এম এস সাগর,
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সোহরাব হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রায়গঞ্জ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. সোহরাব হোসেন গত ১৭নভেম্বর ২০১৬সালে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান এবং বেতনের জন্য এমপিওভুক্তির আবেদন করে। সনদ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে গত ৩০মে ২০২২সালে এমপিওভুক্ত থেকে বাদ পড়েন। পরবর্তীতে সনদপত্র ও অন্যান্য কাগজপত্রদি টেম্পারিং করে এমপিওভুক্ত হন। আবুল কালাম আজাদ প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে গত ১৫সেপ্টেম্বর ২০২০সালে অবসর গ্রহণ করার পর থেকে বিধি বহির্ভুতভাবে সোহরাব হোসেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থেকে অবাধে বিভিন্ন অনিয়ম করেই চলছে। গত ১৬মার্চ ২০২৩সালে ম্যানেজিং কমিটি অত্র স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেনের নানা অনিয়ম, স্বাক্ষর জাল ও অসদাচরণের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে নাগেশ্বরী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার নিখিল চন্দ্র বর্মন, প্রতিষ্ঠানের সভাপতি আব্দুল হক সরকারসহ তিন সদস্য তদন্ত কমিটি করে গত ২০মার্চ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেনের উপস্থিতিতে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে। তদন্ত কমিটি গত ২১মার্চ তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করে। তদন্ত প্রতিবেদনে প্রতীয়মান হয় যে, রায়গঞ্জ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেন অভিভাবক সদস্যবৃন্দের স্বাক্ষর জাল করে অনলাইনে কতৃপক্ষের কাছে তার বকেয়া বেতনের জন্য আবেদন করে। এমনকি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অনুমতি ব্যতীত অতি গোপনে চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে চতুর্থ শ্রেণির পদে বিভিন্ন জনকে চাকরীর আশ্বাস দিয়ে জুটিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে মুসলেকা দিয়ে লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় এবং গত ২১ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভা-চলাকালীন সময়ে পরিচালনা কমিটির সাথে তিনি অসদাচরণ করে। অবশেষে ম্যানেজিং কমিটি গত ২১মার্চ সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেনের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় গত ২২মার্চ তাকে বরখাস্ত করে কমিটি। গত ২৩মার্চ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে সহকারী শিক্ষক এস এম গোলাম মোস্তফা কে দায়িত্ব দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সোহরাব হোসেন ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গত ২৯মার্চ আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। যাহার মামলা নং-১৪৮/২০২৩। মামলা চলাকালীন অবস্থায় গত ১৩এপ্রিল তিনি দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ বহাল রেখে একটি নির্দেশনাপত্র নিয়ে আসে এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসতে বিভিন্নভাবে পায়তারা করছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এস এম গোলাম মোস্তফা কে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য পত্র ইস্যু করা হয়। কিন্তু সোহরাব হোসেন তা না মেনে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমের ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।
সহকারী প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেন বলেন, ম্যানেজিং কমিটি আমাকে অবৈধভাবে অব্যাহতি প্রদান করে। বাধ্য হয়ে দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে এ বিষয়ে আবেদন করি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩এপ্রিল আমাকে এই পদে বহাল রেখে সেখান থেকে একটি নির্দেশনাপত্র দেয়া হয়।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এস এম গোলাম মোস্তফা বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির নির্দেশে গত ২৩মার্চ থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি এবং বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালাচ্ছি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল হক সরকার বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেনের নানা অনিয়ম, স্বাক্ষর জাল অভিযোগে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কমিটির সিদ্ধান্তে সহকারী শিক্ষক এস এম গোলাম মোস্তফাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা হয়েছে। দু’পক্ষকেই কাগজপত্র নিয়ে কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টমতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কুড়িগ্রাম জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.শামছুল আলম বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেন কে বরখাস্ত করে। তদন্ত করে আমাদের দপ্তর থেকেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply