রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ধান কাটা-মাড়াই শুরু, কৃষক ও কৃষি শ্রমিকগণ ব্যস্ত সময় পার করছেন

মোঃ হায়দার আলী, গোদাগাড়ী, রাজশাহী থেকেঃ শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা। এই উপজেলায় চলতি মৌসুমে আগাম ইরি-বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। একদিকে তাপদাহ অন্যদিকে অতিরিক্ত গরমে কৃষকদের কষ্ট হলেও ধান কেটে মাড়াই কাজ করছেন তারা। পাশাপাশি বসে নেই কৃষাণীরাও। তারাও মনের আনন্দে ধান শুকিয়ে কুঠি, গোলায় তোলার কাজে সহযোগিতা করছেন। আগাম বোরো ধান কাটা শুরু হলেও আগামী সপ্তাহে পুরো দমে ধান কাটা শুরু হবে বলে জানান কৃষকরা।

চলতি মৌসুমে এ উপজেলার কৃষকরা রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হাল চাষ দিয়ে বোরো ধান আবাদ করেন। বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং কারণে কৃষকরা জমিতে সঠিক সময় পর্যাপ্ত পানি দিতে পারে নি। তবে কৃষি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে থেকে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ প্রদান, পর্যাপ্ত সার পাওয়ায় এবার কোনো কিছুতেই কৃষকদের বেগ পেতে হয়নি।

তবে শুরুতেই কালবৈশাখী হানা, দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। ধান কাটা ও মাড়াইয়ের শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন চাষিরা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, এখনও ধান কাটা পুরোদমে শুরু হয়নি। তবে মাত্র ঈদ শেষ হলো তাই শ্রমিকেরা কাজ শুরু করেনি। ধান পুরোপুরি কাটা শুরু হলে শ্রমিক সংকট থাকবে না। তবে এ অঞ্চলের কৃষকরা ঝড়ো হাওয়া ও শিলা বৃষ্টিতে ধানের ক্ষতির আশঙ্কা করছে।
এদিকে গত বুধবার কাঁকনহাট, চব্বিশনগর, মান্ডইলসহ কয়েকটি এলাকায় ঝড়ো হাওয়া ও শিলা বৃষ্টিতে পাঁকা ধান, আম, সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ওই এলাকার কৃষকরা।

এছাড়াও ঈদের দুই দিন পরে গোদাগাড়ীর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি, আবার আদারপাড়া, ধাতমা, বরশিপাড়া, বলিয়াডাইং, মধুমাঠসহ বেশ কিছু এলাকায় শিলা বৃষ্টিতে এ অঞ্চলে মাঠে পাঁকা ধানের ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছে।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, উপজেলায় এ বছর ১৬ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। কিছু কিছু জমির ধান কাটা শুরু হয়েছে এক সপ্তাহ ধরেই। গড়ে ফলন হচ্ছে বিঘা প্রতি ২২ থেকে ২৩ মণ। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস।
ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে পাঁকা ধানের ক্ষতির কথা কৃষকরা জানালেও কৃষি অফিস বলছে ধানের ক্ষতি হয়নি। গভীর নলকুপ থেকে ঠিকমত পানি পাচ্ছে না কৃষকরা। ডিপটিউবল গুলি পানি কম উঠায় সেচচার্জ বৃদ্ধি পেয়েছে, যে সকল জমিতে ধানের নরম দানা রয়েছে সেই জমিতে বৃষ্টির পানিতে বেশ উপকার হয়েছে।

গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই বোরো মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ধানের ফলন আশা করা যাচ্ছে বেশ ভালই হবে। তবে তাপদাহের কারণে জমিতে বেশী পরিমাণ সেচ দিতে হয়েছে। একদিন সেচ দিলে ৭/১২ দিন পর আবার জমিতে সেচ দিতে পেরেছে কৃষকগন, পানি না পেয়ে আবারো বিষ পান করেছেন এক আদিবাসী কৃষক । ধানের জমিতে পানি ধরে রাখতে পারছে না।

গোদাগাড়ী পৌরসভার কৃষক আলহাজ্ব আব্দুল মাতিন বলেন, ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে আমার ক্ষেতের পাঁকা ধানের কিছু ঝড়ে গেছে ও ধান গাছ মাটিতে পড়ে গেছে। ধান কাটতে সময় লাগছে ৯ বিঘা জমির মধ্যে ৪ বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছে। দ্রুত ধান উঠানে তুলতে না পারলে ক্ষেতের ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভাজনপুর এলাকার কৃষক দুলুদেব বলেন, কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টি নিয়ে আতঙ্কে আছি, ধান কাটা ও মাড়াই না হওয়া পর্যন্ত শান্তি নেই।

তবে গোদাগাড়ীর কয়েকজন চাষি জানিয়েছেন, শ্রমিক সংকট কিছুটা হলেও যদি ঝড়ো হাওয়া ও শিলা বৃষ্টি হয় তাহলে পাঁকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
এ অঞ্চলে ধান লাগানো থেকে কাটা-মাড়াইয়ের বেশিরভাগ শ্রমিকই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শ্রমিকরা এখন ধান লাগানো থেকে কাটা-মাড়াই ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজের সন্ধানে ছুটছে। কারন হিসাবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শ্রমিকরা বলছে ধান লাগানো থেকে কাটা-মাড়াইয়ে যে মজুরি পাওয়া যায় তার চাইতে অন্য কাজে বেশী মজুরি পাওয়া যাচ্ছে।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহমেদ বলেন, ইতোমধ্যে গোদাগাড়ীতে বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ভাগ ধান কাটা হয়েছে। এবার ধানে কোন প্রকার রোগ ও পোকামাকড় না থাকায় এবার কৃষকরা ধানের আশানারুপ ফলন পাচ্ছে। সাথে দামও ভাল পাচ্ছে। আশা করা যায় কৃষকরা যথাসময়ে তাদের ফলস ঘরে তুলতে পারবে।

মোঃ হায়দার আলী
গোদাগাড়ী, রাজশাহী।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *