ঝিনাইদহে সাংবাদিক পুলিশ ও মানবাধিকার কর্মী সেজে চলছে প্রতারণা

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
এক সময় ঝিনাইদহ অঞ্চলে চরমপন্থিদের নিয়মিত চাঁদা দিয়ে গ্রামে বসবাস করতে হতো মানুষকে। চাঁদার টাকা পরিশোধ না দিয়ে নিরীহ মানুষদের গুলি করে বা গলাকেটে হত্যার পর বিভিষিকা ছড়িয়ে দিতো। পিলে কাঁপানো সেই পরিবেশ এখন আর নেই। কিন্তু এখন চরমপন্থার চেয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে ডিজিটাল চাঁদাবজী। সাংবাদিক, পুলিশ, গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও মানবাধিকার কর্মী সেজে এক শ্রেনীর প্রতারক জেলাব্যাপী ভয়ংকর চাঁদাবাজীতে লিপ্তি হয়ে পড়েছে। ফলে রাস্তায় হরহামেশে দেখা মিলছে প্রেস, মানবাধিকার ও পুলিশ লেখা স্টিকারযুক্ত মটরসাইকেলের। এই প্রতারকরা এতটাই সংঘবদ্ধ যে এরা দলবেধে সরকারী কর্মকর্তা বা গ্রামের মানুষকে আক্রমন করছে। চাহিদা মতো টাকা না দিলে ফেক ফেসবুক আইডিতে ভিডিও বা ছবি দিয়ে মিথ্যা খবর ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন ঝিনাইদহের গ্রামেগঞ্জে হাজারো এমন প্রতারণার ঘটনা ঘটলেও মানুষ কোন প্রতিকার পাচ্ছে না। মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দিয়ে এমন এক চাঁদাবাজীর ঘটনা ঘটেছে কোটচাঁদপুরের ফুলবাড়িয়া গ্রামে। জনৈক রবীন্দ্র্রনাথ ঘোষ মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দিয়ে ফুলবাড়িয় গ্রামের হারান বিশ^াসের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, গত অক্টোবর মাসে ফুলবাড়ি গ্রামের হারান বিশ্বাসের মেয়ে প্রীতি বিশ্বাস বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় হারান বিশ্বাস কোটচাঁদপুর মডেল থানায় একটি জিডি করেন। কদিন মানবাধিকার নেতা পরিচয় দিয়ে জনৈক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ হারান বিশ্বাসের কাছ থেকে তার মেয়েকে উদ্ধার করে দেওয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা নিয়ে যান। কয়েক মাস পার হয়ে গেলেও মেয়েকে ফিরে না পেয়ে রবীন্দ্র্রনাথের দ্বারস্থ হন হারান বিশ্বাস। তখন রবীন্দ্র্রনাথ হারান বিশ্বাসের কাছে আবারও মোটা অংকের টাকা দাবী করেন। হারান বিশ্বাস টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তাঁর সাথে খারাপ আচরণ করেন কথিত মানবাধিকার নেতা রবীন্দ্র্রনাথ ঘোষ। পরবর্তীতে এ ঘটনা নিয়ে থানা পুলিশের দ্বারস্থ হন হারান বিশ্বাস। এদিকে ঝিনাইদহ জেলায় শুস্ক মৌসুমে অবৈধ ভাবে মাটির ব্যবসা চলে রমরমা। ইটভাটা মালিকরা এসব মাটি কিনে থাকেন। কিন্তু সারা জেলায় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজী করার অভিযোগ উঠেছে। আসলে তারা কোন সাংবাদিক না। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বেপরোয়া ভাবে চাঁদাবাজী করে থাকেন। তারা পুকুর কাটা খবর পেলেই দল বেধেঁ চলে যান ঘটনাস্থলে। এককালীন কিছু টাকা নিয়ে ও মাসিক চুক্তি করে চলে আসেন। হাটে বাজারে গজিয়ে ওঠা কোয়াক ডাক্তাররাও এদের হাত থেকে বাদ যাচ্ছে না। সবাই এই চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, সমাজ বিরোধী ও মাদকসেবীদের একটি বড় অংশ এখন সাংবাদিক সেজে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এদের চলাচল বেশি। বেশ কয়েকবার এরা ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক দিয়ে তারা ছাড়া পেয়ে গেছেন। স্কুল কলেজে নিয়োগ নিয়ে এই চক্রটি প্রতারণার আশ্রয় গ্রহন করে থাকেন। সভাপতির বিরুদ্ধে খবর প্রকাশের ভয় দেখিয়ে সম্প্রতি নগরবাথান এলাকার একটি স্কুলে দলবেঁধে হানা দিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। ঝিনাইদহ শহরের আলফালাহ ও শামীমা ক্লিনিকে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে মোটা অংকের টাকা গ্রহনের অভিযোগ রয়েছে। কিন্ত কোন ভাবেই এই প্রতারক চক্রকে থামানো যাচ্ছে না। পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যাক্তরাও এ বিষয়ে নীরব রয়েছে। এই চক্রের বিরুদ্ধে আবার পাল্টাপাল্টি সংবাদও প্রচার হচ্ছে। টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ বেঁধে গেলে নিজেরাই অন্য গ্রæপের বিরুদ্ধে খবর প্রচার করতে দেখা গেছে। অনেক ভুক্তভোগী আবার প্রতিকার না পেয়ে নিজেদের ফেসবুকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কে কখন কত টাকা নিয়েছেন তা প্রচার করছেন। জেলাজুড়ে এমন কর্মকান্ডে পশোদার সাংবাদিকরা হতাশ ও অসহায় হয়ে পড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট সালমা সেলিম জানিয়েছেন, এমন প্রতারণার খবর আমাদের কাছে প্রতিনিয়ত আসছে। আমরা একটি অভিযোগ ফাইল খুলেছি। প্রশাসনের পাশাপাশি এ বিষয়ে সিনিয়র সাংবাদিক ও সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোকে ব্যবস্থা নিতে হবে বলে তিনি মনে করেন। মানবাধিকার কর্মী ও জেলার সিনিয়র সাংবাদিক অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান টুকু জানান, আমি শুনেছি বেশকিছু দিন ধরে একটা প্রতারক চক্র মানবাধিকার নেতা পরিচয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকাতে প্রতারণা করে আসছে। এরা নিয়োগকৃত স্থানীয় সোর্সদের মাধ্যমে এ কাজ করে থাকে। এদের বিরুদ্ধে সামজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। একই সাথে গণমাধ্যমে এদের প্রতারণার বিষয় তুলে ধরতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। নইলে পেশাদার সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়বে। কোটচাঁদপুরের একটি অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে কোটচাঁদপুর থানার ওসি মঈন উদ্দিন জানান, মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দিয়ে এরা থানায় একবার তদন্ত করার নামে এসেছিল। আমাদের এক উপ-পরিদর্শককে হুমকি-ধমকিও দিয়েছিল। তখনই তাঁদের কার্যক্রম নিয়ে সংশয় বোধ করেছিলাম। পরবর্তীতে তাঁদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে এক ভুক্তভোগী আমাদেরকে অবগত করেন।

ঝিনাইদহ
আতিকুর রহমান।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *