেশে ভুয়া ডাক্তারের সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক। তারা রাজধানীসহ সারাদেশের বিভাগ, জেলা ও উপজেলা এবং থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারণা করছে ভুক্তভোগী রোগীদের সাথে। অনুমোদনহীন ভেজাল ওষুধ রোগীদের কাছে বিক্রি করে সংশ্লিষ্টরা অবৈধভাবে অর্র্থ কামিয়ে বাড়ি গাড়ি করছেন, রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছেন অনেকেই। অন্যদিকে নামী দামি কোম্পানীগুলো ওষুধের গায়ে মূল্য লিখছেন না। ওষুধের গায়ে মূল্য না থাকায় কৌশলে দাম বেশি নিচ্ছেন অনেক দোকানদার। সেই সাথে নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রি করে লাখ লাখ টাকার কারবার করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এক কথায় চিকিৎসা সেবার নামে অনিয়ম দুর্নীতির কারণে সরকারের বদনাম হচ্ছে। নকল ও ভেজাল ওষুধে মানবদেহে রোগ ভালো না করে উল্টো রোগীর খারাপ পরিণতি হচ্ছে। বেশিরভাগ ওষুধ সেবন করে রোগ ভালো হচ্ছে না। রাস্তা-ঘাটে ও মুদি দোকানেও ওষুধ বিক্রি করতে দেখা যায়। ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেও অনেকেই ডাক্তার সেজে ওষুধের দোকান খুলে বসে চিকিৎসা করছেন। ওষুধ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই তারাও এখন কথিত ডাক্তার, এর কারণে চিকিৎসা সেবায় বেশি জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে অনেকেই জানায়। শুধু সচেতনতার অভাবে মানুষের শরীর স্বাস্থ্য খারাপ হচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকার ধামরাই ও সাভার-আশুলিয়ায় প্রায় ১৫ হাজারের বেশি ওষুধের দোকান রয়েছে, তাদের অনেকেরই সঠিক কাগজপত্র নেই। অনেকেরই বৈধ কাগজপত্র থাকলেও তার মেয়াদ নাই। সেই সাথে ক্লিনিক ব্যবসায় বিভিন্ন টেস্টের নামে অবৈধ ভাবে ভোক্তাকে ঠকানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
র‌্যাব জানায়, ভুয়া চিকিৎসক নিজেকে ডাক্তার হিসেবে উল্লেখ করে আসে। রোগ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি থাকার কথাও অনেক ব্যবস্থাপত্রে লিখেন এবং অনুমোদনহীন ভেজাল ওষুধ লিখে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে। ক্লিনিক ও হাসপাতালের সামনে ওষুধ কোম্পানির গাড়ী-মটরসাইকেল দেখলে মনে হয় সেখানে মটরসাইকেলের বাজার লেগেছে। এ বিষয়ে র‌্যাব ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন জানায়, উক্ত ব্যাপারে অভিযান অব্যাহত আছে।
রাজধানী ঢাকার ওষুধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক সৈকত কুমার বলেন, ভারতীয় নিষিদ্ধ ওষুধ জব্দ করাসহ নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, নিষিদ্ধ ওষুধ জব্দ ও ভুয়া ডাক্তারদের গ্রেফতার করাসহ অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান ওষুধ প্রশাসন ও র‌্যাব।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *