রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলীঃ মাঠজুড়ে শুধু সবুজ আর সোনালী ধানের ক্ষেত। যে দিকেই দু, চোখ যায় শুধু সবুজের সমারোহ। ফসলের মাঠ যেন সোনালী আর সবুজের চাদরে ঢাকা। মাঠে মাঠে এখন পাঁকা সোনালী আমনের নজরকাড়া দুলনী।
ধান কেটে লাগানো হবে সরিষা, গম, রাই, ছোলা মুসরী, জব সবজি, খিরাসহ নানা ধরনের শীতকালীন সবজি। অতিবৃষ্টি, বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ইতোমধ্যে টমেটো, বেগুন, কপির চাষ করেছেন কৃষকগণ।
মাঠের পর মাঠজুড়ে সোনালী শিষে ভরা ছিল আমন ধানের ক্ষেত। সোনালী ধানের শীষের সাথে দুলেছিল কৃষকের স্বপ্ন। সে স্বপ্ন বাস্তবে রুপ নিয়েছে। খরা বিপর্যয়, বন্যা, অনাবৃষ্টির ধকল কাটিয়ে ঘাম ঝরা ফসল ঘরে তোলার সোনালী স্বপ্ন কৃষকের চোখে মুখে। কোথাও কোথাও দেখা যায় শীতের সোনামাখা রোদ্র গায়ে মেখে আগাম জাতের কাঁটা ও মাড়াইয়ে কৃষকের ব্যস্ততা। পাঁকা ধান মাড়াই করার পর ১২শ থেকে ১৪ শ টাকা মন ধরে জমি থেকে ধান কিনে নিয়ে যাচ্ছে পাইকারগণ। ধানের ভাল দাম পেয়ে কৃষকগণ দারুন খুশি। মাঠ ভরা ধান দেখে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের ভাষ্য এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হবে।
কৃষকরা বলছেন, এবার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ধানের আবাদে অন্যান্য বছরের চেয়ে কম শ্রম দিতে হচ্ছে, বৃষ্টি হওয়ায় সেচ বাবদ খরচ কম হয়েছে। দিনের বেশীর ভাগ সময় কৃষকগণ নজর রাখছেন মাঠের পাঁকা ধানের উপর। সোনালী আর সবুজের সংমিশ্রণে ঘেরা আমন ধানের মাঠ দেখে বারবার ফিরে তাকায় কৃষক, থমকে দাঁড়ায় পথিক। আর কিছু দিনের মধ্যেই সোনালী ধানে ভরবে কৃষকের মন। রাশি রাশি সোনালী ধানে ভরে উঠবে কৃষকের শূন্য কুঠি ও গোলা। পাশাপাশি কৃষকের মুখে ফুটে উঠবে হাসি।
জানা যায়, এবারে উপজেলার ৯ ইউনিয়নে ২ টি পৌর সভায় ২৪ হাজার ৯৭৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তার চেয়ে বেশী পরিমান জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে।
এসব এলাকার মাঠগুলোতে চাষকৃত আমন ধানের মধ্যে গুটি স্বর্ণা, লাল স্বর্ণা, সুমন স্বর্ণা, পাইজাম, জিরাসাইল, ব্রি-২৯ সহ উচ্চ ফলনশীল অনেক জাতের হাইব্রিড ধানেরও চাষ হয়ে থাকে। এর সাথে গত কয়েক বছর থেকে যোগ হয়েছে সু-ঘ্র্যাণের চিনিআতপ ধানের চাষ।
গোদাগাড়ী উপজেলার আদর্শ কৃষক আলহাজ্ব আব্দুল মাতিন ও আলহাজ্ব শামসুল হক জানান, বোরো মৌসুমে ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় এ বছর বেশি পরিমান জমিতে আমনের চাষ করেছেন। আগাম জাতের পারিজা ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ শেষ হয়েছে বাস্পার ফলন হয়েছে। ১৩/১৪ টাকা মন ধরে ধান বিক্রি করা হয়েছে। ধান কেটে বেগুন, টমেটো, কপি, মূলা, মরিচ, শাক সবজি রোপন করা হয়েছে।
গোদাগাড়ী পৌর সভার বর্গাদার কৃষক আতিউর রহমান আতি জানান, প্রাকৃতিক বৃষ্টিতেই এবার ৭ বিঘা জমিতে গুটি স্বর্ণা ধান চাষ করেছি ধানের বাম্পার ফলন আশা করচ্ছি।
সূত্র মতে, উপজেলায় মোট আবাদ যোগ্য জমি আছে ২৩ হাজার ৯৯৩ হেক্টর, সেচের আওতায় জমি রয়েছে ২২ হাজার ৩৩২ হেক্টর। সেচ বহির্ভূত জমি আছে ১ হাজার ৬৬১ হেক্টর, এক ফসলী জমি রয়েছে ৩৪৪ হেক্টর, দুই ফসলী জমি রয়েছে ৪ হাজার ৫৪০ হেক্টর, তিন ফসলী জমি রয়েছে ১৯ হাজার ১০৯ হেক্টর।
বিএমডিএ সূত্র জানায়, উপজেলায় গভীর নলকূপ সরকারী ৫৩৬ টি মালিকানা ১৬ টি মোট ৫৫২ টি, অগভীর মটর বিদ্যুৎ চালিত ৪১১ টি, ডিজেল চালিত ৫০ টি এলএলপি (বিদ্যুৎ) ৩ টি, এলএলপি (ডিজেল চালিত) ৩৫০ টি, সরকারী মোট সেচ যন্ত্র ১৩৬৬ টি ও মালিকানা ৮৩০ টি। সব মিলে সেচ যন্ত্র ২১৯৫ টি। উপজেলায় আবাদ যোগ্য জমি আছে ২৩ হাজার ৯৯৩ হেক্টর, সেচের আওতায় ২২ হাজার ৩৩২ হেক্টর।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার জানান, বিশেষ করে অধিক ফলেন জন্য পরিমিত সার ব্যবহার, পানি সাশ্রয় এবং সার্বিক পরিচর্যায় কৃষকদের সচেষ্ট হতে আমরা সব সময়ই পরামর্শ দিয়ে আসছি। এবার গোদাগাড়ী উপজেলার কোথাও পোকার আক্রমণ নেই।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহম্মেদ বলেন, ২০/২৫ পর ধান কাঁটা শুরু করবেন কৃষকগন বাস্পার ফলন আশা করচ্ছি, ধান কেঁটে ওই জমিতে গম,ভূট্টা, আল, ছোলা, মুসরী সরিষাসহ শাক সবজি রোপন করবেন।
চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে আমন ধানের আবাদ কৃষকদের আমন চাষে উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন সময় কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সরকারিভাবে প্রণোদণা দেয়া হয়েছে। অল্প খরচে অধিক ফলন যাতে কৃষকরা করতে পারেন এজন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে তারা উদ্বুদ্ধ করেছেন।
মোঃ হায়দার আলী
রাজশাহী।

Leave a Reply