স্বামীর পর ছেলে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন গালিবের মা

মোঃ হায়দার আলী রাজশাহী থেকে।।ফুটবল খেলা শেষে পদ্মা নদীতে গোসল করতে নামে রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর প্রথম বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী।

শনিবার (১০ জুন) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে মহানগরীর দরগাপাড় এলাকার মৃত গাজী মইদুদ্দিনের ছেলে রিফাত খন্দকার গালিব ও মেহেরচন্ডী এলাকার সাইদুর রহমানের ছেলে সারোয়র সায়েম গোসল করা অবস্থায় পানিতে তলিয়ে গিয়ে নিখোঁজ হন।

দিনভর অভিযান চালিয়েও প্রথমদিন কারো লাশ উদ্ধার করতে পারেনি রাজশাহী ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। পদ্মায় নিখোঁজের খবরে শোকের ছায়া নেমে আসে সায়েম ও গালিবের পরিবারে।

রিফাত খন্দকার গার্লিব তার পরিবারের একমাত্র সন্তান। বাবা ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের দিকে হঠাৎ মৃত্যু বরণ করে। এরপর থেকেই একমাত্র সন্তানকে নিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন মা লাভলী। এসএসসি পাশ করার পর রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি করানো হয়। শনিবার ছুটির দিন থাকায় পদ্মানদীর চরে বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলা শেষে নদীতে গোসল করতে নেমে মৃত্যু হয় গালিব ও তার বন্ধু সায়েমের।

শনিবার পদ্মার পারে দুই পরিবারের স্বজনরা আহাজারি করতে থাকে। গালিব পরিবারের একমাত্র সন্তান হওয়ায় বেশী আহাজারি করতে দেখা যায় তার স্বজনদের। প্রথমদিন লাশ না পেয়ে ফিরে যান বাড়ীতে। পরদিন রোববার সকালে সায়েমের লাশ পাওয়া যায়। ততক্ষণে লাশের সন্ধান মেলেনি গালিবের। এতে করে তার পরিবার বাকরুদ্ধ হয়ে নদীর পারে লাশের অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকে গালিবের মাসহ স্বজনরা।
প্রচন্ড রোদ আর ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা করে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীদের সাথে ছেলের লাশ পাওয়ার আশায় নৌকায় ঘুরতে মা লাভলী। অপরদিকে পদ্মার কিনারে অপেক্ষায় তার স্বজনরা।

শনিবার ও রোববার গালিবের ফুফু তনিমা বেগমকে আহাজারি করতে দেখা যায়। লাশ পাওয়ার আশায় ছুটে বেড়ান নদীর কিনারের এপাশ থেকে ওপাশে। অপর দিকে মা লাভলী নৌকায় বসে থাকে নির্বাক চোখে। ফুফু তনিমা বেগম আহাজারি করে বলেন, এভাবে কেনো হারিয়ে গেলে বাবা ? তোমার কোন অসুখ হলে ডাক্তার দেখাতাম ভালো হয়ে যেতে ।

গালিবের ফুফাতো বোন রিক্তা পারভিন বলেন, গালিব পরিবারের একমাত্র সন্তান। বাবা কলেজ শিক্ষক ছিলেন। তিন বছর আগে মৃত্যু বরণ করলে তার মা একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বেঁচে ছিলেন। স্বপ্ন দেখতেন ছেলেকে নিয়ে ভালোভাবে বেঁচে থাকার। কিন্তু সেই স্বপ্নও ভেঙে গেলো। কি নিয়ে বেঁচে থাকবে এই পৃথিবীতে এটাই তার বড় চিন্তা। ছুটির দিন হওয়ায় খেলাধূলা করতে যেতে নিষেধ করেননি কলেজ শিক্ষিকা মা লাভলী। কিন্তু এখানে এসেই যে এমন পরিণতি হবে তা জানা ছিলো না।

দুপুর ১২ টার দিকে গালিবের লাশও উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এই খবর শোনার পর গালিবের মা ও তার স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। আশেপশের বাতাস ভাড়ী হয়ে উঠে আর চিৎকার করে গালিবকে ফিরে পাবার আকুতি করে।

গালিবের মা লাভলী একরকম বাকরুদ্ধ অবস্থায় বলেন, আমার বেঁচে থাকার শেষ সম্পদ টুকুও শেষ হয়ে গেলো।

এই ঘটনার পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আশের পাশের লোকজন গালিবের মরদেহ এক নজর দেখার জন্য ভীড় জমাতে দেখা গেছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহী সদর দপ্তরের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবদুর রউফ জানান, ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিটের মোট ছয়জন ডুবুরি উদ্ধার কাজ চালিয়ে গালিবের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে সাইমের লাশ পাওয়া যায়। গালিবের লাশ পুলিশের মাধ্যমে পরিবারকে বুঝিয়ে দিয়ে উদ্ধার অভিযান বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।

মোঃ হায়দার আলী
রাজশাহী।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *