স্টাফ রিপোর্টারঃ
ডিজিটাল যুগে সংবাদ পরিবেশনে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এনেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক। এক সময় সংবাদ পাঠকরা অপেক্ষা করতেন পরদিনের পত্রিকা বা টেলিভিশন বুলেটিনের জন্য; এখন খবর আসে হাতে হাতে, স্ক্রিনে স্ক্রিনে। কিন্তু এই সহজলভ্যতা ও তথ্যপ্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে মূলধারার সাংবাদিকতার মান, নীতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা। এমনই মত দিচ্ছেন দেশের বিশিষ্ট মিডিয়া বিশ্লেষকরা।
বর্তমানে ফেসবুকে দেখা যায়, অনেকেই সংবাদমাধ্যমের নিয়ম ও নৈতিকতা উপেক্ষা করে নিজস্ব বিশ্লেষণ, অনুমান ও আবেগকে খবর হিসেবে প্রকাশ করছেন। অনেকে আবার সাংবাদিক পরিচয়ে লাইভে আসছেন, যাচাইবাছাই ছাড়াই তথ্য দিচ্ছেন, এমনকি অন্যের প্রতিবেদন কপি করে নিজেদের নামে প্রকাশ করছেন। ফলে সংবাদ ও গুজবের পার্থক্য অনেক সময় অস্পষ্ট হয়ে পড়ছে।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া পলাশ বলেন, সাংবাদিকতা মানে শুধু তথ্য দেওয়া নয়, তথ্য যাচাই করে দায়িত্বশীলভাবে উপস্থাপন করা। এখন ফেসবুকে অনেকে সাংবাদিকতার মূলনীতি না জেনেই খবর বানাচ্ছেন। এতে জনগণ বিভ্রান্ত হচ্ছে, আর প্রকৃত সাংবাদিকরা হারিয়ে ফেলছেন তাঁদের জায়গা।
মূলধারার গণমাধ্যমে কপিরাইট সংরক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও ফেসবুকে তা প্রায় অনুপস্থিত। সংবাদপত্র বা অনলাইন নিউজপোর্টালের এক্সক্লুসিভ খবর মুহূর্তেই বিভিন্ন পেজ ও প্রোফাইলে ছড়িয়ে পড়ে। কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয় না, এমনকি অনেক সময় তথ্য বিকৃত করে প্রচার করা হয়। এতে সাংবাদিকদের পরিশ্রম অবমূল্যায়িত হচ্ছে এবং মিডিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক শ্রেণির ব্যক্তি নিজেদের বিশেষজ্ঞ বা জ্ঞানী সাংবাদিক হিসেবে উপস্থাপন করছেন। তারা কোনো ঘটনার ভিডিও বিশ্লেষণ, মন্তব্য বা তথ্য ফাঁস’ল করে জনমত গঠন করছেন। কিন্তু এসব তথ্যের পেছনে যথাযথ যাচাই বা সাংবাদিকতার নীতি কতটা অনুসৃত হচ্ছে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
গণযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংবাদ পরিবেশনের আগে সাংবাদিকদের জন্য একটি নীতিমালা থাকা জরুরি। পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও ডিজিটাল সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণ ও কনটেন্ট ভেরিফিকেশন টুল ব্যবহারে আরও সচেতন হতে হবে।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মুশিদুল আলম বলেন, আমরা যদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সংবাদ পরিবেশনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করি, তাহলে এর জন্যও একটি নৈতিক কাঠামো তৈরি করা দরকার। না হলে সাংবাদিকতা থাকবে, কিন্তু বিশ্বাস হারিয়ে যাবে।

Leave a Reply