জয়পুরহাট-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দৌড় শ-ক্তি প্রদর্শনে ব্যস্ত ছয় প্রার্থী-তৃণমূলে দ্বি-ধা ও বি-ভক্তি

দেলোয়ার হোসেন বাবু স্টাফ রিপোর্টার জয়পুরহাট।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে জয়পুরহাট-২ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে তীব্র নড়াচড়া।
এই আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতৃত্ব পর্যন্ত সমানভাবে নজর রাখছেন কমপক্ষে ছয়জন প্রভাবশালী নেতা। প্রত্যেকেই নিজ নিজ শক্তিমত্তা, প্রভাব ও জনসম্পৃক্ততা তুলে ধরে দলের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য সক্রিয়ভাবে মাঠে কাজ করছেন।
তবে এখানেই শুরু হয়েছে মূল সংকট।
দলের ভেতর এই অতিরিক্ত যোগ্য ও প্রভাবশালী প্রার্থী সংখ্যা মনোনয়ন প্রক্রিয়াকে যেমন প্রতিযোগিতাপূর্ণ করে তুলেছে, তেমনি তৃণমূল পর্যায়ে তৈরি করেছে দ্বিধা, বিভক্তি ও অভ্যন্তরীণ চাপের নতুন মাত্রা।

যদিও প্রকাশ্যে কেউ কারো বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছেন না, তথাপি মাঠের বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে এক ধরনের অঘোষিত প্রতিযোগিতা।
প্রত্যেক প্রার্থী নিজস্ব সমর্থক গোষ্ঠী নিয়ে উঠান বৈঠক, জনসংযোগ, সামাজিক কার্যক্রম, এমনকি মসজিদ-মন্দির থেকে হাট-বাজার পর্যন্ত নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
ফলে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের বড় অংশ পড়েছেন চরম দোটানায়—
কাকে সমর্থন করবেন? কে হলে দলে ঐক্য ফিরে আসবে?

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে এখন প্রার্থীদের অনুসারীরা সক্রিয়। কেউ কেউ স্থানীয়ভাবে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে নানামুখী সামাজিক ও সাংগঠনিক উদ্যোগ নিচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন দলের কর্মকাণ্ডে প্রাণচাঞ্চল্য বেড়েছে, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং ও বিভাজনের আশঙ্কাও স্পষ্ট হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জয়পুরহাট-২ আসন দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
তবে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে সংগঠনটি এখানে নানান প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি এবার বিএনপি এমন একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে পারে, যিনি তৃণমূলে গ্রহণযোগ্য, সংগঠিত ও গ্রুপিংবিহীন, তবে এই আসনে দলটির পুনর্দখলের সম্ভাবনা যথেষ্ট উজ্জ্বল।

অন্যদিকে, যদি দল অভ্যন্তরীণ ঐক্য প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়, কিংবা একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন, তাহলে পুরো নির্বাচনী ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়তে পারে।

তৃণমূল কর্মীদের প্রত্যাশা—দল এবার এমন একজনকে বেছে নেবে, যিনি শুধু দলের নয়, পুরো এলাকার মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেন।
একজন স্থানীয় নেতা বলেন, আমরা এমন প্রার্থী চাই,যিনি দলে ঐক্য ফিরিয়ে আনতে পারবেন, জনগণের পাশে থাকবেন। ব্যক্তিগত স্বার্থ নয়, দলের স্বার্থই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

সবমিলিয়ে জয়পুরহাট-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে।
একদিকে সম্ভাবনাময় ছয় প্রার্থীর সক্রিয়তা, অন্যদিকে তৃণমূলের বিভক্তি—
এই দুই বাস্তবতার মধ্যে দাঁড়িয়ে দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তই এখন নির্ধারণ করবে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমীকরণ।

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সময় এখন ঐক্যের।
যদি বিএনপি সময়োপযোগী, প্রজ্ঞাপূর্ণ ও ঐক্যনির্ভর সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তবে জয়পুরহাট-২ আসনে তাদের বিজয়ের সম্ভাবনা অস্বীকার করার উপায় থাকবে না।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *