কে এম সাইফুর রহমান, গোপালগঞ্জঃ
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা মহিলা দলের এক নেত্রীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। দলীয় পদ ব্যবহার করে একের পর এক লোকজনকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো, মামলার ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, মারধর ও হয়রানির অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
অভিযুক্ত নেত্রী হলেন কাশিয়ানী উপজেলা মহিলা দলের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক লাইজু বেগম। সে ফুকরা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য শওকত হোসেন সরদারের মেয়ে।
লাইজু বেগমের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে খোদ বিএনপি নেতাসহ শতাধিক ভুক্তভোগী তার বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। এই দুশ্চরিত্র নারীর কবল থেকে বাঁচতে চান তারা সকলে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা গেছে, মহিলা দল নেত্রী লাইজু একাধিক বিয়ের তথ্য গোপন করে ‘সুন্দরী চেহারার আড়ালে’ বিভিন্ন লোকজনকে ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। দলের নাম ভাঙিয়ে লোকজনকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো এবং মামলার ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া তার পেশায় পরিণত হয়েছে। তার কর্মকান্ডে গোটা ফুকরা ইউনিয়নবাসী অতিষ্ঠ। এমনকি স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরাও তার হাত থেকে রক্ষা পাননি।
স্থানীয় বিএনপি নেতা বদরুল আলম বলেন, ‘গত ১০ অক্টোবর লাইজু বেগমের আগের স্বামী লোহাগড়া উপজেলার চরদৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা আপেল মাহমুদ ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে ফুকরা বাসস্ট্যান্ডে আমার কাউন্টারে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় লাইজু অতর্কিকভাবে কাউন্টারে মধ্যে ঢুকে তার ওপর চড়াও হয়। এক পর্যায় মারধর করতে উদ্যত হলে আমি বাধা দেই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওইদিন থানায় গিয়ে আমার বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগ করে। ১২ দিন পর একই ঘটনাস্থল দেখিয়ে আদালতে আমিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করে। লাইজু এভাবে বিভিন্ন লোকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা-অভিযোগ করে টাকার বিনিময় আপোষ করে। আমরা গ্রামবাসী এই দুশ্চরিত্র নারীর কবল থেকে বাঁচতে চাই।
ফুকরা গ্রামের ভ্যান চালক চঞ্চল মোল্যা বলেন, ‘দুই মাস আগে লাইজু ফুকরা বাজার থেকে একটি ওয়ারড্রব বাড়িতে পৌছে দিতে বলে। ভ্যান বাড়িতে না যাওয়ায় রাস্তা পর্যন্ত পৌছে দেই। আমাকে রাস্তা থেকে মাথায় করে নিয়ে পৌছে দিতে বলে। আমি অসুস্থতার কারণে ওয়ারড্রব বাড়ি পৌঁছে দিতে রাজি না হওয়ায় লাইজু নিজেই তা বহন করতে গিয়ে ভেঙে ফেলে। এরপর আমার কাছে ৪ হাজার টাকা দাবি করে এবং র্যাব-পুলিশের ভয় দেখা। একপর্যায়ে ‘গায়ে হাত দেওয়ার’ মিথ্যা অভিযোগ তুলে বলে, ‘টাকা দিবি না, তাহলে আমার গায়ে হাত দিলি কেন?’ অথচ সে আমার মেয়ের বয়সি। পরে মান-ইজ্জতের ভয়ে ২ হাজার টাকা দিয়ে রক্ষা পাই।’
ধলগ্রামের বাসিন্দা সাজ্জাদুল ইসলাম রানা বলেন, গত এক সপ্তাহ আগে আমার মুঠোফোনে অজ্ঞাত নাম্বার থেকে কল করে লাইজু আমাকে বাজারে ডেকে নেয়। সেখানে আমার ওপর চড়াও হয় এবং আমার মোটর সাইলেলের চাবি কেড়ে নেয়। এক পর্যায় মামলার ভয় দেখায়। লাইজু একজন চরিত্রহীন নারী, লোকজনকে মামলা দিয়ে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। এই দুশ্চরিত্র নারীর হাত থেকে বাঁচতে চায় এলাকাবাসী। তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হোক।’
ফুকরা বাজারের কম্পিউটার ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, ‘লোকজনকে বিপদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া তার নেশায় পরিণত হয়েছে। তবে আমার ধারণা সে মানসিকভাবে অসুস্থ। তার কর্মকান্ডে এলাকা ও দলের বদনাম হচ্ছে।’
লিটন সরদার নামে এক যুবক বলেন, ‘লাইজু আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা করেছে। সে এখন আপোষের কথা বলে লোক মারফতে মোটা অংকের টাকা দাবি করছে। টাকা দিলে সে মামলা প্রত্যাহার করবে। আমরা ফুকরা ইউনিয়নবাসী এই নারীর হাত থেকে বাঁচতে চাই।’
এ সকল অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত লাইজু বেগমের মুঠোফোনে ০১৭…৫৮৪ নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয় কাশিয়ানী উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি শিলা বেগম বলেন, ‘আমি একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো”।

Leave a Reply