মোরেলগঞ্জে ১৫০ প্রান্তিক কৃষকের হাতে বিনামূল্যে বীজ–সার ও কৃষি উপকরণ বি-তরণ

এস. এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বিশেষ প্রতিনিধি :
দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিপ্রধান জেলা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে সরকারি কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে বীজ–সার ও কৃষি উপকরণ বিতরণের মধ্য দিয়ে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। রবি শস্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২৫–২৬ অর্থবছরের আওতায় উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার দেড় শতাধিক দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের হাতে উন্নতমানের উফশী ও হাইব্রিড বোরোধানের বীজসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে মোরেলগঞ্জ অফিসার্স ক্লাব চত্বরে আয়োজিত এ বিতরণ অনুষ্ঠানে সকাল থেকেই বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের উপস্থিতিতে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। হাতে চাষাবাদের ক্যালেন্ডার, চোখে নতুন মৌসুমের স্বপ্ন—দীর্ঘ অপেক্ষার পর নাম ডাকার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকেরা একে একে বীজ–সার গ্রহণ করে ঘরে ফেরেন। পুরো আয়োজনজুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ।
কৃষকদের মাঝে যে সহায়তা পৌঁছেছে
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়—
সরিষা বীজ পেয়েছেন ৩০ জন
গম বীজ পেয়েছেন ২ জন
পেঁয়াজ বীজ পেয়েছেন ২ জন
বাদাম বীজ পেয়েছেন ২ জন
বোরোধানের বীজ পেয়েছেন ৪০ জন
সব মিলিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মোট দেড় শতাধিক কৃষক এ কৃষি সহায়তার আওতায় এসেছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্য
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কৃষকদের হাতে বীজ–সার তুলে দেন বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ। তিনি বলেন—
“প্রান্তিক কৃষকদের শক্তিশালী করা ছাড়া দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সরকার চায়, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। তাই কৃষকদের কাছে সময়মতো উন্নতমানের বীজ ও সার পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।”
তার বক্তব্যে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার তথ্যসমৃদ্ধ বক্তব্য
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন—
“মোরেলগঞ্জের কৃষকেরা প্রতি বছর উন্নতমানের ধান উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের খাদ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে আসছেন। এই বিনামূল্যের বীজ–সার বিতরণ কর্মসূচি তাদের উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
তিনি আরও জানান, সরকারি এই বীজ ও সার সাধারণ বাজারের তুলনায় মানসম্মত হওয়ায় কৃষকের উৎপাদন খরচ কমে এবং ফলন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ে।
উপস্থিত কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন—
উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. তারেক হাসান, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রঞ্জিত কুমার, উপজেলা পানি সম্পদ কর্মকর্তা রেজাউল করিম, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আশিকুর রহমান, সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আলী আশরাফসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা। তাঁদের উপস্থিতি ও উৎসাহমূলক বক্তব্য অনুষ্ঠানের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তোলে।
কৃষকদের অনুভূতি—‘নতুন আশার আলো’
বীজ–সার সংগ্রহ করে ফেরার পথে কথা হয় কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে।
গোলবুনিয়া গ্রামের কৃষক মফিজুল ইসলাম বলেন—
“বর্তমান বাজারে সার–বীজের দাম অনেক বেশি। সরকারের এই সহায়তা না পেলে ঠিকমতো আবাদ শুরু করা কঠিন হতো। এখন নিশ্চিন্তে জমিতে নামতে পারব।”
অন্যদিকে কৃষক রফিকুল মল্লিক বলেন—
“হাইব্রিড বীজ পেয়ে আমরা খুবই খুশি। এগুলো থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায়। আমাদের মতো প্রান্তিক কৃষকের জন্য এটি বড় সহায়তা।”
কৃষি প্রণোদনায় উৎপাদনে ইতিবাচক পরিবর্তন
কৃষি বিভাগ জানায়, গত কয়েক বছরে সরকারি প্রণোদনা কর্মসূচির ফলে মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ধান উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। উন্নত জাতের বীজ ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে ফলন বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। এ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার কৃষক বিভিন্ন সময়ে এ কর্মসূচির আওতায় উপকৃত হয়েছেন, বেড়েছে কৃষকের আয় ও জীবনমান।
চলতি মৌসুমে এই বীজ–সার বিতরণের মধ্য দিয়ে মোরেলগঞ্জের কৃষকদের চোখে আবারও জেগেছে নতুন আশার আলো। তারা প্রত্যাশা করছেন—এবারও মাঠ ভরে উঠবে সোনালি ধানে, আর সেই ধানেই ফিরবে কৃষকের স্বপ্ন ও স্বস্তি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *