রিপোর্ট : ইমাম বিমান
সুদ ব্যবসায়ী আইনজীবী মোহাম্মদ আলীর মিথ্যা ও হয়রানী মূলক ১৫টি মামলার গ্যারাকলে নিঃস্ব প্রায় অসহায় ব্যবসায়ী নাফিছা আঞ্জুমান ঐশী, কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিকার প্রার্থণা জানিয়েছেন। দেশে মহাজনি সুদ ব্যবসায়ীদের একসময়ের সেই দৌড়াত্ব্য আগের মতো আর দেখা না গেলেও এখনও নির্ভৃতে অনেকেই উচ্চসুদের ব্যবসা গোপনে করে যাচ্ছেন। যার শিকার হয় অভাবগ্রস্ত কিংবা অসহায় মানুষ। সমাজে এরা নানা ডিগ্রীধারী সজ্জন বলে পরিচিত হলেও এসব সুদ ব্যবসায়ীদের চক্রে পড়ে নি:স্ব হাজারো মানুষ। সুদ সহ আসল টাকা নেয়ার পরেও কাগজপত্রের গ্যারাকলে ফেলে সর্বসান্ত করে দেয় গ্রহীতাদের ।
এমনই একজন সুদ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী। তিনি আবার একজন আইনজীবিও বটে। নাম মোহাম্মদ আলী, রাজধানীর মুগদা থানাধীন পূর্ব মানিকনগর এলাকায় বসবাস করলেও তার বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন কাজলা তালাইমারী এলাকায় । তার পিতা মৃত রেফাউর রহমান।
অভিযোগকারী ও ডকুমেন্টস সুত্রে জানা যায়, একটি মাধ্যমে পরিচিত হয়ে রাজধানীর বাড্ডার মধ্যবাড্ডা লিংক রোড এলাকার বাসিন্দা মৃত ওয়াজেদ আলীর মেয়ে নাফিছা আঞ্জুমান ঐশী বিভিন্ন সময় চেক ও ননজুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পের বিনিময়ে সুদের উপর ২৪,৫০,০০০/- চব্বিশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা গ্রহন করেন। পরবর্তীতে চুক্তিপত্র অনুযায়ী তার সমুদয় পাওনা সুদসহ পরিশোধ করেন। আসল সহ সুদের টাকা পরিশোধ করা হলে নাফিছার দেয়া চেক ও ননজুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তিপত্র গুলি ফেরত চাইলে মোহাম্মদ আলী ডকুমেন্টসগুলি ফেরত না দিয়ে অভিযোগকারী নাফিছা আঞ্জুমান ঐশী ও তার স্বামী আসিফ আলমগীরের নিকট হতে আরও ত্রিশ লক্ষ টাকা দাবী করে। এ সময় নাফিছা আঞ্জুমান ঐশী ও তার স্বামী আসিফ আলমগীর তার দাবী মতো টাকা দিতে রাজী না হলে এবং চুক্তিপত্র ও চেক ফেরত চাইলে সে ভিন্ন ভিন্ন জেলা হতে কাল্পনিক ঠিকানা ব্যবহার করে ও নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পগুলি জাল করে ভুক্তভোগী আসিফ আলমগীর তার স্ত্রী, মা, ভাড়াটিয়া, শ্বাশুরী এমনকি তার নিযুক্ত আইনজীবির নামেও মিথ্যা ও হয়রানীমূলক ১৪টি মামলা দায়ের করে।
মামলাগুলি হলো রাজধানীর বাড্ডা থানার আমলী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের সি আর মামলা নং ৩৩৭/২০২৫, সাভার থানার আমলী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের সি আর মামলা নং ১৩৯৪/২০২৫, আশুলিয়া থানার আমলী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের সি আর মামলা নং ১২১৩/২০২৫, সাভার থানার আমলী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের সি আর মামলা নং ১০৪২/২০২৫, মতিঝিল থানার আমলী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের সি আর মামলা নং ১২৬৩/২০২৫, কদমতলী থানার আমলী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের সি আর মামলা নং ৬৪০/২০২৫, বাড্ডা থানার পিটিশন মামলা নং ১৫০পি/২০২৫, রাজশাহী জেলার শাহ মখদুম থানার আমলী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের সিআর মামলা নং ১৪৯/২০২৫, মতিহার থানার আমলী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের সি আর মামলা নং ১২৬/২০২৫, বোয়ালিয়া থানার আমলী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের সি আর মামলা নং ৯৩৯/২০২৫, বোয়ালিয়া থানার আমলী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের সি আর মামলা নং ৯৯০/২০২৫, মতিহার থানার বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট (১) আদালতের পিটিশন মামলা নং ৭০৬পি/ ২০২৫। এছাড়াও খুলনা জেলার খুলনা থানার আমলী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের সিআর মামলা নং ৮৭৯/২০২৫, একই আদালতের সি আর মামলা নং ৮৮০/২০২৫।
এ বিষয় সুদ ব্যবসায়ী আইনজীবীর গ্যারাকলে পড়া ভুক্তোভোগী নাফিছা আঞ্জুমান ঐশী ও তার স্বামী আসিফ সাংবাদিকদের বলেন, আমি এক সময় মোবাইলের খুচরা যন্ত্রাংশের ব্যবসা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। আমি সুদের উপর টাকা নিয়েছি সত্য এবং তাকে সুদ সহ নিয়মিত সিংহভাগ টাকা পরিশোধও করেছি। তিনি জানান, তিনি ফ্ল্যাট বন্ধক , গরু বিক্রয়সহ বিভিন্ন বাবদ মাসিক ৫০ হাজার পাঁচশত টাকা সুদের বিনিময়ে ২৪ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়েছেন । এর বিপরীতেই তিনি টাকাসুদ সহ পরিশোধ করেছেন। এরই প্রেক্ষিতে তার নিকট পরিশোধকৃত টাকার বিনিময়ে তার নিকট প্রদানকৃত চেক ও ষ্ট্যাম্প ফেরত চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যান এবং চক্রবৃদ্ধিহারে আরও অধিক টাকা দাবী করেন। সেটার প্রতিবাদ করলে তিনি বিভিন্ন বিজ্ঞ আদালতে আমার ও পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানী মূলক মামলাগুলি দায়ের করেন।
তিনি যেহেতু একজন আইনজীবি তাই বিজ্ঞ আদালতে মামলাগুলি দায়ের করলে এক্সটা সুবিধা পেয়েছেন এবং আদালত মামলাগুলি গ্রহন করেছেন। প্রতিটি মামলায় সমন পেয়ে বিজ্ঞ আদালতে হাজিরা দিলে আদালত উভয় পক্ষের কাগজপত্র ও বক্তব্য শুনে জামিনও দিয়েছেন। তবুও যেন থামছেনা মোহাম্মদ আলীর আক্রোশ। শুনছি তিনি আমাকে ও আমার পরিবার, আইনজীবি ও যেই আমাকে সহযোগীতা করবে তার বিরুদ্ধেও কাল্পনিক ঘটনা সৃষ্টি করে মামলা দায়ের করবেন বলে হুমকি দিচ্ছেন। সরাসরি দাবী না করলেও তিনি বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন যে, তিনি মূলত: শ্বশুরবাড়ি সুত্রে প্রাপ্ত আমার ফ্ল্যাট ও গাড়ি দখলের বাসনা করছেন। যে কারন মামলা করেছেন ও আরও করবেন।
টাকা পয়সা সুদের উপর গ্রহনের যেহেতু সকল ডকুমেন্টস বিদ্যমান এবং লেনদেনেরও যথোপযুক্ত ডকুমেন্টস রয়েছে সেহেতু ডকুমেন্টস অনুযায়ী ভুক্তভোগী আসিফ তার প্রদানকৃত চেক ও ষ্ট্যাম্প ফেরত প্রদান সাপেক্ষে বাকী টাকা প্রদানের প্রস্তাবে বারবার রাজী হলেও মোহাম্মদ আলী তার ডাকে সারা না দিয়ে তিনি মোবাইল ফোনে বিভিন্ন সময় মেসেজ দিয়েছেন যে, তাকে মতিঝিলে একা আসতে হবে, আরও ব্ল্যাংক চেক দিতে হবে এবং বিভিন্ন ভাবে তিনি হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন।
মোহাম্মদআলীর গ্রামের বাড়ি ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ আলী বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য এবং তার গ্রামের বাড়ি চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার জাতীয় শ্রমিক লীগের আইন ও দরকষাকষি বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন এবং এ সংক্রান্ত একটি পোষ্টারও দেখা গেছে।
আইনজীবি হিসেবে মোহাম্মদআলীর এহেন আচরনের প্রতিবাদে ভুক্তভোগী নাফিছা আঞ্জুমান ঐশী ও তার স্বামী আসিফ আলমগীর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে একটি অভিযোগপত্রও দাখিল করেছেন বলে জানান এবং সমুদয় কপি সাংবাদিকদের প্রদান করেন। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে প্রশাসনের নিকট মোহাম্মদ আলীর বিচার দাবী করেন

Leave a Reply