সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে দে-খে নেয়ার হু-মকি রংপুর পুলিশ সুপারের

খলিলুর রহমান খলিল, নিজস্ব প্রতিনিধি:

পুলিশের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ আমার দেশ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ও রংপুর অফিস প্রধান বাদশাহ ওসমানীসহ সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন রংপুর জেলা পুলিশ সুপার মারুফত হোসাঈন। এ ঘটনায় রংপুরসহ উত্তরাঞ্চ‌লের সাংবাদিকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আজ্ঞাবহ,খুনি হাসিনার মদতপৃষ্ট ও দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সাধারণ জনতাকে গুলি করে হত্যাকারী এবং আবু সাঈদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বদলাতে চাপ প্রয়োগকারী পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছাত্র জনতার উপর হামলাকারী ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত অসংখ্য পুলিশের বিরুদ্ধে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা সঠিক তথ্য তুলে ধরে সাহসিকতার সাথে একের পর এক সংবাদ প্রকাশিত হয়। তথ্যনির্ভর সংবাদ প্রকাশ এখনো অব্যাহত রয়েছে।

এ কারণে রংপুর জেলা পুলিশ সুপার ক্ষিপ্ত হয়ে আমার দেশ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ও রংপুর অফিস প্রধান বাদশাহ ওসমানীকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এ বিষয়ে বাদশাহ ওসমানী জানান, চলতি মাসের ১১ ডিসেম্বর আমার দেশ অনলাইনে ‘ঘুষের টাকা না দেওয়াই খুনের আসামি’ শিরোনামে রংপুরের গঙ্গাচড়া মডেল থানার সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) উত্তম কুমারের বিরুদ্ধে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলাম বিষয়টি তদন্তের জন্য নবাগত পুলিশ সুপার মারুফত হোসাইনকে দায়িত্ব দেন।
১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ সুপার ঘটনাটি তদন্তের জন্য গঙ্গাচড়া মডেল থানায় যান। এসআই উত্তম কুমারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা এমন তথ্য জানার জন্য পুলিশ সুপারকে হোয়াটসঅ্যাপে কয়েকবার ফোন দেই। তিনি ফোন রিসিভ না করে বারবার কেটে দিলে ওনার হোয়াটসঅ্যাপে ‘আপনি যদি ফোন না ধরেন কথা না বলেন আপনার বক্তব্য ছাড়াই আপনার লোকজনের বিরুদ্ধে নিউজ হয়ে যাবে পরে আমাকে দোষারোপ করবেন না’ এই শব্দ লেখে একটি খুদে মেসেজ পুলিশ সুপারের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়। মেসেজ পাওয়ার পরেই তিনি ফোন ব্যাক করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। তিনি বলতে থাকেন, তোমার এত বড় সাহস তুমি আমাকে হুমকি দাও, তুমি পুলিশের বিরুদ্ধে এত নিউজ করো। তুমি কত বড় সাংবাদিক এটা আমার জানা আছে। পুলিশের বিরুদ্ধে আর একটা নিউজ করে দেখো তোমাকে দেখে নেয়া হবে। তুমি কিসের সাংবাদিক। কত বড় হইছ। তুমি আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের নামে মামলা করেছে। তুমি একটি মামলার বাদী। কিভাবে তুমি মামলা করেছ সেটাও আমি দেখে নিব। তোমাকে দেখার জন্য এবং সাংবাদিকদের দেখার জন্য আমি রংপুর জেলায় বদলি নিয়েছি। পুলিশের বিরুদ্ধে আর একটি নিউজ প্রকাশিত হলে আমি তোমাকে ছাড় দেবো না বলে হুমকি প্রদান করেন। পুলিশ সুপারের এই হুমকির পর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বলে তিনি জানান।
বাদশাহ ওসমানী আরো বলেন, পুলিশ সুপার মারুফত হোসাইনের হুমকির পর পরই বিষয়টি রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলামসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দদের জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের আহবায়ক সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুস শাহেদ মন্টু জানান, বাদশাহ ওসমানী কি মানের সাংবাদিক সেটা পুলিশ সুপারের দেখার বিষয় নয়। দেখি তিনি বাদশাহ ওসমানীর কি করেন বা কেমন সাংবাদিক। তাকে হুমকি দেওয়া কখনো মেনে নেওয়া হবে না। পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে প্রয়োজন হলে আমরা রাস্তায় নামবো।
রংপুর বিভাগীয় প্রধান লিয়াকত আলী বাদল বলেন, পুলিশ সুপার মারফত হোসাঈনের ব্যবহার ভালো না তিনি সাংবাদিকদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। তারাগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রীকে গলাকেটে হত্যা ঘটনার বিষয়ে পুলিশ সুপারকে ফোন দিলে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন, আমি ছাড়া কি আর কর্মকর্তা নেই কেন আমাকে বারবার ফোন দিয়ে বিরক্ত করেন, আপনার ফোন দিয়ে আমাকে বিরক্ত করবেন না বলে ফোন কেটে দেন।
লিয়াকত আলী বাদল আরো বলেন, যে পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের সাথে ভালো আচরণ করে না উল্টো হুমকি দেয় এরকম পুলিশ সুপার দরকার নেই কারণ সামনের নির্বাচনে তথ্য না দিলে সাংবাদিকরা সঠিক তথ্য থেকে বঞ্চিত হবে। তাই তাকে এখান থেকে বদলি করার দাবি জানান তিনি।

রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, গঙ্গাচড়ায় পুলিশের ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে পুলিশ সুপার মারুফত হোসাইনের কার্যালয়ে তথ্য নিতে গেলে পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। রংপুরের অনেক সিনিয়ার সাংবাদিকদের সাথে তিনি খারাপ আচরণ করেছেন তার কথাবার্তা মোটেও ভালো না।
১৬ ডিসেম্বর বিভাগীয় কমিশনারের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়ও পুলিশ সুপার মারুফত সাংবাদিকদের টোন করে বলেন, সাংবাদিকরা এত সাক্ষাৎকার নিয়ে কি করে এগুলো কোথায় দেখাবেন। তার এমন মন্তব্যে উপস্থিত সাংবাদিকেরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। এর আগেও তিনি সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদল মাহবুবুর রহমান জুয়েল আহমেদ সরকার মাজহারুল মান্নানসহ অসংখ্য সাংবাদিকের সাথে খারাপ আচরণ করেছেন বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাদশাহ ওসমানী একজন পরীক্ষিত এবং আওয়ামী লীগের হাতে নির্যাতিত একজন সাংবাদিক। ইতিপূর্বেও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাবেক পলাতক পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বাদশাহ ওসমানীকে ধরে নিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল। বর্তমান পুলিশ সুপার একই পথে হাঁটছেন। বাদশাহ ওসমানীসহ সাংবাদিকদের নিয়ে পুলিশ সুপারের এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ হুমকি মেনে নেওয়া হবে না। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা যদি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ না করে প্রয়োজনে আমরা কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামবো।
সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক সালেকুজ্জামান সালেক বলেন, কেমন হুমকি বরদাস্ত করা হবে না তোমরা তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করো। তার আচরণগুলো ভালো করে তুলে ধরো। ঊর্দ্ধতন পুলিশ কর্তৃপক্ষ তার ব্যবস্থাগ্রহণ না করলে পরবর্তীতে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।
অপরদিকে জানা যায়, মারফত হোসাইন দিনাজপুর জেলার পুলিশ সুপার থাকাকালীন সাংবাদিকদের সাথে খারাপ আচরণ করেছেন বলে সাংবাদিকরা অভিযোগ করেছেন। তার আচরণের কারণে সাংবাদিকরা তাকে এড়িয়ে চলতো বলে তারা জানান।
দিনাজপুর জেলা মাই টিভির প্রতিনিধি মুকুল চ্যাটার্জি বলেন, পুলিশ সুপার মারুফত হোসাইনের কথাবার্তাও ব্যবহার মোটেই ভালো নয়। তিনি সাক্ষাৎকার দিতে চাইলেও সাক্ষাৎকার দিত না। দিনাজপুরের সাংবাদিকদের তিনি সাংবাদিক মনেই করতেন না। এ কারণে সাংবাদিকরা তাকে এড়িয়ে চলত।
আমার দেশের দিনাজপুর প্রতিনিধি মাহবুব হোসেন খাঁন জানান, পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের ভালো চোখে দেখতেন না এ কারণে তাকে সবাই এড়িয়ে চলতাম। এখন তিনি রংপুরে গেছেন রংপুরে

সাংবাদিকরা বলতে পারবে তিনি কেমন।
এ বিষয়ে রংপুর জেলা পুলিশ সুপার মারুফত হোসাঈনের মোবাইল ফোনে বারবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি এমনকি হোয়াটএপএ মেসেজ দেওয়ার পরও তিনি কোন জবাব দেননি।

রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক আমিনুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি বাদশাহ ওসমানীসহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ আমাকে জানিয়েছেন। তবে পুলিশ সুপার মারুফত হোসাইন নির্বাচনি ট্রেনিংয়ে রাজশাহীতে যাওয়ায় এই মুহূর্তে কোন কিছু বলছি না । তিনি ফিরে আসুক বিষয়টি আমি দেখব।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *