রংপুরে জা-ল সনদে ১৮ বছর শিক্ষকতা, অধ্যক্ষের মদদে ইস্তফার মাধ্যমে অর্থ ত-ছরুফ চেষ্টা

খলিলুর রহমান খলিল, নিজস্ব প্রতিনিধি:
রংপুরে “তারাগঞ্জ ওয়াক্ফ এস্টেট কামিল মাদ্রাসায়” এনটিআরসিএ এর শিক্ষক নিবন্ধনের জাল ও ভুয়া সনদে কর্মরত সহকারি অধ্যাপক মো. মাহবুব রশিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ না করে উল্টো অধ্যক্ষের মদদে ইস্তফার মাধ্যমে অর্থ তছরুফ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
তথ্য মতে, এনটিআরসিএ দপ্তর কর্তৃক দালিলিক ভাবে জাল ও ভুয়া সনদধারী এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণের নির্দেশনা থাকা সত্বেও অভিযুক্ত শিক্ষক উক্ত প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের নিকট আত্মীয় হওয়ায় আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ না করে উল্টো চাকুরী ইস্তফার মাধ্যমে মাহবুব রশিদকে সরকারি অর্থ(বেতন ফেরৎ) তছরুফ চেষ্টায় সহযোগীতা করছেন মর্মে দাপ্তরিক ভাবে তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে “বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ আইন” ২০০৫ অনুযায়ী এনটিআরসিএ এর প্রথম শিক্ষক নিবন্ধন বিজ্ঞপ্তি গত ২১/০৯/২০০৫ইং দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার শেষ তারিখ ছিল ১০/১০/২০০৫ইং। সেখানে মাহবুব রশিদ এর কামিল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের তারিখ ছিল- ২৬/০৯/২০০৫ইং। সে সময় অনলাইন ব্যবস্থা না থাকা এবং কামিল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের মাত্র ১৪ দিনের ব্যবধানে এনটিআরসিএ-তে ২০০ নম্বরের ভাইভা বিহীন পরীক্ষায় সাময়িক সনদ ছাড়া আবেদনের সুযোগ ছিলনা। এছাড়াও উক্ত শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণে আরবি প্রভাষক পদে একাডেমিক শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয় ছিল আরবি সাহিত্য(আদব) সহ দ্বিতীয় শ্রেণির কামিল শ্রেণি পরীক্ষায় পাশ করা। কিন্তু মাহবুবের একাডেমিক শিক্ষাগত যোগ্যতা কামিল শ্রেণির পরীক্ষায় পাশের বিষয় ছিল হাদিস। যা উক্ত শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণে তার যোগ্যতাই ছিলনা।
অফিস সূত্রে জানা গেছে, এনটিআরসিএ এর নিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগকৃত ও কর্মরত শিক্ষকদের তথ্যাদি (২০০৫ হতে অক্টোবর ২০১৫ পর্যন্ত) যাচাই প্রক্রিয়ায় গত ০৪/১১/২০২০ইং তৎকালিন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. রোকসানা বেগম স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে তারাগঞ্জ ও/এ কামিল মাদ্রাসার ১১ জন শিক্ষকের মধ্যে ০১নং ক্রমিকে বর্ণিত শিক্ষকের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ সঠিক নয় মর্মে উল্লেখ করেন। অধ্যক্ষ এ.এস.এম আব্দুস সালাম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনটি কালবেলা প্রতিনিধির সংগ্রহে রয়েছে। এতে অভিযুক্ত শিক্ষক মাহবুব রশিদের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ ভুয়া ও জাল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
এছাড়াও ০৩/০৩/২০২৫ইং অধ্যক্ষ তার প্রতিষ্ঠানের স্বারক নম্বর- তা.কা.মা-৭৬/১/২০২৫ইং আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৩ মার্চ ২০২৫ইং এনটিআরসিএ দপ্তর স্মারক নম্বর: ৩৭.০৫.০০০০.০০০.০১০.০৫.০০০২.২৩.৩৭৪-এ মাহবুব রশিদ, পিতা- মো. মফছার আলী যার রোল- ২২৬০০৫২ এবং রেজিঃ নম্বর- ০৬৪১৮২৪৫/২০০৫ এর পদবি- প্রভাষক, বিষয়- আরবি শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি ভূয়া ও জালজালিয়াতি প্রমাণিত হয়। যা এনটিআরসিএ চিঠিতে মাহপরিচালক মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর সহ আইসিটি সেল- এনটিআরসিএ, জেলা শিক্ষা অফিসার-রংপুর, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও অফিসার ইনচার্জ তারাগঞ্জকে অবগত করা হয়। সেখানে অধ্যক্ষকে আইনগত ভাবে মামলা করার নির্দেশনা প্রদান করা সত্বেও তিনি তা না করে, উল্টো মাহবুব রশিদের ইস্তফাপত্র অনুমোদনে সহযোগীতা করে যাচ্ছেন।
জাল ও ভুয়া শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিয়ে তারাগঞ্জ ও/এ কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে অভিযুক্ত শিক্ষক মাহবুব রশিদ ১৭/০১/২০০৮ইং নিয়োগ পান এবং ২১/০১/২০০৮ইং যোগদানের পর ০১/০১/২০০৯ইং এমপিওভূক্ত হয়ে দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়াও অভিযুক্ত শিক্ষক মাহবুব রশিদের জাল ও ভুয়া শিক্ষক নিবন্ধনের বিষয় গত ০৪/১১/২০ইং দাপ্তরিক ভাবে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আব্দুছ ছালাম জেনেও আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে গত ০১/০২/২০২৩ইং তাকে প্রভাষক পদ থেকে সহকারি অধ্যাপক পদে পদোন্নতিও করান।
অভিযুক্ত শিক্ষক মাহবুব রশীদ মুঠোফোনে বলেন, আমি চাকুরী ইস্তফার বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু পারিবারিক সিদ্ধান্তে তা আপাতো স্থগিত আছে। এনটিআরসিএ এর শিক্ষকনিবন্ধনের জাল ও ভুয়া সনদে চাকরীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কল কেটে দেন এবং পরে আর কল রিসিভ করেননি।
অধ্যক্ষ আব্দুছ ছালাম অফিস স্বাক্ষাৎকারে মাহবুব রশীদের চাকুরী ইস্তফা প্রদানের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মাহবুব রশীদ স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করতে চেয়েছিল,কমিটির মিটিং- এ আলোচনাও হয়েছিল। তবে তা গ্রহণ করা হয়নি, সিদ্ধান্ত স্থগিত আছে, এগুলো এখন সময় সাপেক্ষ ভবিষ্যৎ।
এঘটনায়, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. এনায়েত হোসেন বলেন, শিক্ষক নিবন্ধনের ভুয়া সনদে চাকুরী করা এবং সুযোগ বুঝে চাকুরী ইস্তফার মাধ্যমে সরকারি বিধি মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা থেকে রক্ষার কোন উপায় নেই। অধ্যক্ষ কেন আইনগত ব্যবস্থা নেন নাই সে বিষয়ে আমি লিখিত ভাবে জানতে চাইবো।
উল্লেখ্য যে- বিধান রয়েছে, জাল ও ভুয়া সনদে চাকুরী করলে উক্ত ব্যক্তিকে চাকুরীকালিন প্রাপ্ত বেতন বিধিমোতাক সরকারি কোষাগারে ফেরত প্রদান করতে হয়।সেখানে মাহবুব রশিদ এর জাল ও ভুয়া সনদের বিষয়ে এডহক কমিটির সভাপতি(এডিএম) বরাবর গত ২৪/০৩/২৫ইং এবং ১৩/০৮/২৫ইং দুই দফা অভিযোগ করা হলেও দায়িত্বপ্রাপ্তগণ কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই। উল্টো অধ্যক্ষের মদদে প্রতিষ্ঠানটির এডহক কমিটির সভাপতি বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, রংপুর বরাবর গত ৩১/০৮/২৫ইং মাহবুব রশিদ তার চাকুরীর ইস্তফাপত্র জমা দেন। যাহা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ(এডহক কমিটি) অধিবেশন নম্বর- ০৪/২৫ তারিখ- ০৩/০৯/২৫ইং আলোচ্য সূচী ৬ এর আলোকে সর্বসম্মতিক্রমে ইস্তফাপত্র গ্রহণের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যা সরকারি অর্থ (বেতন) তছরুফে সহযোগীতা করার শামিল বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *