গোদাগাড়ীতে এইচ এসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পয়েছে ১০ জন। দুইটি সরকারি কলেজের ভরাডুবি। সব কলেজে পাসের হার শিক্ষাবোর্ডের নীচে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে এবার এস.এইচ.এসসি পরীক্ষায জিপিএ ৫ পেয়েছে ১০ জন। গোদাগাড়ী সরাসরি স্কুল এন্ড কলেজ, গোদাগাড়ী সরকারী কলেজের ফলাফল বিপর্যয় ঘটেছে। রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডে এইচএসসিতে পাসের হার ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। গোদাগাড়ীর সব কলেজর পাসের হার শিক্ষাবোর্ডের পাসের হারের চেয়ে নীচে অবস্থান করছে।

গোদাগাড়ীতে ১২ কলেজ থেকে ১৫৯০ জন অংশ গ্রহন করে পাস করেছে ৫৪২ জন, ফেল করেছে ১০৪৮ জন। পাসের হারে সর্বচ্চ উপরের দিকে অবস্থান করেছে গুল গফুর স্কুল এন্ড কলেজ। এখানে ৬৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহন করে পাস করেছে ৩৪ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন, পাসের হার ৫০ দশমিক ৭৫ ভাগ।

দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে গোদাগাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজ এখানে ১৫৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহন করে পাস করেছে ৭৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ জন, পাসের হার ৪৬ দশমিক ৭৯ ভাগ।

তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রেমতলী ডিগ্রি কলেজ এখানে ১৫৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহন করে পাস করেছে ৭১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন, পাসের হার ৪৫দশমিক ৫১ ভাগ।

ঐতিহ্যবাহী গোদাগাড়ী সরকারি স্কুল এন্ড কলেজ থেকে সর্বচ্চ ২৫৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহন করে পাস করেছে ১০৯ জন কেউ জিপিএ-৫ পায় নি, পাসের হার ৪২ দশমিক ৪১ ভাগ।

মাটিকাটা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ থেকে ১০৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহন করে পাস করেছে ৩৭ জন পাস করেছে কেউ জিপিএ-৫ পায় নি, পাসের হার ৩৪ দশমিক ৯১ ভাগ।

কাঁকনহাট ডিগ্রি কলেজ থেকে ১৮৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহন করে পাস করেছে ৬৩ জন পাস করেছে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ জন পাসের হার ৩৩ দশমিক ৩৩ ভাগ।
পালপুর কলেজে থেকে ৭১ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহন করে পাস করেছে ২২ জন পাস করেছে কেউ জিপিএ-৫ পায় নি পাসের হার ৩০ দশমিক ৯৯ ভাগ।
রাজাবাড়ি ডিগ্রি কলেজে থেকে ১৪১ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহন করে পাস করেছে ৩৪ জন পাস করেছে কেউ জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন পাসের হার ২৪ দশমিক ১১ ভাগ।
গোদাগাড়ী সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে ২৪৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহন করে পাস করেছে ৫৮ জন পাস করেছে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন পাসের হার ২৩ দশমিক ৮৯ ভাগ।

পাকড়ী কলেজ থেকে ৫৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহন করে পাস করেছে ১২ জন পাস করেছে কেউ জিপিএ-৫ পায় নি। পাসের হার ২১ দশমিক ০৫ ভাগ।

ললিত নগর স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৩৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহন করে পাস করেছে ৮ জন পাস করেছে কেউ জিপিএ-৫ পায় নি। পাসের হার ২০ দশমিক ৫১ ভাগ।
চব্বিশ নগর স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ১০১ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহন করে পাস করেছে ২০ জন পাস করেছে কেউ জিপিএ-৫ পায় নি। পাসের হার ১৯ দশমিক ৫১ ভাগ।
গোগ্রাম স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল বারী জানান, এবার ১১ জন পরীক্ষা দিয়ে ১ জন পাস করেছে। জিপিএ-৫ নেই। পাসের হার৯ দশমিক ১০ ভাগ।

গোদাগাড়ী সরকারি ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইমরুল হক বলেন, ফলাফল খারাপ হয়েছে স্বীকার করে কোচিং প্রাইভেট বানিজ্যকে দায়ী করেন। ছাত্রছাত্রী ক্লাসে আসে না, কোচিং এ ব্যস্ত থাকে। পরীক্ষা কেন্দ্র প্রেমতলী ডিগ্রি কলেজ হওয়ায় ভাল শিক্ষার্থী এখানে ভর্তি হয় না। পদার্থবিজ্ঞানে ১ জনও শিক্ষক নেই। চাহিদা দিয়েছি। জরুরী ভিক্তিতে অভিভাবক সমাবেশ করা হবে। এখন আমি সকাল বিকার ৮ টায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায় যেসব শিক্ষক দেরী করে আসে তাদের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে দি না। দুপুর ২ টার পর হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে দি। আগামীতে কঠোরভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হবে জানান তিনি।

গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল আহদেদ জানান, ভাল ফলাফলের জন্য অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের অধিক সচেতন হতে হবে। জিপিএ -৫ প্রাপ্তদের আগামী সোমবার বিকালে আমার অফিসে চায়ের দাওয়াত দিয়েছি। তাদের সাথে মতবিনিময় করা হবে। দুইটি সরকারি কলেজের খারাপ রেজাল্টের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে বিষয়গুলি গুরুত্বসহকারে দেখব, যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি পাবলিক পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করতে পারে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

বিশ্বনাথপুর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ সফিকুল ইসলাম বলেন, গত ৯ বছরের মধ্যে এ বার কলেজ শাখায় এইচএসসির রেজাল্ট খারাপ হয়েছে। ২৮ জন পরীক্ষা দিয়ে ৬ জন পাস করেছে। জিপিএ-৫ নেই। পাসের হার ২১ দশমিক ৪০ ভাগ। সব ভাল শিক্ষার্থীরা শহরে, গোদাগাড়ী সদরে চলে যায়, খেটে খাওয়া, দিন মুজরী করে এমন শিক্ষার্থী এখানে ভর্তি হয়। তাদেরকে নিয়ে ভাল ফলাফল করা কষ্টকর।

রাজবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক কমিটির কোন কার্যকারিতা নেই।
মনগড়া, অন্যায়, অবৈধ উপায়ে সাময়িকভাবে আমাকে বহিস্কার করা হয়েছে। যোষ্ঠতার লঙ্ঘনকরে অযোগ্য লোককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদে বসানো হয়েছে। কলেজে কোন নিয়ম শৃঙ্খলা নেই। শিক্ষার্থীরা এখন ভর্তি চাই না। বাণিজ্য বিভাগের মোট শিক্ষক তিনজন, গত তিন বছর ধরে একজন ছাত্র ভর্তি করা হয় নাই, অর্থাৎ ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা জিরো।
বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকের সংখ্যা চারজন, বর্তমান ছাত্র সংখ্যা পাঁচজন। এগুলির সুষ্ঠ,নিরপেক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা জরুরী।

চব্বিশ নগর স্কুলের এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আহসান হাবীব বলেন, আমরা তো ভাল শিক্ষার্থী পাাই না। ভালগুলি রাজশাহী শহরমূখি হয়। ইংরেজি ও আইসিটিতে খুব খারাপর হয়েছে। আগে পাস করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হতো। এবার সেধরণের নির্দেশনা দেয়া হয় নি। মূল্যায়ণ সঠিক হয়েছে।

গোদাগাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, এসএসসিতে জিপিএ – ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা রাজশাহী শহরে ও গোদাগাড়ী সরকারি স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি হয়। আমরা কম মেধার ছাত্রীরা পাই। অনেকের পড়তে পড়তে বিয়ে হয়ে যায়। কোচিং প্রাইভেটে ব্যস্ত থাকায় কলেজে আসে না। ক্লাস না করলে কিভাবে ভালো ফলাফল করবো। আমি বাংলার ১ টি সাজেশন করেছিলাম বেশীরভাগ ছাত্রী নিতে আসেনি। এ ব্যাচটা বিভিন্ন সময়ে আটো পাস পেয়েছে। শিক্ষক, অভিভাবক শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কক্ষে আসতে হবে। সচেতন হতে হবে।

মোঃ হায়দার আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক,
রাজশাহী।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *