January 15, 2025, 7:41 am
স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ : জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এ কল করে সহায়তা চাওয়াই কাল হয়ে দাঁড়িয়ে একটি পরিবারের। সহায়তা তো পাইনি উল্টো ওই পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। আটকের কয়েকঘন্টা পর সদর থানায় প্রতিপক্ষের করা নারী নির্যাতন মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
আর এমন অভিযোগ উঠেছে গোপালগঞ্জ সদর থানার গোপীনাথপুর তদন্ত কেন্দ্রের দুই পুলিশের বিরুদ্ধে।
গত ৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সুকতাইল গ্রামের এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ওই দুই পুলিশ সদস্যরা হলেন গোপীনাথপুর তদন্ত কেন্দ্রে উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু হাসান ও সহকারী উপ-পুলিশ পরিদর্শ (এএসআই) ওহিদুজ্জামান।
ভুক্তভোগীরা হলেন সদর উপজেলার শুকতাইল গ্রামের হিরু মোল্লা, তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম ও তাদের ছেলে বাইজিদ মোল্লা।
পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এলাকাবাসী। যদিও পুলিশ বলছে, পুলিশের সামনে মামলার বাদীকে মারধর করার অপরাধে তাদের আটক করা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় ও প্রতক্ষ্যদর্শীরা বলছেন ঘটনার সময় ওই মহিলাকে কোন মারধর করা হয়নি।
প্রতিপক্ষের করা মিথ্যা মামলায় বৃদ্ধ বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের বাঁচাতে ও পুলিশের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আকুতি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের দুবাই প্রবাসী ছেলে।
প্রতক্ষ্যদর্শী সুত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ভুক্তভোগী হিরু মোল্লার সাথে তার আপন ভাই বিজিবি সদস্য ইয়াহিয়া মোল্লা সাথে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। গত বৃহস্পতিবার (০৬ এপ্রিল) ইয়াহিয়া মোল্লার স্ত্রী চামেলী বেগম হিরু মোল্লার জমিতে জোর করে সেফটি ট্যাংক নির্মাণ করতে যায়। এসময় হিরু মোল্লার বউ ফাতেমা বেগম বাঁধা দেয়। এ সময় ইয়াহিয়া মোল্লার বউ চামেলি বেগম ক্ষিপ্ত হয়ে তার বাবার বাড়ীর থেকে লোকজন ডেকে এনে ফাতেমা বেগম ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হুমকি ধামকি দিয়ে পুনরায় কাজ শুরু করে।
পরে ফাতেমা বেগম বাধ্য হয়ে পুলিশের জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এ ফোন দেয়। এ সময় গোপীনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু হাসান ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ওহেদুজ্জামান ঘটনাস্থলে আসে এবং নিরেপেক্ষ ভুমিকা পালন করে নির্মান কাজ বন্ধ করে দেয়।
পরবর্তীতে ইয়াহিয়া মোল্লা বউয়ের সাথে ঘরের ভিতর গিয়ে কথা বলে আচরন পরিবর্তন হয়ে যায় ওই পুলিশ সদস্যদের। পরে ভুক্তভোগী ওই পরিবারকে মিমাংসার কথা বলে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আটক করা হয়। এরপর আটকের কয়েকঘন্টা পর চামেলি বেগম বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে ওই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে কোর্টে প্রেরণ করা হয়।
এঘটনার পর ভুক্তভোগী হিরু মোল্লার ছেলে দুবাই প্রবাসী হেলাল মোল্লা গত ৭ এপ্রিল (শুক্রবার) ফেসবুকে পুলিশের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতায় অভিযোগ ও বৃদ্ধ বাবাসহ পরিবার সদস্যদের বাঁচাতে আকুতি করে একটি ভিডিও পোস্ট করেন।
এ বিষয়ে নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক প্রতক্ষ্যদর্শী বলেন, হিরু মোল্লার বউ ফাতিমা বেগম ৯৯৯ ফোন দেওয়ার পর পুলিশ আসলো। প্রথমে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছিলেন। হঠাৎ ওই পুলিশদের ফোনে একটা ফোন আসে এরপর তারা বাদি চামেলি বেগমের ঘরে গিয়ে তার সাথে কথা বলতে দেখা যায়। ঘর থেকে বের হয়ে তারা হিরু মোল্লাসহ তার স্ত্রী ও ছেলেকে মিমাংসার কথা বলে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। পরে আমরা জানতে পারি কয়েকঘন্টা পর তাদের চামেলি বেগমের করা নারী নির্যাতন মামলায় আটক করা হয়েছে।
পুলিশের সামনে ওই নারী মারধরের কোন ঘটনা ঘটেছে কি না এমন প্রশ্নে তারা বলেন, পুলিশের সামনে কেউ মারামারি করে নাই। শুধু মহিলারা মহিলারা ঝগড়া করছে। এর বেশি কিছু না।
এ বিষয়ে মামলার বাদী চামেলী বেগম বলেন, আমার স্বামীর রেকর্ডীয় জায়গায় মিস্ত্রি দিয়ে কাজ করছিলাম, হিরু মোল্লার পরিবার শত্রুতা করে বাঁধা দিয়েছে, আমি আইনের আশ্রয় নিয়ে তাদের নামে মামলা করেছি।
ভুক্তভোগী ফাতেমা বেগম বলেন, চামেলী বেগম একজন মামলাবাজ মহিলা। সে আমাদের পরিবারের সদস্য ও এলাকার সাধারণ মানুষের নামে একাধিক মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আমরা ন্যায় বিচার ও নিরাপত্তার জন্য ৯৯৯ এ ফোন করে ছিলাম, পুলিশ আমাদের আস্থা ভেঙে দিয়েছে। উদ্ধতন কর্মকর্তাদের ফোন ও ঘুষের বিনিময়ে আমাদের পরিবারের ওপর অন্যায় করেছে। স্থানীয় পুলিশের উপর আমরা আস্থা হারিয়ে ফেলেছি। আপনাদের মাধ্যমে গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপারসহ উদ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ বিষয়ে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: জাবেদ মাসুদ বলেন, তাদের বিরুদ্ধে সদর থানায় নারী নির্যাতন মামলা হয়েছে। সেই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তারা পুলিশের সামনে মামলার বাদীকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে গোপীনাথপুর তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু হাসানের ফোনে একাধিকবার ফোন করেও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ওহেদুজ্জামান বলেন, আমি কিছুই বলতে পারবো না। উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু হাসান স্যার ও ইনচার্জ যেটা বলবে সেটাই ঠিক।
গোপীনাথপুর তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক (ইনচার্জ) মোশাররফ হোসেন বলেন, পুলিশের সামনে মামলার বাদীর উপর হামলার করায় তাদের আটক করা হয়েছিল। এবং আমরা যেটা বলেছি সেটাই সঠিক।
জেলা পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, আমি যেমনটি শুনেছি তা হলো ওই মহিলা (ফাতেমা বেগম) ৯৯৯ ফোন করে সহায়তা চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পুলিশের সামনে মামলার বাদী কে মারধর করে। পরে তাদের আটক করা হয়। এ বিষয়ে আমি আরো বিস্তারিত জেনে আপনাদের জানাতে পারবে। #