রামপালে একটি মাদ্রাসার সাধারণ শিক্ষক এক যুগ ধরে অন্য মাদরাসায় সভাপতি

এ এইচ নান্টু, বিশেষ প্রতিনিধি || রামপালে একটি মাদ্রাসার সাধারণ শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিধি বহির্ভূতভাবে টানা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে অন্য একটি দাখিল মাদ্রাসার সভাপতির দায়িত্ব পালনের অভিযোগ উঠেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি গঠন প্রবিধানমালা ২০০৯ এর পরিপন্থীভাবে এমন নিয়োগ অবৈধ হলেও বহল তবিয়তে সভাপতির পদে সামলাচ্ছেন কুদরতি এনামুল বাশার বাচ্চু নামের এক আওয়ামী লীগ নেতা। এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, রামপাল উপজেলার ইসলামাবাদ ফাতিমাতুজ্জযোহরা (রঃ) দাখিল মহিলা মাদরাসায়
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন কুদরতি এনামুল বাশার বাচ্চু। তিনি পার্শ্ববর্তী ইসলামাবাদ ফাজিল (ডিগ্রী) মাদরাসার দাখিল পর্যায়ের সাধারণ শিক্ষক ও বাঁশতলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

অভিযোগ উঠেছে, তিনি রাজনৈতিক ক্ষমতা অপব্যবহার করে দীর্ঘ দিন ধরে ওই মাদ্রসায় সভাপতির পদ অলংকৃত করছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর পর দুই বছরের বেশী কেউ সভাপতি পদে থাকতে পারবেন না একটি নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ নির্দেশনা মেনে রামপালের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি পরিবর্তন হলেও শুধু ওই মাদ্রসায় ৫ম বারের মত বহল তবিয়তে সভাপতি হয়েছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

প্রবিধানমালার ম্যানেজিং কমিটি গঠন এর ৭ এর ২ ধারায় বলা হয়েছে ‘কোন শিক্ষক কিংবা শিক্ষক শ্রেণীর সদস্য ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচিত হইবেন না’। প্রশ্ন উঠেছে একটি মাদ্রাসার সাধারণ শিক্ষক তা হলে কি করে অন্য একটি দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি হতে পারেন ? তাও ২০১০ সাল থেকে টানা ২০২৩ সাল পর্যন্ত !

বার বার সভাপতি পদে নিয়োগ হওয়ায় ওই এলাকার অভিভাবক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সাংবাদিকরা মাদরাসার সুপার মাওলানা গোলাম ফারুকের মুখোমুখি হলে তিনি জানান, ২০১০ সাল থেকে বাচ্চু সাহেব সভাপতি হয়ে আসছেন কিন্তু এরপর তিনি আর সভাপতি হবেন না। আপনারা এ বিষয়ে কোন কিছু লেখালেখি করবেন না বলে অনুরোধ করেন।

এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুদরতি এনামুল বাশার বাচ্চুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাদরাসার উন্নয়নের স্বার্থে আমাকে দীর্ঘ দিন সভাপতি পদে রাখা হয়েছে। সভাপতি নির্বাচনে কোন অনিয়ম হয়নি বলে তিনি দাবী করেন। এটা নিয়ে সংবাদ প্রচার করতে তিনি নিষেধ করেন।

এ বিষয়ে রামপাল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এমনটি তো হওয়ার কথা নয়। আমি খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।

এমন অভিযোগের বিষয়ে রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিবুল আলম কে ম্যানেজিং কমিটির গঠনের পরিপত্র দেখিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। তিনি পরিপত্র দেখে বলেন, আমার দায়িত্ব পালন কালীন সময়ে এমটি হয়নি। পরিপত্রের নিয়মের বাইরে বিধিবহির্ভূতভাবে সভাপতি পদে নিয়োগ হলে তা বাতিল হবে। মাদরাসা সুপার বা অন্য কেউ তথ্য গোপন করে দুই এর অধিক এবং সভাপতি যদি অন্য মাদরাসার সাধারণ শিক্ষক হয়ে থাকেন তবে সেটিও খতিয়ে দেখে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *