আরিফ রব্বানী,
স্টাফ রিপোর্টারঃ
ময়মনসিংহ নগরীর বড় মসজিদ ও মাদরাসায় ফের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সকলকে ধৈর্য ধরার আহবান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মফিদুল আলম। সুত্র জানিয়েছে- ভারপ্রাপ্ত প্রধান মাওলানা আবদুল হকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এর আগে পরিচালনা কমিটির সর্বসম্মত তদন্তের মাধ্যমে যার সত্যতা পাওয়ার ফলে কমিটি তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলো। কিন্তু আব্দুল হক নিজ স্বার্থে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ব্যবহার তার একটা অদৃশ্য শক্তির উৎস হয়ে দাড়িয়েছে। এতে শিক্ষক-
শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজন ও তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এরই জেরে নগরীতে টানা তিন ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে বড় মসজিদ মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি প্রশাসনের হস্তক্ষেপে একটা সুরাহা হলেও থেমে থাকেনি মাওলানা আব্দুল হকের
স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতা দাপট ও ষড়যন্ত্রের প্রভাব।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি (১) ষড়যন্ত্র আর ক্ষমতায় তিনি তার নিজের মেয়ের জামাই মাওলানা সারোয়ারকে নায়েবে মুহতামিম ঘোষণা করে। এতে কমিটির কোন নিয়োগপত্র বা কোন রেজুলেশন দেখাতে পারেনি। নিয়োগ তো দূরের কথা এতে কমিটির কারোর কোন পরামর্শ পর্যন্ত সে নেয়নি,(২)নিজের আরেক মেয়ের জামাই মাওলানা মোফাজ্জল কে অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ।
যিনি ত্রিশাল বড় মসজিদের ইমাম, মাদরাসার মুহতামিম এবং আরেকটি মাদরাসার শিক্ষক হওয়া সত্যেও তাকে জামিয়ার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন।মুলত নিয়োগের নামে মোটা অংকের টাকা বেতন হিসেবে হাতিয়ে নেওয়াই একমাত্র লক্ষ্য। (৩)নিজের ছেলেকে শাইখুল হাদীস ঘোষণা। শাইখুল হাদীস যিনি হাদীসের সর্বোচ্চ কিতাব পড়ান। তা মুলত পড়ান যিনি হাদীসের কিতাবে অনেক পারদর্শী। বয়সের একটি পর্যায়ে তিনি শাইখুল হাদীস হোন। অথচ তিনি তার ছেলেকে একবেরেই অল্প বয়সে শাইখুল হাদীস ঘোষণা করেছেন তাও সকল নিয়ম উপেক্ষা করে।
(৪)একই ব্যক্তি মাদরাসার মুহতামিম ও মসজিদের খতিব। নামাজ পড়ান অনিয়মিত। তিনি বিভিন্ন সভাসমিতিতে টাকার বিনিময়ে ওয়াজ করেন।যার ফলে মসজিদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। মসজিদের দায়িত্ব পালন না করেও মোটা অংকের বেতন উত্তোলন করেন। (৫)বড় মসজিদে বসে দাওয়াতুল হক নামক নিজের একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় বড় অনুদান কালেকশন করেন। বড় মসজিদের নাম ব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের নামে টাকা কালেকশন করা কোন আইন বা ধর্মীয়ভাবেও তা অগ্রহণযোগ্য। (৬)নিজের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে ফয়জুর রহমান রহঃ এর নাতিন জামাই মাওলানা ফেরদৌস সাহেবের মতো সহজ সরল একজন মানুষকে চট চুরির ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে বহিস্কার করেন। যা পরবর্তীতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
(৭) বড় মসজিদের (ইন্টারভিউ দিয়ে নিয়োগ প্রাপ্ত) ফয়জুর রহমান রহঃ এর নাতি মাওলানা সুহাইল সাহেবের সাথে অসদাচরণ ও তার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাকে মাদরাসায় নিয়োগ দেন না। যেখানে তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়ে রেছেন।
এতো সব অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও নিজে সংশোধন হওয়ার আশ্বাস দেওয়া তো দূরে থাক বরং ইতোপূর্বে
উল্টো কমিটির ও বড় মসজিদের মুতাওয়াল্লি বর্তমান জেলা প্রশাসক,সৎ ও যোগ্য মফিদুল আলমের বিরুদ্ধে ছাত্রদের লেলিয়ে দিয়ে অস্থিরতা তৈরী করেছিলেন এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করিছিলেন। মাওলানা আব্দুল হক বড় মসজিদের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে শহরের অসংখ্য গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিজের স্বার্থে অপমানিত ও কমিটি থেকে বিতাড়িত করেছেন।যেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে তার বিষয়ে মসজিদের মিম্বারে বসে গীবতের আশ্রয় নেন,এমন অভিযোগও রয়েছে।
মাওলানা আব্দুল হক এর স্বেচ্ছাচারীতা বিরোধিতা করায় মুফতি শহিদ নামে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেন তিনি। তাই সুযোগ বুঝে হঠাৎ ২৭শে অক্টোবর রাতে মুফতি শহীদের উপর ছাত্রদের ক্ষেপিয়ি তুলেন মাওলানা আব্দুল হক। তার ষড়যন্ত্রমোলক কর্মকান্ডের কারণে মাদ্রাসায় শুরু হয় অস্থিরতা।
জামিয়া ফয়জুর রহমান (রহঃ) কে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মুফতি শহীদ মারাত্মক আহত হলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা। এই ঘটনায় ঐতিহ্যবাহী বড় মসজিদ এর মাদ্রাসা জেলা প্রশাসন থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন ঘটতে না পারে সে জন্য সেনাবাহিনী, RAB ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এব্যাপারে জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম জানান-
২৭/১০/২০২৫ তারিখ বাদ মাগরিব জামিয়ার পরিচালনা কমিটির সভা অনুষ্টিত হয়। সভায় মুফতি আব্দুল হক সহ সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন। মাদ্রাসার বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। আব্দুল হক সাহেব যেসব দাবী দাওয়া উপস্থাপন করেছিলেন তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। সকল দাবী দাওয়া মেনে নেওয়া হয়।
মিটিং শেষে জেলা প্রশাসক সকলকে আপ্যায়ন করিয়ে হাসি মুখে বিদায় দেন। আর কোন সমস্যা তৈরি হবেনা মর্মে মুফতি আব্দুল হক সাহেব ও শহিদ সাহেব উভয়ে অঙ্গীকার করেন। সকলে একে অপরের সাথে কোলাকুলি করেন। হক সাহেব ও শহিদ সাহেব দুজনকে এক সাথে মাদ্রাসায় গিয়ে সমঝোতা ও সম্মানের সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য নসিহত করা হয়।
অতঃপর যে যার যার মত বাসায় চলে আসেন। কিছুক্ষণের মধ্যে জানা যায় যে, মুফতি শহিদ সাহেব মাদ্রাসায় গেলে তাকে প্রতিপক্ষের লোকজন মেরে রক্তাক্ত করে ফেলেন। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা এর তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। এই পরিস্থিতিতে সকলকে ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
অপরদিকে জামিয়া ফয়জুর রহমান (রহ.) মাদ্রাসার সমস্যা নিরসনে জেলা প্রশাসকের সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে দাবী করে মাদ্রাসাটিতে চলমান পরিবারতন্ত্র মুক্ত করা উচিত বলে মনে করছেন ময়মনসিংহবাসী।

Leave a Reply