January 8, 2025, 9:50 pm

বিজ্ঞপ্তি :
বিশেষ সতর্কীকরন - "নতুন বাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত সকল সংবাদের দ্বায়ভার সম্পুর্ন প্রতিনিধি ও লেখকের। আমরা আমাদের প্রতিনিধি ও লেখকের চিন্তা মতামতের প্রতি সম্পুর্ন শ্রদ্ধাশীল। অনেক সময় প্রকাশিত সংবাদের সাথে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে। তাই যেকোনো প্রকাশিত সংবাদের জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। নতুন বাজার পত্রিকা- বাংলাদেশের সমস্ত জেলা, উপজেলা, ক্যাম্পাস ও প্রবাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! বিস্তারিত: ০১৭১২৯০৪৫২৬/০১৯১১১৬১৩৯৩
শিরোনাম :
ময়মনসিংহের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতায় জীবন্ত কিংবদন্তী শামসুল আলম খান ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে বিজিবির হাতে ২৪ জন আটক নড়াইলে ইয়াবা ট্যাবলেটসহ একজন গ্রেফতার পাইকগাছায় গ্রামীণফোন কাস্টমার কেয়ার বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে গ্রাহক পাইকগাছায় হত্যা চেষ্টার মামলায় ১০৭ আসামীর বিরুদ্ধে সিআইডির আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল পাইকগাছায় তীব্র ঠান্ডায় বিপর্যস্ত জনজীবন,খড় জালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা পুঠিয়ায় যুবলীগ নেতা সেলিম গ্রেফতার পঞ্চগড়ের বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পরিত্যক্ত জমিতে সবজি চাষ শাজাহানপুরে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে ছাত্রদলের দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ময়মনসিংহে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তারুণ্যের উৎসব উদযাপন
পাইকগাছায় মুকুলে ভরে গেছে আম গাছ

পাইকগাছায় মুকুলে ভরে গেছে আম গাছ

ইমদাদুল হক,পাইকগাছা,খুলনা।। পাইকগাছার বিভিন্ন এলাকার আমের গাছে মুকুল সৌরভ ছড়াচ্ছে। সুমিষ্টি ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে প্রকৃতি। বসন্তের শুরু থেকেই মুকুলে শোভা পাচ্ছে গাছ। মৌমাছির দল গুনগুন করে ভিড়তে শুরু করছে আমের মুকুলে। মুকুলের সেই সু-মিষ্টি সুবাসে আন্দোলিত হয়ে উঠেছে চাষীর মনও। এ বছর আশানারুপ মুকুল না হওয়ায় পরও মনে আশা নিয়ে আমচাষি ও বাগান মালিকরা বাগানের পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অবশ্য গাছে মুকুল আশার আগে থেকেই গাছের পরিচর্যা করে আসছেন তারা। যাতে করে গাছে মুকুল বা গুটি বাঁধার সময় কোন সমস্যার সৃষ্টি না হয়।
পাইকগাছাসহ উপকুল এলাকায় চলতি বছর অনেক দেরিতে আম গাছে মুকুল বের হওয়া শুরু হয়েছে। অধিকাংশ গাছের মুকুল ভালো হয়েছে। কোন গাছের একটি দুইটি ডালে মুকুল বের হয়েছে আর বাকী ডালের পল্লবে মুকুল হয়নি। অনেক গাছে কোন মুকুলই বের হয়নি। হিসাবে শীতের মধ্যে অতি বৃস্টি ও ঝড়ো হাওয়া এর কারণ হিসাবে বিবেচনা করছে কৃষিবীদরা।
পাইকগাছার কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে ৪টি ইউনিয়ন গদাইপুর, হরিঢালী, কপিলমুনি, রাড়ুলী ও পৌরসভা ছাড়া বাকি ইউয়িনগুলোতে সীমিত আমের গাছ রয়েছে। উপজেলায় ৫৮৫ হেক্টর জমিতে মোট আম গাছ রয়েছে। গাছের সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার। কিছু কিছু পরিকল্পিত আম বাগান রয়েছে। এসব বাগানে সর্বনিন্ম ১০টি গাছ রয়েছে। ৫ শতক, ১০ শতক, ১ বিঘা ও ৩ বিঘা পর্যন্ত আমের বাগান রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নে ছড়ানো ছিটানো আম গাছ আছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এসব বাগানের ৮০/৭৯০ ভাগ গাছে মুকুল ধরেছে।তবে গাছের একটি দুইটি ডালে মুকুল বের হয়েছে আর বাকী ডালের পল্লবে মুকুল হয়নি। অনেক গাছে কোন মুকুলই বের হয়নি।১০/১৫ ভাগ আম গাছে কোন মুকুল বের হয়নি। তবে এখনো সময় আছে আরো কিছু গাছে মুকুল বের হতে পারে এমন আশা করছে চাষী ও বাগান মালিকরা। আম বাগান থেকে চলতি মৌসুমে ৫ হাজার ৮ শত মেট্রিক টন আমের ফলন পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তারপরও বাগান মালিক, কৃষিবিদ, আমচাষিরা আশা করছেন বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উপজেলায় আমের ফলন আশানারুপ হবে।উপজেলায় মল্লিকা, চুষা, আশ্বিনা, ল্যাংড়া, হিমসাগর, ফজলি, লতা, বারি ৪, আম্রপলি, গোপালভোগ সহ অন্যান্য জাতের আম চাষের হয়। সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ও বাগান মালিক জানান, নিয়মিত পরিচর্যা, গাছের গোড়ায় বাঁধ দিয়ে পানি সেচের কারণে সব বাগানে গাছগুলো নিয়মিত খাদ্য পাচ্ছে। ফলে আশানুরূপ ফলন বাড়ছে।
উপজেলার কপিলমুনি, গদাইপুর, হরিঢালী, রাড়ুলী, পৌরসভা, চাঁদখালীসহ বিভিন্ন এলাকা আম বাগানের গাছে মুকুল ভালো হয়নি, এমনই চিত্র দেখা গেছে। কপিলমুনি ইউনিয়নের বিরাশী গ্রামের পুরস্কারপ্রাপ্ত আম চাষি অখিলবন্ধু ঘোষ জানান, বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। বাগানের আম গাছে মুকুল আসা শুরু করেছে। আমরা কৃষি বিভাগে গিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ গ্রহণ করছি। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও আমাদের বাগানে এসে আমের বাগান ভাল রাখার জন্য বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। পুরোপুরিভাবে শীত বিদায়ের আগেই মুকুল না আসলে ভাল ফলন ভালো হবে না। ঘন কুয়াশায় মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যদিও ফাগুনে কুয়াশার আশংকা কম তারপরও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতির বিরূপ আচারণে আমের মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।হরিঢালীর আকবর হোসেন, গদাইপুরের মোবারক ঢালী, তকিয়ার মুজিবর গাজীসহ বিভিন্ন এলাকার আম ব্যবসায়ীরা জানান, ঋণ করে আগাম আম বাগান নিয়েছে। অনেক চাষী আম বিক্রি ঋণের টাকা পরিশোধ করবে।আমের মুকুল বের হওয়া আর ফলনের উপর নির্ভর করছে করছে আম চাষির সপ্ন।
কুষিবিদরা জানান, আমগাছের বহু সমস্যার মধ্যে একটি বড় সমস্যা হলো প্রতি বছর ফুল ও ফল না আসা। দেখা গেছে, একেবারেই ফুল হয় না বা হলেও কোনো কোনো বছর খুব কম হয়। যখন অনেক গাছে এক বছর খুব ফুল হয় আর পরের বছর একেবারেই হয় না বা খুব সামান্য হয় এবং তৃতীয় বছর আবার খুব বেশি ফুল আর চতুর্থ বছর কিছুই না বা কম অর্থাৎ এরা একটু ছন্দের মতো চলে। এই রকম হলে বলা হয় ‘অলটারনেট বা বায়িনিয়াল বেয়ারিং’। আবার যেসব গাছে হয়তো এক বছর খুব বেশি ফুল হলো, তারপর দু-তিন বছর হলো না বা কম হলো, কিংবা পরপর দু’তিন বছর বেশ ফুল হলো তারপর এক বছর বা কয়েক বছর বন্ধ থাকে অর্থাৎ এরা একটু এলোপাতাড়ি ধরনের। এদের বলা হয় ‘ইরেগুলার বেয়ারার’। এই দুটি সমস্যা অনেক আমগাছে দেখা যায়। যে বছর খুব বেশি ফুল হয়, সেই বছরটিকে উদ্যান বিজ্ঞানে বলা হয় ‘অন ইয়ার’, আর বিনা ফলন বা কম ফলনের বছরকে বলা হয় ‘অফ-ইয়ার’। আমের একটি ডালে মুকুল আসতে হলে, ফুল আসার আগে ডালটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে শর্করা ও নাইট্রোজেন দুই-ই থাকতে হবে আর শুধু তাই নয়, শর্করার ভাগ নাইট্রোজেনের ভাগের চেয়ে যথেষ্ট বেশি থাকতে হবে তবেই মুকুল আসবে। আর যদি দুটির ভাগ সমান হয় বা বিশেষ করে ডালটির নাইট্রোজেনের মাত্রা শর্করার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে ঐ ডালটির ডগায়, বসন্তকালে মুকুল আসার বদলে পাতা এসে যাবে। আম গাছের এই সমস্যাটির জন্য উদ্ভিদ হরমোন ‘অক্সিন’, ‘জিবেরেলিন’ ও বিশেষ করে ‘গ্রোথ ইনহিবিটর’ জাতীয় হরমোনগুলো দায়ী বলে মনে করা হয়।
মাটিতে প্রয়োজনীয় পানি/রসের অভাব হলে সার প্রয়োগের পর সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। ফিডার রুটগুলো গাছের গোড়া থেকে দূরে থাকে। যে বছর গাছে প্রচুর ফুল আসে, সে বছর যদি গাছের অধের্ক ফুল ভেঙে দেয়া হয়, তাহলে গাছের সেই অংশ নতুন শাখা উৎপন্ন করবে। আগামী বছর সেই অংশে ফুল ও ফল উৎপন্ন করবে। এভাবে আম গাছ থেকে নিয়মিত ফলন পাওয়া যেতে পারে।
বাণিজ্যিক জাত যেমন, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, খিরসাপাত, আশ্বিনা ইত্যাদির অলটারনেট বেয়ারিং হ্যাবিট আছে এবং বারি আম-১, বারি আম-২, বারি আম-৩, বারি আম-৪ ইত্যাদি রেগুলার বেয়ারর জাত। তাই বাগানে শুধু ‘অলটারনেট বেয়ারার’ জাতের গাছ না লাগিয়ে, অন্তত কিছুসংখ্যক ‘রেগুলার বেয়ারার’ জাতও লাগানো উচিত। এতে প্রতি বছরই বাগান থেকে কিছু না কিছু ফলন পাওয়া যাবে। বাগানের গাছগুলোকে অধিক উৎপাদনক্ষম করার জন্য অবশ্যই আম বাগান বছরে ৩ বার বর্ষার আগে, বর্ষার পরে ও শীতকালে লাঙল, পাওয়ার টিলার অথবা কোদাল দ্বারা কুপিয়ে ভালোভাবে গভীর চাষাবাদ করতে হবে। ফলে বাগানের আগাছা মারা যাবে এবং মাটির সাথে মিশে জৈবসারে পরিণত হবে। মাটির ভেতরকার পোকামাকড়ও মরে জৈব পদার্থ হিসেবে মাটিতে যোগ হবে। তাছাড়া মাটির আর্দ্রতা ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং পুষ্টি উপাদানগুলো গাছের গ্রহণের উপযোগী হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমাদের পাইকগাছায় ৯০ ভাগ গাছে মুকুল চলে এসেছে, চাষীদের ফুল ফোটার অবস্থায় কোন ঔষধ বা কীটনাশক ব্যবহার না করতে বলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এ সময়ে বাগানে হপার এবং ফুদকী পোকা গুলো গাছের বাকলে লুকিয়ে থাকে। এ ধরনের পোকা খুব বেশী দেখা দিলে অনুমোদিত কীটনাশক নাশক স্প্রে করার পরামর্শ প্রদান করছি। কুয়াশার কারণে আমের মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হতেপারে। এজন্য অনুমোদিত সালফার বা বালাই নাশক স্প্রে’র পরামর্শ দিয়েছেন। আবহাওয়া যদি রৌদ্রজ্জ্বল হয় এবং তাপমাত্রা বাড়ে তবে গুটি ভালো হবে।

ইমদাদুল হক,
পাইকগাছা(খুলনা) প্রতিনিধি।।

Please Share This Post in Your Social Media






© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY AMS IT BD