মোঃ বাবুল হোসেন পঞ্চগড় প্রতিনিধি:
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানী) বার্ষিক সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মোট ১৬টি মামলা নিয়েছে পুলিশ। এসব মামলায় গত ২৪ ঘন্টায় আরো ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৮১ জনে।
পঞ্চগড়ের বোদা ও সদর থানায় করা এসব মামলায় নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে ১০ হাজারেরও অধিক।
শনিবার সকালে পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস. এম সিরাজুল হুদা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে, উত্তপ্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এখন জেলা জুড়ে বিরাজ করছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক। গ্রেপ্তার আতঙ্কে জেলা সদরের আহমদ নগরের আশপাশের কয়েকটি গ্রাম ও বোদা উপজেলার বেশকিছু গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। পুলিশের পাশাপাশি গ্রেপ্তার অভিযান চালচ্ছে র্যাব ও বিজিবি।
তবে পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে প্রকৃত জড়িত ব্যক্তি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
অন্যদিকে, আহমদ নগর এলাকায় পুড়ে যাওয়া বাড়িগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ঘটনার আটদিন পরেও ফিরেনি আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অনুসারীরা। এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে আহমদ নগরসহ আশপাশের এলাকায়। খোলা আকাশের নিচে সেখানে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন তারা। অনেকে জলসা মাঠে তাঁবু টানিয়ে রাত কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার মাঠের পাশে জামেয়া আহমদিয়া বাংলাদেশ অফিসে আশ্রয় নিয়েছেন।
এর আগে, গত শুক্রবার (৩ মার্চ) আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) বার্ষিক সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয় পঞ্চগড়। জুমআর নামাজের পর আহমদিয়াদের তিন দিনব্যাপী জলসা বন্ধসহ তাদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে জেলা শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে খন্ড খন্ড বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ পরিষদের ডাকে এই বিক্ষোভ মিছিলটি কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে বড় পরিসরে চৌড়ঙ্গী মোড়ের দিকে আসতে থাকে। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে তাদের সাথে শুরু হয় সংঘর্ষ। পুলিশের উপর হামলা করে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে মুসল্লিরা। এ সময় পুলিশও অসংখ্য টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এর মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের কয়েকটি অংশ জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তারা পুলিশ ও বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর, ট্রাফিক পুলিশের অফিসে অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া আরেকটি অংশ পঞ্চগড় বাজারে আহমদিয়াদের চারটি দোকানের মালামাল বের করে আগুনে পুড়ে দেয়। এছাড়া তাদের বেশকিছু বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এঘটনায় কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের একজন এবং মুসল্লীদের মধ্যে একজন নিহতও হন। পরে রাত ৯টার দিকে জলসা স্থগিত ঘোষণা করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এদিকে, শনিবার সন্ধার পর আবারও উত্তপ্ত হয় শহর। ‘আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা দুজনকে গলা কেটে হত্যা করেছে’- এমন গুজবে বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে ‘নারায়ে তাকবির’ ধ্বনি তুলে তারা দুইভাগ হয়ে আহমদনগর ও তুলারডাঙ্গা এলাকার দিকে ছুটতে থাকেন। এ সময় পঞ্চগড় বাজারের কদমতলা এলাকার ওয়াকার শোরুম নামে একটি জুতার দোকানের সাটার ভেঙে মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায় একদল মানুষ। এর মধ্যে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পঞ্চগড় পৌরসভার ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় একটি মাইক্রোবাস পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
পুলিশ সুপার এস. এম সিরাজুল হুদা বলেন, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনায় ১৬টি মামলা রুজু হয়েছে। শনিবার সকাল পর্যন্ত মোট ১৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ও স্বাভাবিক রয়েছে। আসামি গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে, ভিডিও ফুটেজ, গোয়েন্দা তথ্য, বিভিন্ন স্টিল ছবি যাচাই-বাছাই করে দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
পঞ্চগড়ে সংঘর্ষ: ১৬ মামলায় গ্রেপ্তার বেড়ে ১৮১

Leave a Reply