দু, মাদক কা-রবারিকে ৫০০ গ্রাম হেরো-ইনসহ আট-ক করেছে পুলিশ

রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলী ঃ মাদকের নিরাপদ ঘাটি হিসেবে কুখ্যাত রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী ও চাপাই নবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী পথগুলি। কোন না কোন ভাবে বিজিপি, পুলিশ, ডিবিপুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রবেশ করে হেরোইন, ফেনসিডিল, মরিফিন, ইয়াবা, ভারতীয় দামী মদ বিনিময়ে ভারতে পাচার পথে যাচ্ছে সোনা, ইলিশ মাছ, তামাসহ নামি-দামি সামগ্রী। ভারত থেকে অবৈধ পথে প্রবেশকৃত মাদক বিষবাষ্পের মত দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে রাজশাহী, বগুড়া, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, চিটাগং, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। ফলে যুবসমাজের অকালে মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়ে নিজেদের শেষ করে দিচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যগুলি মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থেকে কিছু মাদকের চালান আটক করলেও এর সিংহভাগ ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

গত ২৩ অক্টোবর ২০২৫ খ্রি. সকাল সাড়ে ১১ টায় গোদাগাড়ী থানাধীন কুঠিপাড়া গ্রামস্থ কুঠিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পার্শ্বে পদ্মা নদীর ধারে মডেল থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৫০০ গ্রাম অবৈধ মাদকদ্রব্য হেরোইন-সহ দুই জন মাদককারবারিকে গ্রেফতার করেছে।

​গ্রেফতারকৃত অভিযুক্তরা হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর থানার বকচর গ্রামের মৃত হাববুর রহমানের পুত্র মোঃ গোলাম মোস্তফা (৪৬) এবং একই গ্রামের মৃত নোমান আলী মন্ডলের পুত্র আব্দুর রশিদ (৪০)।

গোদাগাড়ী মডেল ​থানা সূত্রে জানা যায়, গোদাগাড়ী মডেল থানার এসআই (নিরস্ত্র) এম এ কুদ্দুস ফোর্স-সহ ডাইংপাড়া মোড় ও সংলগ্ন এলাকায় ডিউটিতে নিয়োজিত থাকাকালীন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন যে, দুই ব্যক্তি নৌকায় করে হেরোইন বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে পদ্মা নদীর ধারে অবস্থান করছেন।

​এমন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অভিযুক্তরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাদের আটক করা হয়। আটককৃত মোঃ গোলাম মোস্তফার দেহ তল্লাশি করে তার ডান হাতে থাকা একটি সাদা প্লাস্টিকের বাজার করার ব্যাগের ভিতর ৫টি সাদা স্বচ্ছ পলিথিনের প্যাকেটে রক্ষিত ৫০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়। ​এই ঘটনায় গ্রেফতারকৃত অভিযুক্ত ও অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন সহযোগীর বিরুদ্ধে গোদাগাড়ী মডেল থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮-এর অধীনে একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয়েছে।

বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সাংস্থার সদস্য ও এলাকাবাসী জানান, শুধুমাত্র মাদক ব্যবসা করে গোদাগাড়ী পৌরসভার শূন্য থেকে কোটি কোটি টাকার ও শ শ বিঘার জমির মালিক, ঢাকা, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনায় মার্কেট, ফ্লাইটের মালিক এমন লোকের সংখ্যা ৫ শতাধিক। তারা আগে ডিম বিক্রেতা, ভ্যান, রিকশা চালক, কুলিগিরি, পান, সিগারেট, শ্রমিক, সাইকেল মেকার, ঢাকা গাড়ীর হেলপার ছিল। সংগত কারনে তারা এখন সমাজের উপরে অবস্থান করছেন। কেউ কেউ নির্বাচনে কালো টাকা জড়িয়ে হয়েছেন মেয়র, কাউন্সিলর, উপজেলার চেয়ারম্যান, ইউপির চেয়ারম্যান, মেম্বার, টাকা দিয়ে পদ কিনে হয়েছেন রাজনৈতিক দলের নেতা পাতিনেতা। দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নামীদামী ব্যান্ডের মোটরসাইকেল, গাড়ী, মাইক্রো।
সঙ্গত কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এদিকে জানা গেছে, মাদক ব্যবসায়ীরা লক্ষ লক্ষ টাকা উৎকোচের বিনিময়ে আওয়ামীলীগের পদ পদবী বাগিয়ে নিয়েছেন, বিভিন্ন সংস্থার তালিকাভুক্ত মাদক সম্রাট, মাদক ব্যবসায়ী যাদের এক এক জনের বিরুদ্ধে ৩/৪ টিও বেশী মাদকের মামলা চলমান রয়েছে অথচ ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা উৎকোচ দিয়ে হয়েছেন প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতা, নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি করে প্রভাব খাটিয়ে হয়েছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর, মেম্বার, ইউপি চেয়ারম্যান, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, এমপি। তারা নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে মাদক ব্যবসাকে আরও উৎসাহিত করছেন।

ইউনিয়ন থেকে পৌরসভা, উপজেলা পর্যায়ে সভাপতি, সাধারন সম্পাদক, সাংগাঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদ পেয়েছেন তারা ।
ওই সব হাইব্রিড, পরগাছা, অনুপ্রবেশকারী নেতারা পদ পেয়ে গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন, মাদক, টেন্ডাররবাজি, চাঁদাবাজি, জমি দখল, খাসপুকুর দখল, সরকারি খাদ্যগুদামে রাতারাতি গম, ধান, চাল অবৈধভাবে প্রবেশ করিয়ে অঙ্গুল ফুলে কলাগাছ, তার পরে বটবৃক্ষ হয়েছেন। তারা এখন দল থেকে বহিস্কার হচ্ছেন। পদ হারিয়েও যেন তারা কোটিপতি, ফুলে ফেঁপে উঠেছে, কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, কউ কেউ রয়েছেন আত্নগোপনে। কিছু অসৎ পুলিশ, ডিবি পুলিশ সদস্য, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকতা, মাদকব্যবসায়ীদের সাথে সুসম্পর্ক রাখার অভিযোগ অনলাইন, স্থানীয়, জাতীয় পত্রিকা, টিভি সংবাদে উঠে এসেছে। মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই।

মোঃ হায়দার আলী
রাজশাহী।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *