নাগেশ্বরীতে কর্মচারী নিয়োগে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ

এম এস সাগর,

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর আদর্শ দ্বি মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের কর্মচারী নিয়োগে তিন পদে ২৪লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে খোদ স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্বাছ আলী ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বদিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে। এমন কি ঘুষ নেয়ার কথাও অকপটে স্বীকারও করেছেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বদিয়ার রহমান।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, কোন ধরণের নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না সম্প্রতি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর আদর্শ দ্বি মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে তিন জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সে সময় দক্ষ ও যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের নিয়োগ দেয়ার লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন কি নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য পরামর্শ দেয়ার পরেও অতি গোপনে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন করেন। ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সাথে দ্বন্দ্বের জেরে প্রধান শিক্ষক দীর্ঘ এক মাস থেকে বিদ্যালয়ে আসেন না। গত ২৫জানুয়ারি বিকেলে প্রধান শিক্ষক আব্বাছ আলী ও তার ছেলে আরিফুল ইসলাম দলবল নিয়ে এসে স্কুলে তার কক্ষের তালা ভেঙে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায় এবং একটি নতুন তালা দিয়ে চলে যান। অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের অবহেলায় গত বছর বার্ষিক পরিক্ষায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী একজনও অংকে পাশ করতে পারে নাই।

সন্তোষপুর আদর্শ দ্বি মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি বদিয়ার রহমান জানান, প্রধান শিক্ষক আব্বাছ আলী স্কুলে নিয়োগ-প্রাপ্তের পর থেকে তিনি বিদ্যালয়ে সঠিকভাবে উপস্থিত থাকেন না। বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান অনেক খারাপ। প্রধান শিক্ষক অতি কৌশলে ম্যানেজিং কমিটির কাছ থেকে রেজিলেশন খাতা ও বিভিন্ন কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে অতি গোপনে তিন জন কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে ২৪লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছি।

শিক্ষার্থীরা জানান, প্রধান শিক্ষকের অবহেলার কারণে আমরা সঠিক শিক্ষার আলো থেকে পিছিয়ে পরছি। বিদ্যালয়ে সঠিকভাবে পাঠদান হয়না। আমাদের পড়ালেখা ধ্বংস হচ্ছে।

সহকারী প্রধান শিক্ষক শেখ মোঃ আবু সালেহ ও আরফান আলী বলেন, প্রধান শিক্ষক স্যার এক মাস থেকে স্কুলে আসেন না। তিনি গোপনে নিয়োগ দিয়েছেন বলে আমরা শুনেছি।

অভিভাবকরা জানান, প্রধান শিক্ষক আব্বাছ আলী নিয়োগ-প্রাপ্তের পর থেকে বিদ্যালয়টি দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিনিত হয়েছে। নীতিমালা বহির্ভূত করে অতি গোপনে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী তিন জনকে নিয়োগ দিয়ে ২৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

স্থানীয় শফিকুল আলম বাবু বলেন, আমার ছেলে কে নৈশ্য প্রহরী পদে নিয়োগের জন্য ১০লাখ টাকার চুক্তিবদ্ধ হয়ে সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান মিজু ও সুজা মেম্বারের উপস্থিতিতে প্রধান শিক্ষক কে ৩লাখ টাকা দিয়েছি। আমার ছেলের চাকরি হয়নি।

সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত আয়া ইসমত আরা বলেন, পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছি। আর কিছু বলতে পারবো না।

সন্তোষপুর আদর্শ দ্বি মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্বাছ আলীর পুত্র আরিফুল ইসলাম বলেন, আপোষ হয়েছে আবার আপোষ হওয়ার বাকিও নাই।

দাতা কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক ও ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক সদস্য মাসুদ রানা বলেন, প্রধান শিক্ষক আব্বাছ আলী স্কুলে কোন জাতীয় দিবস পালন করে না। গোপনে নিয়োগ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতে স্কুলে আসেন না। উধ্বতর্ন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *