ময়মনসিংহে পরিবারতন্ত্রে জিম্মি ময়মনসিংহ বড় মসজিদ-মাদ্রাসা

আরিফ রব্বানী।।

স্টাফ রিপোর্টারঃ
দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা মাওলানা আব্দুল হকের আধিপত্যবাদ এবং পরিবারতন্ত্রে জিম্মি হয়ে পড়েছে ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ফয়জুর রহমান বড় মসজিদ ও মাদরাসা। এনিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ করায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের দিয়ে হামলা, অবরুদ্ধ করে শিক্ষককের উপর আঘাত, জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা, প্রশাসন নিয়ে কটুক্তিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এসব ঘটনায় বিব্রত জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দলের রাজনীতিকরা। ঘটনার নিন্দা জানিয়ে কঠোর আইন প্রয়োগের দাবি জানিয়েছেন সকলেই।জামিয়া ফয়জুর রহমান বড় মসজিদ ও মাদরাসার প্রধান মাওলানা আব্দুল হক এর এসব আধিপত্যবাদ এবং পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মাদ্রাসা শিক্ষকরা জেলা প্রশাসক ও চক বাজার জামে মসজিদ ওয়াকফ এস্টেট কমিটির সভাপতির বরাবরে অভিযোগ করলে কমিটির সদস্যরা তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা হিসাবে স্বেচ্ছাচারীতার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিলে এসব সিদ্ধান্ত আব্দুল হক এর স্বেচ্ছাচারীতা অনিয়মের বিরুদ্ধে হওয়ায় মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের রাস্তায় আন্দোলনে নামিয়ে দেন।

ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়-গত ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর-২৪ সালে চক বাজার জামে মসজিদ ওয়াকফ এস্টেট কমিটির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব নেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম। দায়িত্ব পালন কালে কমিটির যেকোন সিদ্ধান্ত প্রায়শই অমান্য করে প্রধান শিক্ষক মাওলানা আব্দুল হক। কমিটির সিদ্ধান্তকে অমান্য করে তার পক্ষে মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের রাস্তায় আন্দোলনে নামিয়ে নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়েছে। গত ২৪ সালের ১৯শে নভেম্বর মাদ্রাসার লাঞ্ছিত শিক্ষক আজিজুল হক এর একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওয়াকফ্ কমিটি সিদ্ধান্ত মোতাবেক আজিজুল হকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসাবে ইসলামিক ফাউণ্ডেশনকে নিয়োগ করা হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা আজিজুল হকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের কোন প্রমাণ না পেয়ে তাকে দায়িত্ব পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নিলে মাওলানা আবদুল হক এর পক্ষ থেকে পরে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বরং মাওলানা আজিজুল হককে বহিষ্কার করতে ষড়যন্ত্র করে ছাত্রদের আন্দোলনে নামানো হয়। এসব ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত মাওলানা আব্দুল হক এর জামাতা মুফতি সারোয়ার হুসাইন,আরো দুই মেয়ের জামাতা, এক ছেলে ও এক নাতি। তৎপ্রেক্ষিতে ওয়াকফ কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আজিজুল হককে পুনর্বহাল ও মেয়ের জামাতা সারোয়ার হুসাইনকে প্রধান শিক্ষক পদসহ কমিটির সকল পদ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় কমিটি। একই সাথে মাদ্রাসার প্রধান আব্দুল হক সাহেবের আরেক মেয়ের জামাতা মাওলানা তফাজ্জল হোসেন একই সাথে ত্রিশাল ও নিজস্ব মসজিদ পরিচালনা করেন বিদায় বড় মসজিদ মাদ্রাসার খন্ডকালীন শিক্ষকতার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নিয়ে মাদ্রাসার দ্বিতীয় সিনিয়র আলেম মাওলানা রইসুল ইসলামকে নায়েবে মুহতামিম এর দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কমিটি। এসব সিদ্ধান্ত মিটিং চলাকালে মাওলানা আব্দুল হক সাহেব মেনে নিলেও পরবর্তীতে মিটিং থেকে বেরিয়ে মাদ্রাসায় গিয়ে শিক্ষার্থীদের প্ররোচনা করে সিদ্ধান্ত মানা হয়নি জানিয়ে আন্দোলনে নামার উৎসাহিত করে ধ্বংসাত্মক আন্দোলন কার্যক্রম চালায় শিক্ষার্থীরা । এসব বিষয়ে আরো একাধিক বার ওয়াকফ্ কমিটি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও কমিটির মিটিং চলাকালে আব্দুল হক সাহেব সব মেনে নিলেও মিটিং থেকে মাদ্রাসা গিয়েই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্ররোচনায় ফেলে আন্দোলনে নামিয়ে নগরীর শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে তুলেন। কমিটির সিদ্ধান্ত মাদ্রাসা বড় হুজুর আব্দুল হক সাহেবের স্বার্থের বাইরে গেলেই কমিটির সভাপতি ডিসির প্রত্যাহারে ছাত্রদের উস্কানি দিয়ে আন্দোলন করতে উৎসাহিত করা হয় এমন দাবি উঠেছে সংশ্লিষ্ট মহলে।

গত ২৭ অক্টোবর রাতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে মাদরাসায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিবাদমান দুইটি পক্ষের বৈঠকের পর হঠাৎ উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সময় মাওলানা আব্দুল হকের অনুসারিদের হামলায় শিক্ষক হাফেজ মো. শহীদুল্লাহ (৫৫) আহত হন। এ ঘটনায় পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাকর হয়ে উঠলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রশাসনের হস্থক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বিগত প্রায় এক বছর ধরে চলা জামিয়া ফয়জুর রহমান বড় মসজিদ ও মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা আব্দুল হকের আধিপত্যবাদসহ চলমান সকল ঘটনার বিষয়ে ওয়াকফ্ কমিটির সভায় পর্যায়ক্রমে বিস্তারিত তুলে ধরেন। সেই সাথে শান্তি বজায়ে রেখে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিরসনে সকলের সহযোগিতা ও পরামর্শ কামনা করেন।

কিন্তু বিষয়টি র্স্পশকাতর ধর্মীয় স্থান হওয়ায় এবং ঘটনার সঙ্গে মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জড়িত থাকায় বিষয়টি নিয়ে বিব্রতবোধ করছেন অনেকেই।
বড় মসজিদের এই আলোচিত ঘটনাটি নিয়ে নগরীর বিভিন্ন পেশাশ্রেণীর ব্যক্তিবর্গরা বিব্রত। বারবার চেষ্টা করেও ঘটনার সামাধান করা যাচ্ছে না, এটা তারা মেনে নিতে পারছেন না। তারা আশাবাদ ব্যক্ত করছেন স্থানীয় পর্যায়ের শীর্ষ আলেমগনের পরামর্শে বড় মসজিদ ও মাদরাসার এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির স্থায়ী সামাধান হবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *