আলিফ হোসেন,তানোরঃ
রাজশাহীর তানোরে গবাদিপশু খাদ্যর (খড়) তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকেরা নির্ভর করছে কচুরিপানা ও ঘাষের ওপর। তবে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে অকাল বন্য। গত ২৯ অক্টোবর বুধবার থেকে ৩১ শুক্রবার রাতে স্মরণকালের ভয়াবহ ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে, অকাল বন্য ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টির ফলে,গোচারণভূমি ও ফসলের মাঠ ডুবে যাওয়ায় জমির আইল থেকে ঘাস কাটতে পারছে না।এতে গোখাদ্যর সংকট আরো প্রকট হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, বর্তমান সময় খড়ের কেজি ও আঁটির দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ কৃষকের পক্ষে তা কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে। মেশিনে কাটা এক কেজি খড় বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। ফলে গরুর জন্য সহজলভ্য খাবার হিসেবে কচুরিপানা (দল) কেটে ঘরে নিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে অকাল বন্যার কারণে সেটাও বন্ধের পথে।
তানোরের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকেরা মাঠ ও পুকুর-ডোবা থেকে কচুরিপানা (দল) সংগ্রহ করছেন। কেউ বাঁশ বা লাঠির সাহায্যে পানির ভেতর থেকে টেনে তুলছেন, আবার কেউ নৌকা ব্যবহার করছেন। কৃষকদের মতে, কচুরিপানা (দল) গরুর জন্য খুব একটা পুষ্টিকর খাবার নয়, তবে খড়ের চড়া দামের কারণে বিকল্প হিসেবে এটি একমাত্র ভরসা।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল ও আয়ুব বলেন, “আগে খড়ই ছিল গরুর প্রধান খাবার।কিন্ত্ত এখন ১৪ হাজার টাকা কাউন ও মেশিনে কাটা খড় ৩০ টাকা কেজি। এত দামে আমাদের পক্ষে কেনা সম্ভব নয়। তাই কচুরিপানাই (দল) ভরসা।”
কৃষকরা জানান, খড়ের সংকট অব্যাহত থাকলে গরু মোটাতাজাকরণ ও কৃষি কাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তারা সরকারের কাছে খড়ের দাম নিয়ন্ত্রণ এবং বিকল্প পশুখাদ্য সহজলভ্য করার দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হঠাৎ বন্যায় আধাপাকা
আমণখেত পানির নিচে।আবার গো-খাদ্যর অন্যতম উৎস্য ঘাস নষ্ট।অন্যদিকে টি-আমণ ধান কিছুটা আধা পাকা অবস্থায় হারভেষ্টার মেশিন দিয়ে কাটা মাড়াই করায় গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দেয়। কিছু কিছু এলাকায় খড় পাওয়া গেলেও প্রান্তিক গবাদিপশু পালনকারীদের হাতের নাগালে নেই দাম। বাজারে বিক্রি করা গো-খাদ্যের দামও আকাশচুম্বী। যার ফলে প্রান্তিক গবাদিপশু পালনকারী গৃহস্থরা পড়েছেন চরম বিপাকে। গবাদিপশু (গরু) বাঁচিয়ে রাখতে তারা বাড়ির পাশের খাল, বিল ডোবায় জন্মানো কচুরিপানা দল তুলছেন। গো-খাদ্য হিসেবে কচুরিপানাই এখন তাদের শেষ ভরসা। কেউ কেউ নিজেদের বাড়ির কাছাকাছি কচুরিপানা না পেয়ে রিকশাভ্যান ভাড়া করে কেউবা পায়ে হেঁটেই দূর-দূরান্ত থেকে সংগ্রহ করছেন কচুরিপানা। অনেক খামারিও গো-খাদ্য সংকটের কারণে শ্রমিক দিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে কচুরিপানা(দল)সংগ্রহ করছেন।
গ্রামীণ জনপদে কচুরিপানার এ ব্যবহার নতুন কিছু নয়, তবে এবার খড়ের অস্বাভাবিক দামের কারণে তা গরুর প্রধান খাবারে পরিণত হয়েছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তা(এএও) আকবর হোসেন বলেন, কচুরিপানা (দল) একধরনের বহুবর্ষজীবী ভাসমান উদ্ভিদ। উদ্ভিদটি গো-খাদ্যের চাহিদা মেটানোসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে কৃষিতাত্ত্বিকভাবে বিবেচনা করলে এটি একটি আগাছা। কচুরিপানা খুব দ্রুত বংশবিস্তার করে। এজন্য নিচু ফসলি জমিতে বিশেষ করে ধানের জমিতে এই উদ্ভিদকে আগাছা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গো-খাদ্য হিসেবে কচুরিপানা ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে এক দিকে যেমন নিচু ফসলি জমিতে কচুরিপানা নিয়ন্ত্রণে থাকবে অন্যদিকে গো-খাদ্যের চাহিদাও মিটবে।এবিষয়ে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ ওয়াজেদ আলী বলেন, শুধু কচুরিপানার ওপর নির্ভর করে গবাদিপশু লালন পালন করা অত্যন্ত কষ্টের। তবে এ মৌসুমে খাল-বিলে প্রচুর কচুরিপানা পাওয়া যাচ্ছে। এতে গবাদিপশু পালনকারীদের জন্য উপকার হয়েছে। তবে কচুরিপানা গরু বা মহিষকে খাওয়ানোর পূর্বে রোদে শুকিয়ে খড়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো ভালো।#
তানোরে গো-খাদ্যর সং-কট বি-পাকে গৃহস্থ-খামারি

Leave a Reply