মিঠুন সাহা, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।
আগামী ৪ মে শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা ২৫৬৭ বুদ্ধাব্দ উপলক্ষে পানছড়িবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার আর্য্যমিত্র বৌদ্ধবিহার,তালতলা (জ্যোতির্ময় কার্বারী) অধ্যক্ষ ভেন.সুদর্শী স্হবির।
শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি জানান,
বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বৈশাখী হল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র একটি দিন । বৈশাখী পূর্ণিমা দিনটি বুদ্ধের ত্রি-স্মৃতি বিজড়িত দিন। এই পবিত্র পূর্ণিমা তিথিতে মহামানব গৌতম বুদ্ধ জন্ম গ্রহণ করেছিলেন,এই দিনে বুদ্ধত্ব ( বৌধি জ্ঞান বা সিদ্ধি) লাভ এবং মহা-পরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন। মহামানব গৌতম বুদ্ধ ৫৬৩ খ্রিষ্টপূর্ব নেপালে লুম্বিনী কাননে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। গৌতম বুদ্ধের পিতা ছিলেন রাজা শুদ্ধোধন ও মাতা ছিলেন রানী মায়াদেবী। বুদ্ধত্ব লাভের পর মহামানব গৌতম বুদ্ধ পৃথিবীরতে অহিংসার বাণী প্রচার করেছিলেন। বুদ্ধ বলেছেন অহিংসা পরম ধর্ম, ত্যাগই সুখ, ভোগই দুঃখ, জগতে সকল প্রাণী সুখী হোক। বুদ্ধ দর্শন মতে এই জীব জগৎ সংসার দুঃখ,দুঃখের মূল: জন্ম ভব। এই জন্ম ভবের প্রতিত্য সমুৎপাদ মৌলিক দ্ধাদশ নিদান ১. অবিদ্যা ২. সংস্কার ৩.বিজ্ঞান ৪.নামরুপ ৫.ষড়ায়তন ৬.স্পর্শ ৭. বেদনা ৮. তৃষ্ণা ৯. উপাদান ১০. ভব ১১. জন্ম-মৃত্যু ১২. দুঃখের সংজ্ঞা, যেমন-জন্ম দুঃখ,জ্বরা দুঃখ,ব্যাধি দুঃখ,মুত্যু দুঃখ,প্রিয় বিয়োগ দুঃখ,অপ্রিয় সংযোগ দুঃখ ইত্যাদি । এই দুঃখ থেকে মুক্তির পথ অন্বেষন করতে গিয়ে গৌতম বুদ্ধ ছয় বছর কঠোর তপস্যা সাধনা বা ধ্যান করে ছিলেন। এই দুঃখ থেকে মুক্তি লাভের উপায় চারি আয্য সত্য এবং আয্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ পথ সন্ধান পেলেন। চারি আয্য সত্য দর্শন-১. দুঃখ ২.দুঃখের কারণ ৩. দুঃখ নিরোধ ৪. দুঃখ নিরোধের পথ। বুদ্ধের দর্শন মতে,এই জীব জগৎ ও ৩১ লোকভূমি দুঃখ সমুদ্র, দুঃখ ছাড়া কিছু নাই, এটা চিরন্তন দুঃখ আয্য সত্য। দঃখের কারণ,এই দুঃখের পিছনে মূল কারন খুজতে গিয়ে বুদ্ধ মানুষের-লোভ,দ্ধেষ,তৃষ্ণা,হিংসা,অজ্ঞানতা,অনিয়ন্ত্রিত কামনা-বাসনা এবং ভবসংসারের প্রতি আসক্তিকে দুঃখের মুল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। দুঃখ থেকে নিবৃত্তির জন্য লোভ,দ্ধেষ,তৃষ্ণা,হিংসা,কামনা-বাসনা পরিত্যাগ করে ধ্যান সাধনার মাধ্যমে দুঃখ নিরোধ জ্ঞান ও দুঃখ নিরোধের আর্য্য অষ্টঙ্গিক মার্গ পথ সন্ধান পান। দুঃখ মুক্তির আর্য্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ পথ ১.সম্যক দৃষ্টি (সম্যক ধারনা বা চিন্তা)২.সম্যক সংকল্প ৩.সম্যক বাক্য ৪.সম্যক আচারণ ৫.সম্যক জীবিকা ৬. সম্যক প্রচেষ্টা ৭. সম্যক স্মৃতি (মনন) ৮. সম্যক সমাধি (একাগ্রতা)। এই ৮ টি উপায়কে একত্রে বলা হয় আর্য্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ পথ বা রাস্তা। এই পথ অনুসরণ জন্ম,জ্বরা,ব্যাধি দুঃখ থেকে নির্বাণ প্রাপ্তি সম্ভব। এই চারি আর্য্য সত্য ও অষ্টাঙ্গিক মার্গ পথ ভিক্তি করেই বৌদ্ধ ধর্মের গৃহীদের পঞ্চ নীতি, অষ্টনীতি,শ্রামনের দশ নীতি,ভিক্ষুদের ২২৭ নীতি এবং দান,শীল, ভাবনা।
বুদ্ধের নীতি শিক্ষা ও ত্যাগ সাধনার ধারা মানুষের মধ্যে পারস্পরিক স্নেহ,ভালবাসা,আন্তরিকতা, মায়ামমতা, দানশীল ক্ষমা-মৈত্রী,উদারতা সহানুভূতি, সমবেদনাসহ প্রভৃতি সদাচরণ শিক্ষা দেয়। পবিত্র বুদ্ধ পূর্নিমার দিনে জাতি বর্ণ ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে জানায় আন্তরিক শুভেচ্ছা। পবিত্র বুদ্ধ পূর্ণিমার মধ্যে দিয়ে সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল পরম সুখ ও শান্তি। পৃথিবীতে হানাহানি, মারামারি,অরাজকতা,যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ হয়ে প্রতিটি মানুষ,জাতী,গুত্র সম্প্রদায় একে অপরের প্রতি মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হোক।
.
সব্বে সত্ত্বা সুখিতা হোন্তু(জগতের সকল প্রাণী সুখি হোক)
.
ভেন.সুদর্শী স্হবির
অধ্যক্ষঃ আর্য্যমিত্র বৌদ্ধবিহার। তালতলা (জ্যোতির্ময় কার্বারী পাড়া) পানছড়ি,খাগড়াছড়ি
.সহ-সভাপতি,পার্বত্য ভিক্ষসংঘ বাংলাদেশ। পানছড়ি উপজেলা শাখা,খাগড়াছড়ি পার্বত্যজেলা।
Leave a Reply