তীব্র তাপদাহে পুড়ছে গোপালগঞ্জবাসী, চলছে ঘন ঘন লোডশেডিং

স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে তীব্র তাপদাহে বিপযর্স্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সেই সাথে মরার উপর খারার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘনঘন লোডশেডিং। টানা গত কয়েকদিন ধরে জেলায় চলছে এমন তাপদাহ। বৃষ্টি না হওয়া আর প্রচণ্ড রোদে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না শ্রমিক, দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।

গোপালগঞ্জ আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানাগেছে, সারাদেশের মতো গোপালগঞ্জ জেলায় বৃদ্ধি পেয়েছে তাপমাত্রা। আজ মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েকদিন ধরে ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠা নামা করছেন। আগামী ২০ এপ্রিল পযর্ন্ত জেলায় তাপদাহ থাকবে। এরপর থেকে কমতে শুরু করতে তাপমাত্রা। এছাড়া ২২ তারিখ থেকে বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

জেলার বিভিন্ন স্থানে গুরে দেখা গেছে, সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে তীব্র রোদ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোদ যেন আগুনের ফুলকি হয়ে ঝরছে। বিশেষ করে দুপুরের পর আগুন ঝরা রোদের তেজে বাইরে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা বিরাজ করছে সূর্য না ডোবার আগ পর্যন্ত। ফলে গত কয়েকদিন ধরে জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে এমন তীব্র তাপদাহ। এর ফলে গরমে মানুষের পাশাপশি হাঁসফাঁস করছে প্রাণীকুল। চলমান তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে খেটে খাওয়া দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালক ও কৃষকরা। তীব্র রোদে মাঠে টিকতে পারছে না কৃষক ও দিনমজুর। রাস্তায় ভাড়া মারতে পারছে না রিকশা-ভ্যানচালকেরা। পঞ্চাশ টাকার ভাড়া মারার পর গাছের ছায়ায় আধঘন্টা বিশ্রাম নিতে হচ্ছে। তীব্র গরমে রোজাদারদের অবস্থাও কাহিল হয়ে পড়ছে।

প্রতিদিন সেচ দিতে হচ্ছে বোরো ধান ও সবজি ক্ষেতে। এতে হাঁপিয়ে উঠছে কৃষকরা। সূর্যের প্রখর তাপে সাধারণ মানুষের জীবন পুরোপুরিভাবে বিপর্যয় হয়ে পড়েছে।

এদিকে, তীব্র গরমের পাশাপশি মানুষের অপর ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে ঘন ঘন লোডশেডিং। ৩০ মিনিট পরপর আসা যাওয়া করছে বিদ্যুত। ৩০ মিনিট থাকলে লোডশেডিং চলে ঘন্টার পর ঘন্টা। দিন বা রাত বিদ্যুতের আসা যাওয়া নেই কোন ঠিক ঠিকানা।

ওবায়দুর রহমান নামের পঞ্চাশ বছর বয়সী এক রিকশা চালক বলেন, তীব্র রোদে রিক্সা চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। একটি ভাড়া টেনে অন্য ভাড়া ধরতে কষ্ট হয়। মাঝে মধ্যে ছায়ার থেকে প্রাণ বাঁচাতে বিশ্রাম নিতে হচ্ছে। কষ্ট হলেও তো কিছু করার নেই সামনে ঈদ, কষ্ট হলেও আয় তো করতে হবে।

অপর রিক্সা সোলাইমান হোসেন বলেন, সারাদিন যা আয় হয় এ দিয়েই আমাদের সংসার চলে। কিন্তু তীব্র গরমে রোদের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে তো আর কেউ দিয়ে যাবে না। ফলে কস্ট হলেও রিক্সা চালাতে হচ্ছে।

রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক অবনি মন্ডল বলেন, তীব্র রোদে ধানক্ষেতে প্রতিদিন সেচ দেওয়া লাগছে। না দিতে পারলে ক্ষেতে ধান গাছ রোদে পুড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন সেচ দিতে গিয়ে খরচের দিক থেকে হাঁপিয়ে উঠছি আমরা। এদিকে রোদের জন্য কৃষকও তেমন পাচ্ছি না।

গোপালগঞ্জ আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আবু সুফিয়ান বলেন, আজ মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েকদিন ধরে ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠা নামা করছেন। আগামী ২০ এপ্রিল পযর্ন্ত জেলায় তাপদাহ থাকবে। এরপর থেকে কমতে শুরু করতে তাপমাত্রা। এছাড়া ২২ তারিখ থেকে বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আ: কদের সরদার বলেন, তীব্র রোদে যাতে জমির ধান বা অন্যান্য সবজি নষ্ট না হয় সেজন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সকল বিকাল জমিতে সেচ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

গোপালগঞ্জ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ড্রিষ্টিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মাঈন উদ্দিন বলেন, গোপালগঞ্জে জেলায় ২৭ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এসব গ্রাহকের বিপরীতে ১৪ মেগাওয়াট বিদ্যুত প্রয়োজন। কিন্তু চাহিদার তুলায় আমরা বিভিন্ন সময় মাত্র ৮ থেকে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুত পেয়ে থাকি। তবে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রে কয়লা না থাকায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ফলে জেলায় বিদ্যুত ঘাটতি দেখা দেয়ায় লোডশেডিং-এর মাত্রা বেড়েছে। #

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *