হরিণাকুন্ডুর মেধাবী ছাত্রীর মৃত্যুর নেপথ্যে শ্লিলতাহানী হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে লিখে গেল আত্মহননের কারন

আতিকুর রহমান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার শ্রীফলতলা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী নিলীমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল বখাটে রাসেল। নিলীমা তার প্রস্তাব প্রত্যাাখান করায় তাকে কৌশলে অপহরণের ছক কষে সে। এক পর্যায়ে সফলও হয়। নিলীমার কাছের বান্ধবী সুমাইয়াকে দিয়ে ফোন করে গত পহেলা জুলাই ডাকিয়ে আনে রাসেল। সুমাইয়ার কাছে পৌছে দেবার কথা বলে প্রথমে হরিণাকুন্ডুর আমেরচারা বাজারের রিপন মার্কেট ও পরে খাজুরা হয়ে নিলীমাকে জোহান পার্কে তাকে নিয়ে আসে রাসেল। সেখানে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে নিলীমার শ্লিলতাহানী ঘটায়। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা কচি মনে দাগ কাটে। ভুলতে পারে না নিলীমা। বাড়ি পৌছে আত্মহননের সিদ্ধান্ত নেয়। হাসপাতালের বিছানায় অসুস্থ নিলীমা পুরো ঘটনা একটি সাদা কাগজে লিখে রাখে। গত ৮ জুলাই মধ্যরাতে এই মেধাবী ছাত্রী মৃত্যু পেয়ালায় চুমুক দিয়ে অপমান ও ক্ষোভ থেকে চীরদিনের মতো মুক্ত লাভ করে। নিলীমার লিখিত বক্তব্য ও পরিবারে দায়ের করা এজাহার সুত্রে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পরিচয় হয় হরিনাকুন্ডু উপজেলার মাঠ আন্দুলিয়া গ্রামের ওলিয়ার রহমানের ছেলে রাসেলের সাথে। রাসেল বিভিন্ন সময়ে নিলীমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসলেও তাতে সম্মতি দেয়নি নিলীমা। ঈদের ৩য় দিন ১ জুলাই নিলীমার বান্ধবী সুমাইয়াকে দিয়ে ফোন করে জোহান পার্কে বেড়াতে যাবার কথা বলে ডেকে আনে রাসেল। কিন্তু সুমাইয়া দৃশ্যপট থেকে সরে যায়। নিলীমা বখাটে রাসেলের খপ্পরে পড়ে। ঘটনার দিন সকাল ১০ টার দিকে নিলীমা পার্কে নিয়ে যায় রাসেল। পার্কে গিয়ে নিলীমা রাসেলের প্রতারণা বুঝতে পেরে পালানোর চেষ্টা করে। এসময় অসহায় নিলীমার কাছে থাকা সরকারের দেয়া ট্যাবটি জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। পার্কের নির্জন স্থানে নিলীমাকে নিয়ে তার শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি ঘটায় রাসেল। এতেও ক্ষ্যন্ত হয়না রাসেল। পার্ক থেকে রাসেলের নিজ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে একান্তে সময় কাটানোর প্রস্তাব দেয় লম্পট রাসেল। অনেক কৌশল ও বুদ্ধি খাটিয়ে রাসেলের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে সন্ধ্যার দিকে বাড়ি পিরে আসে নিলীমা। এদিকে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত পরিবারের লোকজন নিলীমাকে না পেয়ে খোজাখুজি করতে থাকে। বাড়ি পৌছে তার সঙ্গে লম্পট রাসেলের করা ব্যবহার ভুলতে পারে না নিলীমা। বাড়ি ফিরে বিবেকের দংশনে বার বার আহত হতে থাকা নিলীমা ঘরে থাকা ঘাস মারা কীটনাশক সেবন করে। পরিবারের লোকজন নিলীমাকে হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। খবর পেয়ে রঘুনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বসির উদ্দীন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পুরো ঘটনা সম্পর্কে অবগত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ জুলাই মধ্যরাতে মৃত্যুবরণ করে নিলীমা। এ ঘটনায় নিলীমার পিতা আব্দুর রাজ্জাক ব্যাপারী বখাটে রাসেল ও বান্ধবী সুমাইয়াকে আসামী করে একটি মামলা করেন, যার মামলা নং ৫। স্থানীয় চেয়ারম্যান বসির উদ্দীন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ভাবে ডেকে নিয়ে একজন মেধবী ছাত্রীর সম্মানহানী ঘটনা খুবই দুঃখজনক। তিনি আত্মহত্যা প্ররোচনাকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানান। মামলার বাদী আব্দুর রাজ্জাক জানান, সুমাইয়ার কারণেই তার মেয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। সে ডেকে নিয়ে বখাটের হাতে তুলে দিয়েছে নিলীমাকে। এখন একটি মহল সুমাইয়াকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। তিনি বখাটে রাসলে ও সুমাইয়ার গ্রেফতারের দাবী করেন এ ব্যাপারে হরিণাকুন্ডু থানার এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অনিষ মন্ডল জানান, মামলা রেকর্ডের পর আসামীদের গ্রেফতারে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। আশা করা যায় খুব দ্রæতই বখাটে রাসেল ও সুমাইয়াকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

ঝিনাইদহ
আতিকুর রহমান।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *