May 13, 2025, 11:13 am

বিজ্ঞপ্তি :
বিশেষ সতর্কীকরন - "নতুন বাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত সকল সংবাদের দ্বায়ভার সম্পুর্ন প্রতিনিধি ও লেখকের। আমরা আমাদের প্রতিনিধি ও লেখকের চিন্তা মতামতের প্রতি সম্পুর্ন শ্রদ্ধাশীল। অনেক সময় প্রকাশিত সংবাদের সাথে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে। তাই যেকোনো প্রকাশিত সংবাদের জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। নতুন বাজার পত্রিকা- বাংলাদেশের সমস্ত জেলা, উপজেলা, ক্যাম্পাস ও প্রবাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! বিস্তারিত: ০১৭১২৯০৪৫২৬/০১৯১১১৬১৩৯৩
শিরোনাম :
ভঁায়না ইউনিয়ন বিএনপির বাদশা সভাপতি,রফিক সেক্রেটারী ও কানু সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত সুজানগর উপজেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের উদ্বোধন পাইকগাছার গড়ইখালীতে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত পাইকগাছায় বিএনপি নেতাদের নামে মি-থ্যা মাম-লা প্রত্যা-হার ও সন্ত্রা-সী শিব- সত্যকে গ্রেফ-তারের দাবি ; মানববন্ধন ও বিক্ষো-ভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত পাইকগাছায় তীব্র গরমে তৃষ্ণা মেটাতে ফুট পথের শরবতে ভরসা ; বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি গোদাগাড়ীর ইউএনও মাদ-কের বিরুদ্ধে নানা মুখী পদক্ষেপ মাধবপুরে ক্লুলেস হ-ত্যা মা-মলার রহস্য উদঘাটন  আসামী গ্রে-ফতার পোরশার ভাই-বোন খু-নের মূ-ল আ-সামি গ্রে-প্তার মধ্যনগরে যুবদল নেতা রায়হানের উপর সন্ত্রা-সী হাম-লার প্রতি-বাদে বিক্ষো-ভ মিছিল বিশ্ব ঐতিহ্য সম্ভাবনায় উপকূলে সুন্দরবনের প্রায় ৭০০ কোটি টাকার কাঁকড়া রপ্তানি আয় তিন বছরে দ্বিগুণ
নড়াইলে জীবিত কবর খুঁড়ে পুতে রাখা মুক্তিযোদ্ধাদের রাস্ট্রীয় স্বীকৃত চায়

নড়াইলে জীবিত কবর খুঁড়ে পুতে রাখা মুক্তিযোদ্ধাদের রাস্ট্রীয় স্বীকৃত চায়

উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে:
নড়াইলে কবর খুঁড়ে জীবিত পুতে রাখা মুক্তিযোদ্ধাদের রাস্ট্রীয় স্বীকৃত চায়। নড়াইলের বধ্যভূমি পাকবাহিনী ও তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগী আলবদর-রাজাকারদের সৃষ্ট। নড়াইল জেলা জজ আদালতের ২৫ গজ দূরে ডাক অফিসের দ্বিতল বাড়ির পেছনে রয়েছে এই বধ্যভূমি। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে অসংখ্য নারী-পুরুষকে ধরে এনে এই ক্যাম্পে নির্যাতন চালায় পাকবাহিনী। নির্যাতন-ধর্ষণের পর ক্যাম্পের পেছনে দেয়াল ঘেরা জঙ্গলে হত্যা করে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হত তাদের, কারো কারো পেট ফেঁড়ে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হত। ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী নারকীয় হত্যাকান্ড, ধর্ষণ, নির্যাতন এর মতো জঘন্য অপরাধ করেছে। নড়াইল জেলার নদীগুলোতে গণহত্যার পর লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হত, পাড়েও ফেলে রাখা হত অসংখ্য লাশ। শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত করা হয়েছে গনকবর,বদ্ধভুমি,স্মৃতিসৌধ। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান,
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে দশ লক্ষাধিক মানুষের বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণে স্বাধীনতার যে আহ্বান ছিল নড়াইলের মুক্তিপাগল জনতা তা থেকে পিছপা হয়নি। ওই সময় নড়াইলের এসডিও’র বাসভবনকে স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধের হাই কমান্ডের সদর দপ্তর করা হয়। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে তৎকালীন নড়াইলের এসডিও কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, এমএনএ খন্দকার আব্দুল হাফিজ, এমপিএ শহীদ আলী খান, আওয়ামী লীগ নেতা এখলাছ উদ্দিন, বিএম মতিয়ার রহমান লোহাগড়া হাইস্কুলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও নড়াইলের সংগঠিত মুক্তিযোদ্ধাদের এক করে বিশাল বাহিনী যশোর অভিমুখে পাঠিয়ে দেন।
এ দিকে নড়াইলের জামায়াত নেতা মাওলানা সোলায়মানের নেতৃত্বে ‘শান্তিবাহিনী গঠিত হয়’। এ বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে দেশ প্রেমিক শত শত মানুষকে ধরে এনে নড়াইল ডাকবাংলোয় আটকে রাখা হত। এসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কাল্পনিক অভিযোগ এনে মাওলানা সোলায়মান রেজিস্ট্রারে যাদের নামের পাশে লালকালি দিয়ে ‘রিলিজ ফর ইভার’ লিখে দিত, তাদের গভীর রাতে নড়াইল শহরের লঞ্চঘাটের প্লাটুনের ওপর নিয়ে গিয়ে গলা কেটে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়া হত। এভাবে মাওলানা সোলায়মান চেনা অচেনা সহস্রাধিক মানুষকে গলা কেটে হত্যা করে বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।
মাওলানা সোলায়মানসহ অন্য্যা রাজাকাররা তুলারামপুরের আওয়ামী লীগের সদস্য, নড়াইল ভিসি স্কুলের মাস্টার শহীদ আতিয়ার রহমান তরফদার, শহীদ আ. সালাম তরফদার, শহীদ মকবুল হোসেন সিকদার, শহীদ মাহাতাব তরফদার, শহীদ মোকাম মোল্যা, শহীদ কাইজার মোল্যা, শহীদ আলতাফ হোসেন তরফদার, শহীদ রফিকুল উদ্দিন তরফদার, ও চাচড়া গ্রামের শহীদ ফয়জুর রহমানসহ অনেককে ধরে এনে শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকায় নিয়ে হত্যা করে কবর খুঁড়ে সেখানে পুতে রাখে। যেটা এখন গনকবর হিসাবে চিহ্রিত করে নড়াইল মুক্তদিবস.বুদ্ধিজীবি দিবস,বিজয় দিবস ও স্বাধিনতা দিবসে ফুলের মালা দিয়ে সরকারী ভাবে পালন করা হয়।
এ বিষয়ে শহীদ মকবুল হোসেন সিকদারের ছোটবোন জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ইসমত আরা বলেন, নড়াইল মুক্তদিবস.বুদ্ধিজীবি দিবস,বিজয় দিবস ও স্বাধিনতা দিবসে ফুলের মালা দিয়ে সরকারী ভাবে পালন করা হয়। জীবিত কবর দেওয়া এসব শহীদদের মধ্যে শুধুমাত্র শহীদ রফিকুল উদ্দিন তরফদারকে রাস্ট্রীয় স্বীকৃত দেওয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের দৃষ্টি আকর্ষন করছি যেন অচিরেই বাকী সকল শহীদদের রাস্ট্রীয় স্বীকৃত দেওয়া হয়।
এছাড়া নকসালরা পেড়লী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আ. হামিদ মোল্যা, আবুয়াল হোসেন, নায়েব নজির হোসেনসহ অনেককে হত্যা করে।
৬ এপ্রিল সকালে পাক হানাদার বাহিনী দুটি জেট বিমান হতে নড়াইল শহরের ওপর ব্যাপক ভাবে মেশিনগানের গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করে প্রচুর ক্ষতি করে। এরপর নড়াইল শহর জন শূন্য হয়ে পড়ে। ১৩ এপ্রিল হানাদার বাহিনীর একটি দল নড়াইল শহরের চৌরাস্তায় রেস্টুরেন্ট মালিক মন্টুকে গুলি করে আহত করে এবং হরিপদ সরদার, ভাটিয়া গ্রামের কালু বোস, সরসপুর গ্রামের প্রফুল্য মিত্রকে ধরে নিয়ে দাইতলা পুলের কাছে গুলি করে ফেলে রেখে চলে যায়।
এদিকে ক্যাপ্টেন দোহারের উদ্যোগে লোহাগড়ার ইতনা ও আওড়িয়ায় প্রশিক্ষণ শিবির খোলা হয়। এ কারণে মধুমতি-নবগঙ্গা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের ভাটিয়াপাড়াস্থ হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প হতে তাদের দোসরদের সহযোগিতায় গানবোট যোগে ইতনা গ্রামে নৃশংস অভিযান চালিয়ে ওই গ্রামের ৫৮ জন নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যা করা হয়।
এভাবে শত কষ্টের মাঝেও দেশ হানাদার মুক্ত করার এক দুর্জয় আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মুক্তি বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে সদর থানায় উজির আলী, লোহাগড়া থানায় মোক্তার আলী, কালিয়া থানায় ওমর আলী এবং মুজিব বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে সদর থানায় শরীফ হুমায়ুন কবীর,শেখ আজিবর রহমান, লোহাগড়া থানায় শরীফ খসরুজ্জামান, কালিয়া থানায় আব্দুল মজিদ সরদারকে নিযুক্ত করা হয়। পরে তারা নড়াইলে প্রবেশ করে।
অক্টোবর মাস হতে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মুক্তিপাগল মানুষের মনে এক বিশ্বাস জন্মাতে থাকে যে হানাদার বাহিনী বা তাদের দোসররা আর বেশিদিন টিকতে পারবে না। ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকেই নবগঙ্গা নদীর উত্তর ও পূর্বাঞ্চল হানাদার মুক্ত হয়ে যায়। লোহাগড়া থানা পাক হানাদার বাহিনীর ঘাঁটিকে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মুক্তি বাহিনীর কমান্ডার গণ আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়।
তবে তারা আত্মসমর্পণ না করায় ৮ ডিসেম্বর শরীফ খসরুজ্জামান, দবির উদ্দিন, ইউনুস আহমেদ, লুৎফর মাস্টার, আলী মিয়া, লুৎফর বিশ্বাসসহ আরও অনেক গ্রুপ এক হয়ে সম্মিলিত ভাবে তিন দিক থেকে লোহাগড়া থানা আক্রমণ করে। প্রচন্ড যুদ্ধের পর হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে।
এরপর মুক্তিযোদ্ধারা নড়াইলে হানাদার বাহিনীর ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ৮ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী শেখ আজিবর রহমান,এস এম ফজলুর রহমান জিন্নাহের নেতৃত্বে নড়াইল কলেজের দক্ষিণে মাছিমদিয়া গ্রামে সমবেত হয়ে পুলিশ-রাজাকারদের ওপর অতর্কিত হামলা চালালে এই যুদ্ধে তরুণ মুক্তিযোদ্ধা জয়পুরের মিজানুর রহমান হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন।
মিজানুর রহমানের মৃতদেহ হানাদার বাহিনীর দোসররা হাত-পা বেঁধে বাঁশে ঝুলিয়ে রাখে। পরে নড়াইল শহর প্রদক্ষিণ করে কৃতিত্ব দেখায় এবং ছবি তোলে। এ ঘটনার পর ৯ ডিসেম্বর রাতে বিজয়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কমান্ডার ফজলুর রহমান।

উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে।

Please Share This Post in Your Social Media






© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY AMS IT BD