তানোরে কার্তিকের কান্নায় কৃষকের স্বপ্নভ-ঙ্গ

আলিফ হোসেন,তানোরঃ

রাজশাহীর তানোরে গত দু’দিনের ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শত শত পুকুরের মাছ ভেসে গেছে,ডুবে গেছে অনেক আমনখেত। কার্তিকের মাঝামাঝি ও হেমন্তের শুরুতে হঠাৎ করেই অতিবৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়ায় কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। বিভিন্ন কৌশলে ঘের দিয়েও রক্ষা করা যাচ্ছে না। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষি ও মৎস্যখাত। এছাড়াও নিম্নাঞ্চলের অনেক গ্রাম প্লাবিত ও রাস্তা-ঘাট ডুবে গেছে। এরমধ্যে তানোর পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চলের আমশো তাঁতিয়ালপাড়া, গোকুল মথুরা, তালন্দ, ধানতৈড়, কালিগঞ্জ ইত্যাদি। এছাড়াও উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) বাতাসপুর, শ্রীখন্ডা, হাতিশাইল, কামারগাঁ, গাংহাটি, কচুয়া, মালশিরা, নিজামপুর, হরিপুর, দমদমা ও মাঝিপাড়া। কলমা ইউপির চন্দনকৌঠা, ঘৃতকাঞ্চন, নড়িয়াল, আজিজপুর, অমৃতপুর ও কুজিশহর। চাঁন্দুড়িয়া ইউপির হাড়দহ, জুড়ানপুর, সিলিমপুর, চাঁন্দুড়িয়া ও বেড়লপাড়া। সরনজাই ইউপির কাঁসারদীঘি, তাতিহাটি নবনবী, মন্ডলপাড়া। পাঁচন্দর ইউপির ইলামদহী, চাঁদপুর, চককাজিজিয়া, মোহাম্মদপুর, বানিয়াল, বনকেশর, কোয়েল ও কচুয়া এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় এসব এলাকার মানুষ বেশী ক্ষতির মুখে পড়েছে।

উপজেলা মৎস্য বিভাগের হিসাব মতে, উপজেলায় ব্যক্তি মালিকানা পুকুরের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার এবং সরকারি খাসপুকুর রয়েছে প্রায় এক হাজার। গত ২৯ অক্টোবর বুধবার থেকে শুক্রবার ভোররাত পর্যন্ত্য ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় অধিকাংশ পুকুর তলিয়ে গেছে এবং আমণখেতের আধাপাকা ধান গাছ মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া এসব পুকুরে বিভিন্ন জাতের বড় মাছ ও পোনা ছিল। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দু’কোটি টাকা মাছের পরিমাণ প্রায় ছিল ৩০ মেট্রিক টন এবং পোনা ছিল প্রায় ২৫ লাখ হবে বলে পুকুর মালিকগণ মনে করছেন।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, কামারগাঁ ব্লকে কামারগাঁ প্রায় ২০ হেক্টর, মাদারিপুর ৮ হেক্টর, ছাঐড় ১০ হেক্টর, কৃষ্ণপুর ৫ হেক্টর ও পাঁচন্দর ব্লকের মোহাম্মদ পুর ৭ হেক্টর, চাঁদপুর ১০ হেক্টর এবং চান্দুড়িয়া ব্লকের চান্দুড়িয়া ১৫ হেক্টর সিলিমপুর ৫ হেক্টর। তানোর পৌরসভায় ১১০ হেক্টর। সব মিলে ২০৩ হেক্টর রোপা আমন ধান ডুবেছে এর মধ্যে আংশিক ১৫০ হেক্টর ও পুরোপুরি ডুবেছে ৫০ হেক্টর। তানোর পৌর এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, নাজমুল হাসান একজন বড় মৎস্য চাষি। তিনি ব্যক্তি মালিকানা শতাধিক বিঘার ১২টি পুকুর বছর চুক্তি লীজ নিয়ে মাছচাষ করেন। তার কামলা (লেবার) হিসেবে মাছের খাদ্য প্রদান ও পুকুর দেখভাল করেন তারা। এসব একেকটি পুকুর ২০ থেকে ৮ বিঘা পর্যন্ত জলাধর। কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে এসব পুকুর ভরে প্রায় ২৫ লাখ টাকার মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। বড় মাছগুলোর ওজন ছিল দুই থেকে আড়াই কেজি।

ধানতৈড় মহল্লার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভারী বর্ষণে তার অন্তত ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মাছচাষি ফকির উদ্দিন জানান, তারও একটি বড় পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এ মাসেই সব মাছ বিক্রি করার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই সর্বনাশ হয়ে গেছে। এক মৎস্যচাষী বলেন, তিনি ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে প্রায় ৬০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পুকুরে মাছ চাষ ব্যবসা করে আসছেন। এঅবস্থায় গত ৩ দিনের ভারী বর্ষণ ও ব্যাপক বৃষ্টিপাতে তার সব পুকুর প্লাবিত হয়ে মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। কোন মতেই রক্ষা করা যাচ্ছে না। চাষকৃত এসব মাছ বিক্রি করে এনজিও গুলোর কিস্তি চালান। এখন কি করবেন সেই চিন্তায় হতাশ হয়ে পড়েছেন।

এবিষয়ে তানোর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল হোসেন বলেন, ভারী বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু একটানা মুশলধারে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের জন্য বের হওয়া সম্ভব হয়নি। বৃষ্টি শেষে ক্ষতিগ্রস্ত পুকুরের সংখ্যা নোট করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।এবিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহমেদ কল গ্রহণ না করায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।#

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *