January 15, 2025, 8:54 am

বিজ্ঞপ্তি :
বিশেষ সতর্কীকরন - "নতুন বাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত সকল সংবাদের দ্বায়ভার সম্পুর্ন প্রতিনিধি ও লেখকের। আমরা আমাদের প্রতিনিধি ও লেখকের চিন্তা মতামতের প্রতি সম্পুর্ন শ্রদ্ধাশীল। অনেক সময় প্রকাশিত সংবাদের সাথে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে। তাই যেকোনো প্রকাশিত সংবাদের জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। নতুন বাজার পত্রিকা- বাংলাদেশের সমস্ত জেলা, উপজেলা, ক্যাম্পাস ও প্রবাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! বিস্তারিত: ০১৭১২৯০৪৫২৬/০১৯১১১৬১৩৯৩
শিরোনাম :
সুজানগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ উন্নত দেশ গড়ে তুলতে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তুলতে হবে- ইউএনও রাশেদুজ্জামান ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে কাঠ রিফাইন কারখানার বয়লার বিস্ফো-রণে দুইজন তানোরে জামায়াতের রাজনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন নজির হোসেন ফাউন্ডেশন নারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা ও টেকসই উন্নয়নে টিম চিহ্নের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নলছিটিতে জিয়া সাইবার ফোর্সের উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠন থানচিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এসবিএম ইট ভাটাকে জরিমানা সার ও বীজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীদের ডিলারশিপ বাতিল হয়ে যাবে-স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা জমি নিয়ে বিরোধ, প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে বিএনপি নেতা নিহত
পথে বসেছে সৌদিতে সড়কে নিহত সাগর ও মোজাম্মেলের পরিবার

পথে বসেছে সৌদিতে সড়কে নিহত সাগর ও মোজাম্মেলের পরিবার

মোঃ খাইরুল ইসলাম মুন্না বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে ওমরাহ পালন শেষে মদিনা থেকে মক্কায় ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মো. মোজাম্মেল হোসেন মৃধা গত ২৩ বছর আগে পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন সৌদি আরবে। সেখানে রেস্টুরেন্টের ব্যবসা গড়ে তুলেছিলেন। আর সেখানে ভাগ্য পরিবর্তনে গত দের বছর আগে কাজে যোগ দিয়ে ছিলেন শ্যালক মো. সাগর জোমাদ্দার (৪৫)। কিন্তু তাদের সকল আশা ও স্বপ্নই অধরা রয়ে গেল।
রবিবার (৩০ এপ্রিল) সকালে বেতাগী ও মির্জাগঞ্জ দুই বাড়িতে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে বাকরুদ্ধ তাদের দুই পরিবার। এক মাস চারদিন পর প্রিয় জনের লাশ ফিরে পেয়ে চোখের জলে বিদায় দিলেও শোকে মনে হয় এমন, চোখের পানি যেন শুকিয়ে গেছে তাদের। বাড়িতে ছোট টিনের ঘরে বসবাস করেন নিহত সাগর জোমাদ্দারের পরিবার।

সাত বছর প্রেমের পর দুই বছর আগে শান্তা আক্তারের সাথে বিয়ে হয় সাগর জোমাদ্দারের। বিয়ের পর মাত্র দুই মাস একসাথে সংসার করেন তারা। এরপর সৌদি প্রবাসী দুলাভাইয়ের রেস্টুরেন্টে কাজে যোগ দেন সাগর।

বিলাপ বিলাপ করতে করতে শান্তা আক্তার জানান,‘ ভাগ্য বদলের জন্য স্বামী সৌদি গিয়ে অবশেষে দেশে ফিরলো লাশ হয়ে। আমাদের সব আশা আজ শেষ হয়ে গেছে। আমি এখন কোথায় যাবো, কি করবো ? চিৎকার করে কাঁদছিলেন মেঝ ভাই মো: সুমন জোমাদ্দার।

এ সময় তিনি বলেন, পরিবারের উপর্জণক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে আজ আমরা দিশেহারা ও চরম অসহায় হয়ে পড়েছি। সেখানে কয়েকমাস আগে দুলাভাই মোজাম্মেলের ব্যবসায় লোন ও ধারদেনা করে যে অর্থ বিনিয়োগ করে ছিলাম। কিন্ত এখন তা সব হারিয়ে নি:স্ব ও পথে বসে গেছি।’মোজাম্মেল নিজের জমি বিক্রি ও এনজিও থেকে ঋণ তুলে সৌদিতে হোটেল ব্যবসা শুরু করে। দিনে দিনে ব্যবসার পরিধি আরও বৃদ্ধি করেন। এতে দীর্ঘদিন যাবত প্রবাসে থাকলেও শেষ করতে পারেন নি ঋণের বোঝা। একদিকে প্রবাসে পরিবারের উপার্জনক্ষম মানুষের মৃত্যু অপরদিকে মাথার উপর ঋণের বোঝা। এসব চিন্তায় অনেকটা নির্বাক এই দুটি পরিবারের মানুষগুলো।

মোজাম্মেলের স্ত্রী রুবিনা ইয়াসমিন জানান, মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই তাদের সবকিছু যেন শেষ হয়ে গেছে। তারা কিভাবে এই ঋণ মুক্ত হবে, পরিবারের অন্য সদস্য ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ ভাবিয়ে তুলছে তাদের। এথন তাদের রোজেরই বাজার হয়না। মানবিক বিবেচনায় সৌদি সরকারের কাছে তিনি আর্থিক সহায়তার দাবি করেন।

মোজাম্মেলের ছোট মেয়ে রানিম জাহান অন্তু বলেন, ‘আমি যখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি ৮ বছর হয়, তখন আমার বাবা সৌদি যান। বাবাকে হারিয়ে এখন চরম অনিশ্চয়তায় কাটছে আমাদের দিন।

নিহতের মোজাম্মেলের ভায়রা ও সাগরের ছোট দুলাভাই মো. তারেক মুন্সি বলেন, সৌদি কর্তৃপক্ষ আমাদের শুধু লাশ পাঠিয়ে দিয়েছে। তারা পরিবারের দেনা পাওনা, ইন্স্যুরেন্সের টাকা ও দোকানের টাকা কিছুই দেইনি। এতে দুই পরিবারের লোকজনের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। এ বিষয় আমরা সৌদি সরকারের কাছে দৃষ্টি আকর্ষন করছি। তিনি আরও বলেন, এ মৃত্যু যেন নিয়তির লিখন। জন্মিলে মরিতে হয়। একথা সত্য। তবে প্রতিটি মানুষের ইচ্ছা থাকে স্বাভাবিকভাবে যেন মৃত্যু হয়। কিন্তু মৃত্যু তো দিন তারিখ সময় দিয়ে হয় না। মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যু মেনে নিতে যেখানে কষ্টের অনুভূতিতে আঘাত লাগে, সেখানে অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর কত যে কষ্টের তা ভুক্তভোগী ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারেন না।

গত শুক্রবার লাশ দেশে পৌঁছার পর গত শনিবার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদে ইউনিয়নের বতটলা ও মির্জাগঞ্জ উপজেলার ছৈলাবুনিয়া গ্রামে দুই জনকেই স্ব-স্ব পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। বাড়িতে দেখা যায়, এখনো মানুষের ঢল। চলছে হৃদয় বিদারক দৃশ্যে। কবর ছুঁয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন স্বজনরা। বিশেষ করে নিহত মোজাম্মেল মৃধার স্ত্রী, দুইমেয়ে এবং সাগর জোমাদ্দারের স্ত্রী,বাবা ও তিন ভাই ও বোনরা কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রæজলে সিক্ত করছেন।

সাগর জোম্মাদ্দারের মামা ও বেতাগী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: মাকসুদুর রহমান ফোরকান বলেন, আমার ভাগ্নি জামাই মোজাম্মেল নিজের জমি বিক্রি করে ও এনজিও থেকে লোন নিয়ে সৌদিতে হোটেল ব্যবসা শুরু করে। পরে সাগর সেখানে গিয়ে কাজে যোগ দেয়। তাদের উপার্জনের উপরেই তাদের পরিবার নির্ভরশীল ছিল।তিনি আরও বলেন, তাদের যে ক্ষতি হয়েছে তা কথনো পুষিয়ে ওঠার নয়। তবুও তারা যেন তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পেতে পারে সেই বিষয়ে সরকারের সহযেগিতা কামনা করছি।

উল্লেখ্য, গত ২৫ মার্চ বাংলাদেশ সময় রাত ৮টার দিকে ওমরাহ হজ শেষে ফেরার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে। তারা সৌদি আরবের আলগাছিমের উনাইয়া নামক স্থানে ব্যবসা করতেন। ওমরাহ হজ পালনের জন্য মক্কায় যান। ওমরা হজ পালন শেষে শনিবার কর্মস্থলে ফেরার পথে তাদের বহন করা গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি পাথরের পাহাড়ারের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান।

Please Share This Post in Your Social Media






© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY AMS IT BD