নেছারাবাদের সাগরকান্দা নাথপুর খালের পোল যেন মৃ-ত্যুফাঁদ ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা

নেছারাবাদ(পিরোজপুর)প্রতিনিধি:

নেছারাবাদের সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের সাগরকান্দা বাজার হয়ে নাথপুর খালের উপর লোহার ভিমের স্লিপার পুলগুলো এখন পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুর উপর সুপারি গাছ ও বাঁশের হাতল দিয়ে কোনোভাবে পারাপার হচ্ছেন শিক্ষার্থী সহ স্থানীয়রা। প্রতিদিন প্রাণ হাতে নিয়ে চলছে তিনটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেড়যুগ আগে এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত এই সেতুটি সাগরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশের তিন গ্রামের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সেতুগুলো নড়বড়ে হয়ে পড়ে। কয়েক বছর আগে বন্যায় গাছ পড়ে সেতুগুলো আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এম.কে. সবুর তালুকদার সেতু মেরামতের কথা বলে ভিম, অ্যাঙ্গেল ও স্লিপার খুলে নেন। কিন্তু এরপর থেকে আর মেরামতের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মজিবুর রহমান মৃধা বলেন, এই রাস্তার সবচেয়ে ভয়াবহ পুল নাথপুর গ্রামের তিনটি পুলটি “পুলের অবস্থা এত খারাপ যে, বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না, অসুস্থ মানুষ হাসপাতালে নিতে পারি না। চেয়ারম্যানরা মেরামতের নামে লোহার ভিম খুলে নিয়ে গেছে, তারপর আর কেউ খোঁজ নেয়নি।”

আরেক বাসিন্দা মো. জিয়া উদ্দিন তৌহিদ জানান, “এই রাস্তাটি তিন গ্রামের মানুষের একমাত্র যোগাযোগ পথ। এখানে তিনটি মন্দির ও একটি স্কুল আছে। পুল না থাকায় আমরা প্রতিদিন মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করি।”

উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, সাগরকান্দা বাজার থেকে এক কিলোমিটার কার্পেটিং সড়ক ও তিনটি ব্রীজ নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছিল। কাজটি মেসার্স ইফতি ইটিসিএল নামের প্রতিষ্ঠানের নামে টেন্ডার হয়, যার মালিক সাবেক সংসদ সদস্যের ভাই মহিউদ্দীন মিরাজ। কিন্তু দুর্নীতির মামলায় প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন বেপারী বলেন, “টেন্ডার হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু মামলার কারণে কাজ হয়নি। পুলের লোহার ভিম ও অ্যাঙ্গেল কারা খুলে নিয়ে গেছে, তা আমার জানা নেই।”

সাবেক চেয়ারম্যান এম.কে. সবুর তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

উপজেলা এলজিইডি অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী বিকাশ চন্দ বলেন, “টেন্ডার হয়েছিল প্রায় কোটি টাকার উপরে। পরে ঠিকাদারি লাইসেন্সের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে পুনরায় বিবেচনা করা হবে।”

স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত সেতুটি পুনর্নির্মাণ না হলে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এতে তিনটি গ্রামের যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

আনোয়ার হোসেন
নেছারাবাদ উপজেলা প্রতিনিধি ।।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *