মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম, তেতুলিয়া প্রতিনিধিঃ তেঁতুলিয়ায় ভালনারেবল উইমেন বেনেফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির বিনামূল্যে চাল বিতরণে কার্ডধারী উপকারভোগী মহিলাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৮০ টাকা হারে আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়ন পরিষদে এ ধরনের টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০২৩-২০২৪ ভিডব্লিউবি চক্রের আওতায় দুই হাজার ৫৬৭ জন মহিলা এ সুফল ভোগ করছেন। এ কর্মসূচির আওতায় প্রতিজন মহিলা তাদের পরিবারের জন্য মাসে বিনামূল্যে ৩০ কেজি হারে চাল পেয়ে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নে ৪৬৪ জন মহিলা এই ভিডব্লিউবি কার্ড পেয়েছেন। কার্ডধারীদের অভিযোগ কার্ড বিতরণের সময় তাদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে ট্যাক্স নিয়ে এই কার্ড বিতরণ করেন।
চলতি মাসের গত বৃহস্পতিবার (১১ মে) ও রোববার (১৪ মে) দেবনগড় ইউনিয়নে চাল বিতরণের সময় সরে জমিনে গিয়ে জানা যায়, উপকারভোগীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৮০ টাকা হারে আদায় করা হয়েছে এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে গত সোমবার (১৫ মে) পরিষদ চত্বর এলাকায় টাকা আদায় না করে নিদির্ষ্ট ইউপি সদস্যগণ যার যার ওয়ার্ডের কার্ড ধারীদের কাছ থেকে এই টাকা আদায় করেছেন বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সংরক্ষিত ইউপি সদস্য মোছাঃ রুপি বেগম বলেন, ‘বস্তা বাবদ কুলি খরচের জন্য এই টাকা তোলা হয়েছে। কেননা ভাই, লোড-আনলোড, চৌকিদারদের ভাত খাওয়া এবং ট্যাগ অফিসারকে ভাত খাওয়ার জন্যই এই টাকা নেয়া হয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্রাম পুলিশ জানান, ‘আমরা শুনছি বস্তা বাবদ এই টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। প্রথম দিন ১,২ ও ৩নং ওয়ার্ড, ২য় দিন ৪ ও ৫নং ওয়ার্ড এরপর ৩য় দিন ৬,৭ ও ৮নং ওয়ার্ড চাল বিতরণ হয়েছে। তবে প্রথম দিন প্রকশ্যে আমাদেরকে ২০ টাকা হারে চার বস্তায় ৮০টাকা করে আদায় করতে বলেন ইউপি কর্তৃপক্ষ। এই টাকা তোলা যাবে কিনা তা আমরা জানিনা। তবে ২য় দিন নিজ ওয়ার্ডের মেম্বারগণ এই টাকা আদায় করেন।’
এদিকে ওই ইউনিয়নের সুরিগছ গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই উপকারভোগী মহিলা জানান, ‘বস্তার তানে হামারঠে বিশ টাকা করে নিছে।’
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের চলতি বছরের গত জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখের এক নোটিশের আদেশের মাধ্যমে জানা যায়, ভিডব্লিউবি খাদ্যের পরিবহন ব্যয় বরাদ্দ সমতল এলাকায় দুরুত্বের বিবরণ অনুযায়ী প্রতি মেঃটন চালের জন্য ১-১০ কিঃমি পর্যন্ত ৬০০ টাকা, ১১-২০ কিঃমি পর্যন্ত ৭০০টাকা এবং ২১ কিঃমি ও তদুর্ধ্ব ৭৫০টাকা প গড়ের পাঁচটি উপজেলায় এই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার ও ভিডব্লিউবি দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাক অফিসার মোঃ আরমান ওয়াহিদ আনসারী বলেন, ‘আমি এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছি এর ফাঁকে ট্যাক অফিসারের দায়িত্বও পালন করতে হয়। তবে টাকা আদায়ের বিষয়ে আমি জানিনা।’
এ বিষয়ে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা করুনা কান্ত বলেন, গাড়িভাড়া ও লোড-আনলোড বাবদ সব খরচের টাকা সরকারিভাবে দেওয়া হয়। উপকারভোগী মহিলাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি সম্পূর্ণ অনৈতিক।
ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ছলেমান আলী টাকা আদায়ের বিষয়ে স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা যে টাকা পায় তাতে পোশায় না, মাসে ২ হাজার টাকা করে বছরে ১২হাজার টাকা পায়। এতে গাড়িভাড়া, লোড-আনলোড ও চৌকিদারদের খাওয়া এবং ট্যাক অফিসার রয়েছেন। তাই গাড়ি ভাড়া ও লোড-আনলোডের খরচ বাবদ চার মাসে ২০টাকা হারে ৮০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা জানান, ‘বিষয়টি আপনার কাছ থেকে জানতে পারলাম। আমি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিব।’
মুুহম্মদ তরিকুল ইসলাম

Leave a Reply