লেখকঃ মোঃ হায়দার আলীঃ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের চিঠির প্রেক্ষিতে শিক্ষকদের শতাংশ হারে বাড়ি বৃদ্ধি নিয়ে কাজ শুরু করে গত ১৯ অক্টোবর ৫% হারে বাড়ী ভাড়া প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষকগণ এটাতে প্রাথমিক বিজয় হিসেবে দেখে প্রত্যাক্ষাণ করে ভুখা মিছিল করেছেন। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা দিয়েছে সোমবার শহীদ মিনারে ২ লক্ষাধিক শিক্ষক কর্মচারীর জমায়েত করে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানিয়ে দেন ৫% পর আধা% বৃদ্ধি করা সম্ভাব নয়।
এর পর থেকে আন্দোলনরত শিক্ষক নেতৃবৃন্দ সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন আমরা শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষা সচিবের পদত্যাগ চাই। । একে বলে ঢেলার নাম বাবাজি, অবস্থা বেগতিক দেখে শিক্ষা উপদেষ্টা সি. আর. আবরার ইউটার্ন নেন। তিনি নিজেই প্রচার করতে শুরু করেন আমি সব সময় শিক্ষকদের দাবীর প্রতি আন্তরিক, দাবী পূরণে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠি চালাচালিতে সময় ক্ষেপন করার অপচেষ্টায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেসরকারি শিক্ষক সমাজ। ৫০০ টাকা ও ৫% বাড়ী ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি প্রত্যাখান করে গত ২০ অক্টোবর জাতীয় শহীদ মিনারে শিক্ষক আন্দোলন ও অবস্থান কর্মসূচি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্ম বিরোতির বিষয়টি ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ২ লক্ষাধিক শিক্ষক কর্মচারীর উপস্থিতি ঘটানো হয় দেশের ৯৯% শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্ম বিরোতী পালন অব্যাহত রেখে কঠোরভাবে পালনের নির্দেশনা দেন।
নতুনভাবে দ্বিতীয়বার দেশ স্বাধীন হয়েছে, হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন, বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কার কাজ চলছে, বৈষম্য দূর হচ্ছে, বেসরকারী শিক্ষক, কর্মচারী এবং সরকারী শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে বাড়ীভাড়া, মেডিকেল ভাতা বেতনের আকাশ পাতাল পার্থক্য রয়েছে। সুযোগ সুবিধারও অনেক বৈষম্য রয়েছে।
বিগত বছর গুলিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে এমপিওভুক্ত বেসরকারী শিক্ষক, কর্মচারীগণ জাতীয়করণের জন্য দিনের পর দিন আন্দোলন করছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুঁলিয়েছেন, বেশীরভাগ শিক্ষক আন্দোলনে ঢাকায় অবস্থান করছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় নি দুর্নীতিবাজ লুটপাটকারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার দোসর আমলা ও শিক্ষামন্ত্রীদের কারণে।
এদিকে ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া এবং ১৫০০ টাকা মেডিকেল ভাতা, ৭৫ ভাগ উৎসব বোনাসের দাবিতে ১২ অক্টোবর রবিবার থেকে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহতভাবে পালন করছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজীজি বলেন, গত ‘রবিবার থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয় এবং জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিব গড়িমসি করায় লাগাতার অবস্থানের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বাত্মক কর্মবিরতি অব্যাহতভাবে পালন চলমান রাখা হয়।
জানা গেছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের গত ১৩ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবের শিক্ষক সমাবেশে লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত ছিল। ওইদিন শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষক নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেসিকের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া, ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা ও ৭৫ % উৎসব ভাতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
কিন্তু দীর্ঘ দুই মাস অতিবাহিত হলেও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ। এমতবস্থায় এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী
ওই তিনটি দাবীতে অব্যাহতভাবে আন্দোলন করতে থাকেন। এর আগে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করে পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরারের এক চিঠির প্রেক্ষিতে বাড়ি ভাড়া ৫০০ টাকা বাড়িয়ে দেড় হাজার টাকা করা হয়। তবে বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানান শিক্ষক-কর্মচারীরা। পরবর্তীতে বেকায়দায় পড়ে ৫% বাড়ী ভাড়া বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি করেন সরকার কিন্তু শিক্ষক কর্মচারি প্রাথমিক বিজয় মনে করেও তা প্রত্যাখান করেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রবিধি শাখা থেকে শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ৫০০ টাকা বৃদ্ধি সংক্রান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। ভাড়া বৃদ্ধির পরিপত্র রবিবার (৫ অক্টোবর) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছিল। সেটা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করা হয়েছে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন, বাড়িভাড়াসহ তিন দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সব কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
বাড়িভাড়া নির্ধারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দেওয়া অর্থ বিভাগের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধিতে অর্থ বিভাগের সম্মতি প্রদান চিঠিতে বলা হয়, সরকারের বিদ্যমান বাজেটের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের পাঁচ শতাংশ হারে (সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা) দেওয়া হলো সেটা প্রত্যাখান করেন বেসরকারি শিক্ষক সমাজ। এর আগে গত রবিবার দুপুরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে, চলমান আন্দোলন ও শিক্ষকদের দাবি-দাওয়াসহ সার্বিক বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার সকালে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন এ্যানির নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসেন এবং শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবী মেনে নেয়ার আহ্বান জানান।
অপর দিকে ভুখা মিছিলে ২ লক্ষাধিক শিক্ষক কর্মচারী অংশ গ্রহন করায় ঢাকায় অচল অবস্থা সৃষ্টি হলেও শিক্ষা অধ্যাপক সি আর আবরার এসি রুমে বসে বসে ঘুমাচ্ছেন। টনক নড়ছে না। ৫% বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপনকে শিক্ষকগন বলছেন যে লাউ সেই কদু। বেসরকারি শিক্ষকদের সাথে বার বার প্রতারণা করা হয়েছে যা অব্যাহতভাবে চলছে। অবিলম্বে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরারের পদত্যাগ দাবী করেছেন শিক্ষক সংগঠন, ছাত্র সংগঠন, পেশাজীবি সংগঠন এর নেতৃবৃন্দ।
একটি পরিসংখ্য তুলে ধরিঃ দেশে সর্বমোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৬৫ হাজার ৫৬৫ টি। সরকারি ইবতেদায়ী মাদ্রাসার সংখ্যা: ০০টি।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা: ৬২৮ টি। সরকারি দাখিল মাদ্রাসার সংখ্যা: ০০টি।
সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সংখ্যা: ৬৩ টি। সরকারি দাখিল অ্যান্ড আলিম মাদ্রাসা: ০০টি। সরকারি কলেজের সংখ্যা: ৫৪ টি।
সরকারি আলিম মাদ্রাসার সংখ্যা: ০০টি।
সরকারি ডিগ্রি (পাস)+ অনার্স কলেজের সংখ্যা: ৪৪৬ টি। সরকারি ফাজিল মাদ্রাসার সংখ্যা: ০০টি। সরকারি স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) কলেজের সংখ্যা: ১৯৮ টি।
সরকারি স্নাতকোত্তর (কামিল) মাদ্রাসার সংখ্যা : ০৩ টি। একমাত্র সরকারি আলিয়া তিনটি হলো যথাক্রমে- সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা, সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, সিলেট, সরকারি মুস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদ্রাসা, বগুড়া।
এ সরকারই পারেন বৈষম্য দূর করতে প্রধান শিক্ষক, সহঃ প্রধানদের মাঝে হতাশা কাটিয়ে সুদিন ফিরিয়ে আন্তে। শিক্ষকগণ নানামূখি সমস্যায় মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। তাদের নুন আন্তে পান্তা ফুরায় অবস্থা। বেসরকারী শিক্ষকদের প্রাণের দাবী, বেসরকারী শিক্ষকদের শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ ঘোষনা হউক, এ কাজ টি করতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা।
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড হলে শিক্ষকরা শিক্ষার মেরুদন্ড। কিন্তু আজ শিক্ষক সমাজ অবহেলিত ও বিভিন্নভাবে হয়রানি-নির্যাতনের শিকার। শিক্ষকদের চাকরির নিরাপত্তা, আর্থিক স্বচ্ছলতা, সামাজিক মর্যাদা নেই বলে মেধাবীরা এই পেশায় আসতে চান না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষকরা রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হয়ে চাকরি হারিয়ে পথে পথে ঘুরছেন। শিক্ষকদের চাকরির নিরাপত্তা নেই বলেই আজ শিক্ষার বেহাল অবস্থা।
শিক্ষাক্ষেত্রে আজ পর্বতসম বৈষম্য বিদ্যমান। সরকারি বেসরকারি স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষক-কর্মচারীদের সমযোগ্যতা ও সমঅভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও সরকারি স্কুল ও বেসকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেলে পার্থক্য রয়েছে। সরকারি স্কুল-কলেজের ছাত্রদের যে সিলেবাস বেসরকারি স্কুল-কলেজের ছাত্রদের ও একই সিলেবাসে পড়ানো হয়। কিন্তু তাদের পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা ও বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট দেয়া হয়। বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের ৫০% উৎসব ভাতা দেওয়া হয়। বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের সাথে ইহা বিমাতাসুলভ আচরণের বহিঃপ্রকাশ।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সর্বপ্রথম বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের ১/১/১৯৮০ থেকে জাতীয় বেতনর স্কেলের অন্তুর্ভূক্ত করেন এবং ৫০% বেতন স্কেল প্রদান করেন। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট হুসাইন মুহম্মদ এরশাদ ১০%+১০% = ২০% প্রদান করেন। ১৯৯৪ সালের শিক্ষক আন্দোলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১০%, ২০০০ সনে আন্দোলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০% এবং সর্বশেষ ২০০৬ সনে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১০% বেতন প্রদান করে ১০০% এ উন্নীত করেন। এখন চাকুরী জাতীয়করণের কোন বিকল্প নেই।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামী ১ নভেম্বর থেকে সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা করে মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে এ ভাতা পাবেন তারা। তবে এ সিদ্ধান্ত মানতে রাজি নন বলে জানিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের সভাপতি অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসাইন আজিজী। শিক্ষক নেতারা বলেন, প্রয়োজনে বাজেট সংশোধনের ব্যবস্থা করতে হবে। কোথায় টাকা আছে আমাদের জানা আছে। প্রশিক্ষন ও গবেষণার নামে লুটপাট করার জন্য যে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা রাখা আছে সেগুলি দিয়ে শিক্ষক কর্মচারিদের তিনটি দাবী পূরণ করা সহজেই সম্ভাব কিন্তু তাদের টনক নড়ছে না কেন? শিক্ষক সমাজ জানতে চাই। যেখানে এনসিপি, গনঅধিকার, জামায়াত, বিএনপিসহ বেশীরভাগ রাজনৈতিক দল, ডাকসুর নির্বাচিত প্যানেল, ধর্মীয় বক্তা, আলোচক, সুশিল সমাজ, সাংবাদিক নেতা বিভিন্ন ভাবে শিক্ষকদের যৌক্তিক তিনটি দাবী মেনে নেওয়ার জন্য বার বার আহ্বান জানিয়েছেন সেখানে সময় ক্ষেপন, নাটক, প্রতারণা তালবাহানা করার প্রয়োজন কি।
গত রবিবার (১৯ অক্টোবর) মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারির পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় এ শিক্ষক নেতা বলেন, ‘এ প্রজ্ঞাপন আন্দোলন শুরুর আগেই আমাদের দিতে চেয়েছিল। আমরা তাতে রাজি হ্ইনি। শুরু থেকেই আমাদের চাওয়া ২০ শতাংশ ভাড়ি ভাড়া, ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা ও ১৫০০টাকা মেডিকেল ভাতা।’ সে প্রজ্ঞাপন যতক্ষণ সময় পূরণ না হবে, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে। এ সময় বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের আশা থাকবে, বিএনপি আমাদের পাশে দাঁড়াবে।’ বিকেল ৩টায় শান্তিপূর্ণভাবে ভূখা মিছিলে অংশ নেওয়ার আহবান জানান তিনি। পরে বিকেল ৩টায় ভূখা মিছিল নিয়ে শহীদ মিনার থেকে থালা-বাটি নিয়ে শিক্ষা ভবনের দিকে যান আন্দোলনরত শিক্ষকরা।
কিন্তু পুলিশের বাধার মূখে পড়েন। এনসিপি, গনঅধিকার, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষকদের তিন দফা যৌক্তিক দাবী মেনে পক্ষে অবস্থান করেন। এতে টনক নড়ে সরকার বাহাদুরের।
তিনটি দফার মধ্যে ১ টি দাবী নিয়ে সরকার বেশী আগ্রহ দেখান। ২০% এর পরিবর্তে ২ বছরে ১৫% বাড়ীভাড়া বৃদ্ধিতে উভয় পক্ষ একমত হন। চলমান আন্দোলন প্রত্যাহার করেন শিক্ষক কর্মচারী সমাজ।
দীর্ঘ ১০ দিনের আন্দোলনের পর অবশেষে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গত ২১ অক্টোবর মঙ্গলবার এ বিষয়ে সম্মতি জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। এতে বলা হয়েছে, আগামী নভেম্বর মাস থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতনের সাড়ে ৭ শতাংশ (৭.৫ শতাংশ) বা ন্যূনতম ২ হাজার টাকা এবং আগামী জুলাই থেকে মূল বেতনের ১৫ শতাংশ বা ন্যূনতম ২ হাজার টাকা হারে বাড়ি ভাড়া ভাতা দেওয়া হবে। তবে তাদের চিকিৎসা ভাতা (১,৫০০ টাকা) ও উৎসব ভাতা (মূল বেতনের ৫০ শতাংশ) আগের মতোই অপরিবর্তিত থাকবে।
এই সিদ্ধান্ত হাতে পেয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের নেতারা গত ২১ অক্টোম্বর মঙ্গলবার দুপুরে আন্দোলন প্রত্যাহার ও বুধবার থেকে শ্রেণিকক্ষে ফেরার ঘোষণা দেন। অর্থ বিভাগ জানিয়েছেন, বাড়ি ভাড়া ভাতা বৃদ্ধির ফলে কোনো বকেয়া সুবিধা প্রযোজ্য হবে না এবং ভবিষ্যতে অনিয়ম হলে বিল অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন। এছাড়া এমপিও নীতিমালা ও সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়োগের শর্তাবলি পূরণ করতে হবে। গত মঙ্গলবার সকাল থেকেই সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে দুপুরে তিনি এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজীর হাতে অর্থ বিভাগের সম্মতিপত্র হস্তান্তর করেন।
এই সময় শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য এটি একটি বাস্তবসম্মত ও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। শিক্ষকরা আমাদের সমাজ ও জাতি গঠনের মূল চালিকা শক্তি, অথচ তাদের বেতন-ভাতা অনেক ক্ষেত্রে অপ্রতুল ছিল।’
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় অর্থনৈতিক বাস্তবতা সীমিত হলেও আমরা শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির পক্ষে ছিলাম এবং আছি। ধীরে ধীরে তাদের সুবিধা আরও বাড়ানো হবে।’
অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘সরকার ও শিক্ষা উপদেষ্টা আমাদের কথা শুনেছেন, আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আশা করি, উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশে উন্নীত করা এবং বদলি প্রক্রিয়া চালুর বিষয়েও দ্রুত সিদ্ধান্ত হবে।’ শিক্ষার্থীদের ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করতে সাপ্তাহিক ছুটির দিন প্রতি শনিবার অতিরিক্ত ক্লাস নিচ্ছেন বিভিন্ন স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ এ জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের দাবি নিয়ে গত কয়েকদিন ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন উপদেষ্টার সাথে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁদের মধ্যে ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার, অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের দাবি যৌক্তিক বলে মনে করে। তবে বাস্তবতা হলো, ১৫ বছরের সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটে বিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গতিশীল হলেও এখনই মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির মতো সামর্থ্য অর্থনীতিতে ফেরেনি। তাই সরকারকে বাস্তবতার নিরিখে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি. আর. আবরারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, আন্দোলনরত শিক্ষকরা নবউদ্যমে শ্রেণিকক্ষে ফিরবেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে অবদান রাখবেন।
মানসম্মত শিক্ষা ও মেধাবী জাতি গঠনে জাতীয়করণের বিকল্প নেই। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের তুলনায় শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে আমাদের অবস্থান তলানীতে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা হাস্যরসের খোরাক হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
সর্বোচ্চ পর্যায়ে শিক্ষাখাতকে প্রাধান্য দেয়া, মাধ্যমিক শিক্ষাকে গতিশীল করা, মাধ্যমিক পর্যায়ে মেধাবিকাশে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা চালুকরণ জাতীয়করণ ছাড়া সম্ভব নয়।
বর্তমানে শিক্ষকতার পেশাটাকে মুখে মুখে সম্মানজনক পেশা বলা হলেও গ্রেড অনুপাতে বেতন, কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর বোর্ডের আচরণ, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা আর সিঁকি উৎসবভাতা কিন্তু অন্যটা প্রমাণ করে। আমরা যে শতভাগ অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার তা কিন্তু এই বেতন ও সামান্য সুবিধা প্রমাণ করে। অন্যান্য চাকরি বঞ্চিত হলে একান্ত বাধ্য হয়ে তারা এ পেশায় এলেও বেতন, ভাতা ও মূর্খ পরিচালনা কমিটি দেখে পড়ানোর মানসিকতা পরিবর্তন করে তারা এটাকে চাকরি হিসেবে বেছে নেয় সেবা হিসেবে নয়। এটা জাতির জন্য অশনিসংকেত।
অভাবগ্রস্ত শিক্ষকরা মানসিক ভাবেও বিপদগ্রস্ত। অভাব যখন চারদিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকে তখন নিদারুণ কষ্টের ভান্ডার থেকে সৃজনশীল কিছু পাওয়ার চিন্তাই বৃথা। তাই অতিশীঘ্র জাতীয়করণ না হলে এ শিক্ষা ব্যবস্থায় অরাজকতা বৃদ্ধি পাবে, শিক্ষায় প্রতিযোগিতা আরও কমবে এবং এসব সেক্টরে প্রচন্ড অসন্তুষ্টি দেখা দেবে। আমাদের দেশের চেয়েও অনুন্নত বেশ কয়েকটি এশিয়ান রাষ্ট্রে শিক্ষা খাতে সর্বনিম্ন জিডিপি ৩.৫০ বা ৪ শতাংশ সেখানে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হয়েও আমাদের জিডিপি ২.০৯ শতাংশ। এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। দেশের মাধ্যমিক, উচ্চ শিক্ষাসহ সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাণবন্ত করতে, আশানুরূপ ফলাফল পেতে জাতীয়করণ একান্ত প্রয়োজন। বিশাল বাজেটের আংশিক এবং প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের আয় জমা নিয়ে জাতীয়করণ করলে শিক্ষক/শিক্ষার্থী/ অভিভাবকগন যেমন উপকৃত হবে তেমনি আমাদের শিক্ষায় আন্তর্জাতিক মান ও কৌশল অবলম্বন করে বাস্তবিক প্রয়োগ সম্ভব হবে। বেসরকারি শিক্ষকদের হাহাকার নিরসনে এখনই জাতীয়করণের মোক্ষম সুযোগ।
বেসকারী শিক্ষকদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে বেসরকারী শিক্ষক সমাজের প্রাণের দাবী একটা সেটা হলো, সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষকদের পাহাড়সম বৈষম্য দূর করতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে জাতীয়করণ করার কিন্তু এ অবস্থায় সম্ভাব না হলে শিক্ষকদের তিনটি দাবী মধ্যে বাড়ী ভাড়া ১৫% মেনে নেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সরকারিদের সমান চিকিৎসা ভাতা ও ৭৫% উৎসব বোনাস ঘোষনার অপেক্ষায় শিক্ষক সমাজ তীর্থের কাঁকের ন্যায় চেয়ে আছেন। কঠিন কাজটি করার জন্য বেসরকারী শিক্ষক পারিবারের লাখ লাখ সদস্য আপনাদের জন্য জায়নামাজে দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহ্র দরবারে প্রার্থনা করবেন। দেশে বিদেশে বেসরকারী শিক্ষকদের জীবনধারার উন্নয়নের জন্য প্রশাংসিত হবেন। এর জন্য যেটা বিনিয়োগ করবেন সেটা হবে শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। সকল সমস্যার সমাধানের একমাত্র পথ হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করা। এ ব্যপারে সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিকট আকুল আবেদন করেছেন এমপিওভুক্ত বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারী সমাজ।
লেখক: মো. হায়দার আলী
গোদাগাড়ী, উপজেলা শাখা।
Leave a Reply