আব্দুর রহিম বাবলু :
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের গণমানুষের নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়ার ১৮ তম মৃত্যু বার্ষিকী ২৭ জানুয়ারী শুক্রবার নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া ফাউন্ডেশন সদস্য সচিব, উপজেলা চেয়ারম্যান সমিতি সভাপতি ও ঢালুয়া ইউপি চেয়াম্যান নাজমুল হাসান ভূঁইয়া বাছিরের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ও ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বাদ ফজর কোরআন খতম, সকাল সাড়ে ১০টায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, ১১টায় পুষ্পস্তবক অর্পণ ও কবর জিয়ারত এবং দুপুর ১২টায় তাবারুক বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া ১৯৪৮ সালে নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি নাঙ্গলকোটবাসীকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নিয়ে চলে যান।
দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন, নাঙ্গলকোট উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি শামছু উদ্দিন কালু, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী হোসেন চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক আবু ইউসুফ ভূঁইয়া, কুমিল্লা জেলা পরিষদ সদস্য আবু বকর সিদ্দিক আবু, নাছরিন আক্তার মুন্নি, উপজেলা চেয়ারম্যান সমিতি সাধারণ সম্পাদক ও মৌকরা ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন আলমগীর, বাঙ্গড্ডা ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান মজুমদার, এয়াকুব আলী মজুমদার, রায়কোট দক্ষিণ চেয়ারম্যান আবুল কালাম ভূঁইয়া, সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুল হক মজিব, মক্রবপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মর্তুজা চৌধুরী মুকুল, হেসাখাল ইউপি চেয়াম্যান ইকবাল বাহার মজুমদার, বটতলী ইউপি চেয়াম্যান আব্দুল জলিল, আদ্রা উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম, জোড্ডা পূর্ব ইউপি চেয়াম্যান নূরুল আফসার, উপজেলা আ’লীগ প্রচার সম্পাদক শাহ খোরশেদ আলম, উপজেলা ছাত্রলীগ সাবেক সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক সুমন, উপজেলা স্বেচ্চাসেবকলীগ সভাপতি ওমর ফারুক মামুন, সাধারণ সম্পাদক শেখ রাসেল মজুমদার, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ সাবেক সহ-সভাপতি হাসান খোরশেদ ভূঁইয়া ফরহাদ, উপজেলা কৃষক লীগ সভাপতি হারুনুর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ, উপজেলা শ্রমিকলীগ সভাপতি নুরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আলী নোয়াব, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুল ইসলাম রুবেল, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, বিভিন্ন ইউনিয়ন আ’লীগ ও এর আঙ্গ সংগঠন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ।
জানা যায়, সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়ার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। জীবদ্দশায় তিনি আওয়ামী রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৭ সালে জীবনের প্রথম নির্বাচনে নাঙ্গলকোটের ঢালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী হন। বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে ১৯৭৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগের দূর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন। তরুণ বয়সে নৌকার কান্ডারি। জীবনের প্রথম সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পরবর্তীতে এরশাদ মন্ত্রীসভার প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদকে বিশাল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে সারাদেশে আওয়ামী লীগের মাত্র ৩৯ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া ছিলেন অন্যতম একজন। প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হয়ে তিনি চৌদ্দগ্রামের হোমনাবাদ অঞ্চল এবং লাকসাম উপজেলার অবহেলিত পাঁচটি ইউনিয়নের সমন্বয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা (থানা) গঠনের প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করেন। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৮৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর নাঙ্গলকোট উপজেলা প্রতিষ্ঠা হয়; উপজেলা প্রতিষ্ঠার পূর্বে এটি লাকসাম ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার অংশবিশেষ ছিল।
জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া ১৯৮৬ এবং ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু তিনি সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিশাল ভোটের ব্যবধানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি নাঙ্গলকোটে ব্যাপক উন্নয়ন করেন। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভ করেন। কিন্তু ওই নির্বাচনে তিনি পরাজিত হয়। প্রয়াত জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া খুবই সাধারণ জীবন যাপন করতেন। ব্যাপক জনপ্রিয়তায় তিনি নাঙ্গলকোটের মাটি ও মানুষের খেতাব লাভ করেন।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া নাঙ্গলকোটবাসীকে নিঃশব্দে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নিয়ে চলে যান। তাঁর তিনটি জানাজায় লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশগ্রহণ করে। নিজ বাড়ি বদরপুরে বাড়ির পার্শ্বে পুকুর ধারে সবুজ বৃক্ষে ঘেরা শ্যামল মাটিতে তাকে অন্তিম শয়ানে শায়িত করা হয়।

Leave a Reply