বখাটের উৎপাতে দিশেহারা স্কুল ছাত্রী :ছোট বোনকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ মামলা হয়েছে গ্রেপ্তার নিয়ে চলছে গড়িমসি

মোঃ বাবুল হোসেন পঞ্চগড়

পঞ্চগড়ে বখাটের উৎপাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে দশম শ্রেণি পড়–য়া এক স্কুল ছাত্রী। স্কুল যাতায়াত তার এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। বখাটেদের ক্রমাগত হুমকি আর পথঘাটে উত্যক্ত করায় ওই স্কুল ছাত্রীর লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হয়েছে। প্রতিদিন চরম হয়রানি শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছে দরিদ্র পরিবারটি।
ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের টেংগনমারী এলাকার বাড়ি ওই স্কুল ছাত্রী । বাবা দরিদ্র জেলে। মানুষের জায়গায় ভাঙাচোরা একখানি ঘর তুলে থাকেন তারা। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থাতেই স্কুল যাতায়াতের পথে প্রেম নিবেদনসহ উত্যক্ত করতে থাকে প্রতিবেশি যুবক হৃদয় হোসেন (২২)। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করতো আরও তিন জন যুবক। তারা হলেন ওই এলাকার এলাকার সুজন (২২), হৃদয়ের ছোট ভাই রিপন (১৭) ও সাইফুল্লাহ (১৬)। দিন যতই এগুতো থাকে ততই বাড়ে উত্যক্তের পরিমাণ। গত ৬ মাস আগে একদিন ওই স্কুল ছাত্রীর বাবা মা কাজে গেলে এই সুযোগে বাড়িতে ঢুকে হৃদয় ওই স্কুল ছাত্রীর শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে। পরে সে চিৎকার করলে পালিয়ে যায় হৃদয়। এ ঘটনায় পঞ্চগড় সদর থানায় অভিযোগ দেয়া হয়। অভিযোগ অনুযায়ী দুই পক্ষকে নিয়ে থানায় বসে শালিস করে সমঝোতা করে দেয়া হয়। সেই সাথে ওই যুবককে ধাক্কামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের জিম্মায় দেয়া হয়। বলা হয় এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে সাথে সাথেই তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে। এরপর কিছুদিন থেমে ছিলো তাদের উৎপাত। তবে তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। গত ২৪ মে হৃদয়ের ছোট ভাই রিপন, সাইল্লাহ ও সুজন ওই স্কুল ছাত্রীর ৪ বছরের ছোট বোন ও তার চাচার ৬ বছরের ছেলেকে একটি নির্মাণাধীন ঘরে নিয়ে গিয়ে তাদের বিবস্ত্র করে যৌন মিলনে প্রস্তুত করে । আর তারা মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। এক পর্যায়ে শিশুরা কান্নাকাটি শুরু করলে তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে পালিয়ে যায় তিন যুবক। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে ১ জুন পঞ্চগড় সদর থানায় মামলা করে ওই স্কুলছাত্রীর বাবা। মামলার পর হুমকি ধামকি আরও বেড়ে যায়। ওই স্কুল ছাত্রী স্কুলে যাওয়ার পথে উত্যক্ত ও তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়া হয়। বর্তমানে ওই স্কুল ছাত্রীর স্কুল যাতায়াত এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। গত ৬ জুন পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে ওই স্কুল ছাত্রী ও তার বাবা বিষয়টি তুলে ধরে সহযোগিতা কামনা করেন। ওই স্কুল ছাত্রী বলেন, হৃদয়, সুজন, রিপন ও সাইফুল্লাহ আমাকে দীর্ঘদিন ধরে উত্যক্ত করে আসছে। তাদের অত্যাচারে আমি স্কুলে যেতে পারছি না। তারা আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে। আমার পরিবারকে প্রতিদিন হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমার ছোট বোনকে বিবস্ত্র করে অশ্লিল ভিডিও তৈরি করেছে। এরা সবাই এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত। মদ গাঁজা খায়। এরা স্কুলছাত্রীদের উত্যক্ত তো করেই স্কুলের মেডামদের সাথেও বাজে আচরণ করে।
ওই স্কুল ছাত্রীর বাবা বলেন, আমি মামলা করার পরও তাদের অত্যাচার থেকে মুক্তি পাচ্ছি না। রাত বিরাতে তারা আমার বাড়ির চারপাশে দলবল নিয়ে ঘুরাঘুরি করে। ভয়ে আতঙ্কে আমি কাজে যেতে পারছি না। আমার মেয়েটার পরীক্ষা যে কয়দিন ছিলো আমি নিয়ে গেছি নিয়ে আসছি। আমি দিন আনি দিন খাই। প্রতিদিন মেয়ের পিছনে সময় দিলে বাড়িতে চুলা জলবে না। তাই এখন তার স্কুল যাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু পরীক্ষার দিনগুলোতে আমি নিয়ে যাই নিয়ে আসি। তবে তিনি ক্ষোভের সাথে জানান, আসামীরা সবাই বাড়িতেই থাকে কিন্তু পুলিশ তাদের ধরছে না। মামলার র্দীঘ দিন পেরিয়ে গেলেও কোন আসামীকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। তারা বর্তমানে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাসায় অবস্থান করছে। আমি কি তাহলে ন্যায় বিচার পাবোনা।
ওই স্কুল ছাত্রীর মা বলেন, আমরা গরিব মানুষ বলে দিনের পর দিন আমাদের এমনটা করা হচ্ছে। ওই ছেলেরা সবাই বখাটে। এলাকার সবাই তাদের বিষয়ে জানে। মেয়ের নিরাপত্তার চিন্তার রাতে সবাই এক ঘরে ঘুমাই।
রুপালী আক্তার নামে প্রতিবেশি এক নারী বলেন, হৃদয় সহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা আমাদেরকে অত্যাচার করতো, এখনও করে। তাদের কারণে আমরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। এখন আমাদের প্রতিবেশি এক মেয়েকে তারা উত্যক্ত করছে। মেয়েটি স্কুলে যেতে পারছেনা। তারা কি খুবই ক্ষমতাশালী, তাদের অন্যায় দিন দিন বাড়ছে। আমরা কি কোন ন্যায় বিচার পাবনা।
লাঙ্গলগাঁও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিক হোসেন বলেন, ওই স্কুল ছাত্রী এমন সমস্যা পড়েছে আমরা জানতাম না। আগে জানলে আমরা সব ধরণের সাপোর্ট দিতাম। সে নিয়মিত স্কুলে না আসায় আমরা বার বার খোঁজ নিয়েছি। আমরা তার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছি। এখন সে পরীক্ষাগুলো দিচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে হৃদয় হোসেন বলেন, আমি গাড়ি চালাই বাড়িতেই থাকি না। তারা যে অভিযোগ করেছে সব মিথ্যা। আমি মেয়েদের উত্যক্ত করি কি না এলাকায় মানুষকে জিজ্ঞাসা করলেই জানতে পারবেন।
পঞ্চগড় সদর থানার উপ-পরিদর্শক ভবেশ চন্দ্র পাল বলেন, এর আগে ওই স্কুল ছাত্রীকে উত্যক্ত করার ঘটনায় থানায় বসে উভয়পক্ষ সমঝোতা করে। সম্প্রতি তার ছোট বোনকে বিবস্ত্র করে অশ্লীল ভিডিও তৈরির একটি মামলা করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। ওই মামলায় আসামীদের গ্রেপ্তাদের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আর স্কুল ছাত্রীকে উত্যক্ত করার বিষয়ে নতুন করে তারা অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, বখাটের উৎপাতে স্কুল যাতায়াতে সমস্যার বিষয়টি আমরা জানার পর ওই লাঙ্গলগাঁও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে ওই স্কুল ছাত্রীর বাড়িতে পাঠানো হয়। তিনি তার সমস্যার কথা শুনেছেন। পরে আমরা এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *